আজ দীর্ঘদিন পর সরকারি অনুষ্ঠানে মুখোমুখি হলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi) ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। তবে এবার ভার্চুয়ালি মুখোমুখি প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার, বেলা ১ টার সময় চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের (Chittaranjan National Cancer Institute) নবনির্মিত দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের উদ্বোধনাী অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাতে বিজেপি সরকার না থাকলেও কেন্দ্র কোনও বৈমাতৃসুলভ আচরণ করবে না বলেই বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “বাংলাতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি হবে। বাংলায় পাঁচ বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার সাহায্য সুনিশ্চিত হয়ছে। এতে রাজ্যে হেলথ সেন্টার হবে। ল্যাব হবে। জেলা হাসপাতালে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট হবে। ভবিষ্যতে করোনার মতো কঠিন ভাইরাসের বিরুদ্ধে আরও ভাল ভাবে লড়তে পারবে।”
বক্তব্য রাখার সময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বাস্থসাথীর প্রশংসা করেছিলেন মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার মোদীর মুখে শোনা গেল আয়ুষ্মান ভারতের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “আয়ুষ্মান ভারতের জন্য ১৭ লাখের বেশি ক্যানসার আক্রান্ত উপকৃত হয়েছেন। এই প্রকল্পে কেমো, রেডিয়োথেরাপি, সার্জারি, সব ফ্রিতে মিলেছে। সরকারের এই প্রয়াস না থাকলে কত গরিবের পরিবার ঋণের দায়ে শেষ হয়ে যেত। কত মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হত। আয়ুষ্মান ভারত কেবল ফ্রি-তে চিকিৎসার জন্য নয়, আর্লি ডিটেনশন, আর্লি ট্রিটমেন্ট এখানেও কার্যকরী। দেশে ১৫ কোটি ওরাল, ব্রেস্ট ক্যানসারে স্কিনিং হয়েছে। ভারতের প্রত্যেক জেলায় যাতে অন্তত একটা মেডিকেেল কলেজ থাকে তার জন্য কাজ করছি। এখানে ক্যানসারের মতো কঠিন অসুখের চিকিৎসা যাতে হয় তার চেষ্টা করছি। “
ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশে ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে বলেই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “ক্যান্সারের ওনাম শুনেই গরিব ওমধ্যবিত্ত মানুষ হাল ছেড়ে দেয়। এখান থেকে তাদের বের করে আনার জন্য দেশ নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলা সহ সারা দেশে সস্তায় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। ক্যানসারের ওষুধওন কম দামে বিক্রি হচ্ছে।এটাই সরকারেের সংবেদনশীলতা। সরকার ৫০০-র বেশি ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করেছে। আয়ুষ্মান ভারতের জন্য ১৭ লাখের বেশি ক্যানসার আক্রান্ত উপকৃত হয়েছেন। কেমো, রেডিয়োথেরাপি, সার্জারি, সব ফ্রিতে মিলেছে। সরকারের এই প্রয়াস না থাকলে কত গরিবের পরিবার ঋণের দায়ে শেষ হয়ে যেত। কত মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হত।”
চিত্তরঞ্জন ন্যাশানাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের উদ্বোধনে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক কাজের প্রশংসা শোনা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দারুণ কাজ হচ্ছে। নিরন্তর কাজ চলছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে আরও ভাল করা হচ্ছে। দেশ আজ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিশেষ উন্নতি করেছে। ইতিমধ্যে দেড় কোটি পনেরো উর্ধ্ব টিকাকরণ হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে সমাজের এক শ্রেণির মানুষ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত ছিল, স্বাস্থ্য পরিষেবা নিতে এত খরচ! গরিবরা কোনও বড় অসুখে পড়লে দুটো বিকল্প থাকত। হয় ঋণ নিয়ে চিকিৎসা, ঘর-বাড়ি -জমি বন্ধক রাখা, নয়তো চিকিৎসার আশাই ছেড়ে দিত।”
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “ভৌগলিক থেকে সামাজিক থেকে অর্থনৈতিক বিভেদের বিশাল এই দেশে টিকাকরণের মতো শক্ত কাজ যে দ্রুততার সঙ্গে হয়েছে তা বিশ্বের কাছে উদাহরণ। লড়াই যত কঠিন হয়, অস্ত্রসস্ত্র তত জরুরি হয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১১ কোটি ডোজ দেওয়া হয়েছে। দেড় হাজারের বেশি ভেন্টিলেটর, ৯ হাজারের বেশি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে। বয়স্কদের ৯০ শতাংশ প্রথম ডোজ পেয়েছেন।”
মেডিক্যালে সিটবাড়ানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি বাড়তি আইএএস ও আইপিএস অফিসার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে রাজ্যপালকে কটাক্ষ করেন মমতা। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা মেনেই আমরা অবসরপ্রাপ্তদের বেসরকারি সংস্থা আধিকারিকদের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। রাজ্যপাল কিছু না জেনেই আমাকে প্রশ্ন করেছেন এবং কাগজ দেখতে চেয়েছেন।”
প্রধানমন্ত্রীর সামনে এদিন স্বাস্থ্য়সাথী প্রকল্পের ঢালাও প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী জানলে খুশি হবে আমরা এখানে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প শুরু করেছি। এই প্রকল্পেরও আওতায় প্রত্যেক পরিবার চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষ টাকার সুযোগ সুবিধা পায়। বাংলায় সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা হয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসাথী থেকে বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসার সুবিধা মেলে। এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের সকলে আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।”
হাসপাতাল তৈরিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের অবদান রয়েছে বলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন হাসাপাতাল তৈরিতে ১১ একর জমি দিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের হাত ধরে বাংলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে।
চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য় রাখতে গিয়ে মমতা বলেন, “আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও প্রধানমন্ত্রী মহাশয়কে আমি বলতে চাই আমরা এই হাসপাতালের উদ্বোধন আগেই করে দিয়েছিলাম। করোনা শুরু সময় এখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছিল। তাতে রোগীদের অনেক সুবিধা হয়েছে।”
চিত্তরঞ্জন ন্যাশানাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস উদ্বোধনে বক্তব্য শুরু করতে গিয়ে, তাঁর পদবী ভুলে যাওয়ার জন্য সঞ্চালিকাকে মৃদু কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘সঞ্চালিকাকে ধণ্যবাদ। তিনি হয়ত আমার পদবী ভুলে গিয়েছেন।”