কলকাতা: তিলোত্তমার বাবা-মা প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিলেন, সিবিআই-এর তদন্তে কোথাও একটা ‘ফাঁক’ থেকে যাচ্ছে! সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে তিলোত্তমার বাবা-মা যে নির্দেশ নিয়ে এসেছেন, প্রায় সাড়ে সাত মাস পর, তার ওপর ভিত্তি করেই বোঝা যাচ্ছে তাঁদের অভিযোগের সারবত্তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ! কারণ সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিতেই দৃশ্যত অতি মাত্রা তৎপর সিবিআই। সুপ্রিম নির্দেশের পর সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ আরজি কর মামলা শুনবেন। তার আগে তদন্তের ফাঁকফোকড় মিটিয়ে ফেলতে তৎপর সিবিআই। বৃহস্পতিবার চার নার্সকে তলব করেছিলেন তদন্তকারীরা, এবার ডাক পড়ল সেই নিরাপত্তারক্ষীদের, যাঁরা সেই রাতে কর্তব্যরত ছিলেন আরজি করে। আর সিবিআই-এর জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে আসার সময়ে TV9 বাংলার প্রতিনিধিকে, তাঁরা যা জানালেন, তা প্রশ্ন তুলে দিল এতদিন সিবিআই-এর তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েই। এই নিরাপত্তারক্ষী অমিত ডিউটি সেই রাতে ছিল ট্রমা কেয়ারেই। তিনি সেই রাতের ঘটনা বর্ণনায় যে শব্দবন্ধ ব্যবহার করলেন, তা তাৎপর্যপূর্ণ।
এই নিরাপত্তারক্ষীকে প্রশ্ন করা হয়, “কী জন্যে এসেছিলেন আপনারা?”
উত্তর: ওই মানে… কিছু তদন্তের প্রয়োজনে ডেকেছিল। আরও কিছু প্রশ্ন আরজছিল। সেগুলো জিজ্ঞাসা করল।
প্রশ্ন: কী কী প্রশ্ন?
উত্তর: সেগুলো এখনই বলা যাচ্ছে না। সেটা তদন্ত শেষ হলে জানতে পারবেন। আমার ডিউটি ট্রমা কেয়ারে ছিল। ওই রাতে ডিউটিতে ছিলাম।
প্রশ্ন: ট্রমা কেয়ারেই তো সঞ্জয় গিয়েছিল। সে প্রশ্ন আপনাকে আগে করা হয়নি?
উত্তর: হ্যাঁ আগেও আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু ফাঁকফোকড় ছিল। ফাঁকফোকড় ছিল বলতে আরও ডিটেইলসে জানার প্রয়োজন ছিল।
প্রশ্ন: আগে যে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন তদন্তকারীরা, সেটাই কি আবার জিজ্ঞাসা করলেন?
উত্তর: না… না… আরও অনেক প্রশ্ন ছিল। নতুন সব আছে আরও। সেটা নিয়ে এখন তদন্ত হচ্ছে। টোটাল পাঁচ-ছ’জন ছিল।
আরজি করের নিরাপত্তারক্ষীর কথায়, সঞ্জয় রাইয়ের সেই রাতের গতিবিধি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। আগেও প্রশ্ন করেছিল সিবিআই। কিন্তু কোথাও একটা ফাঁকফোকর থেকে গিয়েছিল…
কোথায় ‘ফাঁক’?
সিবিআই তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রথম থেকেই তিলোত্তমার বাবা ও মা বরাবরই বলে এসেছেন। হাইকোর্ট পেরিয়ে সেই দাবি নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন দিল্লিতে, সিবিআই-এর সদর দফতর, তারপর সুপ্রিম কোর্টে। তাঁরা দাবি ছিল একটাই, সঠিকভাবে সকলকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে না। কোথাও একটা ‘ফাঁক’ থেকেই যাচ্ছে। তাঁদের বয়ানকে আইনের পরিধিতে আনা হয়নি। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে কয়েকজনের নামও বলেছিলেন তিলোত্তমার বাবা-মা। তিলোত্তমার পরিবার দাবি করে আসছেন, সঞ্জয় একা নয়, এই ঘটনার সঙ্গে আরও অনেকেই যুক্ত। প্রকৃত দোষীদের তদন্তের আওতায় আনা হোক! সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিতেই এবার ‘ফাঁক’ সামনে আসতে শুরু করেছে। সিবিআই বিশেষ ভাবে জোর দিচ্ছে সেই ‘ফাঁক’ বুজাতেই।
‘ফাঁকফোকড়গুলো বুজানোর প্রয়াস’
চিকিৎসক তমোনাশ চৌধুরী বলেন, “সুপ্রিম কোর্টে আগেই নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে। এবার হাইকোর্টে শুনানি হবে। তার আগে এবার সেই ফাঁকফোকড়গুলো বুজানোর জন্য বা বের করার জন্য় হয়তো সিবিআই আবার নড়েচড়ে বসেছে। সেই ফাঁকফোকড়গুলো বার করে তদন্ত করা, সেগুলোকে সামনে আনা, পুরো তদন্তপ্রক্রিয়ার মধ্যে যে ফাঁকফোকড়গুলো রয়েছে, সেগুলোকে সামনে আনতে সিবিআই এখন তৎপর।”
‘৯০ দিনের বদলে পেরিয়ে গেল সাড়ে সাত মাস’
জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো বলেন, “সিবিআই এখনও সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কেন? ৯০ দিনের জায়গায় তো অতিবাহিত হল প্রায় সাড়ে সাত মাস। যে ফাঁকফোকড়ের প্রশ্ন আজকে আসছে, আমরাও মনে করি, সিবিআই-এর যে সিরিয়াসনেসটা দেখানোর প্রয়োজন ছিল, সেটাতে ঘাটতি ছিল। ”