
কলকাতা: কিশোরীর রহস্য়মৃত্য়ু ঘিরে চড়েছে উত্তেজনার পারদ। বাবা ও সৎ মায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে প্রতিবেশীরা। দফায় দফায় চলেছে বিক্ষোভ। শিশুর রহস্য়মৃত্যুর দায় সৎ মা ও বাবার দিকেই ঠেলেছে এলাকাবাসী। চলেছে মারধর। পুলিশ ওই কিশোরীর বাবা-মাকে আটক করতে এলে তাঁদের সামনেই ওই গণপিটুনি দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
ঘটনা আলিপুর থানার অন্তর্গত বিদ্যাসাগর কলোনীর। রবিবার রাতে সেখানে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার হয় এক নাবালিকার দেহ। নিজের ঘরেই আলমারির মধ্যে গলায় ফাঁস লাগা অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। ঘরের দরজা খুলে মেয়ের দেহ উদ্ধার করেন খোদ সৎ মা। এরপরই তড়িঘড়ি কিশোরীকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবার। কিন্তু দিন পেরতেই সোমবার তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
উল্লেখ্য, এই নিহত কিশোরী আরজি করের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী সঞ্জয় রায়ের বড় দিদির মেয়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সঞ্জয় রায়ের বড় দিদির মৃত্যুর পর তাঁর মেয়ের দেখাশোনা করতেন খোদ সঞ্জয়ের ছোট দিদি। পরবর্তীতে নিজের জামাই বাবুর সঙ্গেই বিয়ে করেন তিনি। হয়ে যান ওই নিহত নাবালিকার সৎ মা। নিহতের ঠাকুমা জানিয়েছেন, কিশোরীর আসল মাও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। এবার একই ভাবে মৃত্যু মেয়েরও।
স্বাভাবিক ভাবেই নাবালিকার রহস্যমৃত্য়ু ঘিরে তৈরি হয়েছে একাধিক প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠেছে বাবা-মায়ের ভূমিকা নিয়েও। সোমবার রাতেই টিভি৯ বাংলাকে ওই নাবালিকার ঠাকুমা জানিয়েছিলেন, ‘আমি তো আলাদা থাকতাম। ওঁর মাও (সঞ্জয়ের বড় দিদি) গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। তারপর থেকে ওঁর মায়ের বোন, মানে আমার ছেলের শ্য়ালিকা ওঁর দেখাশোনা করত। পরে আমার ছেলের সঙ্গেই বিয়ে করে নেয়। কিন্তু একটা ১১ বছরের মেয়ে কি কখনও আত্মহত্যা করতে পারে?’ নিহতের সৎ মায়ের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ করেছেন ওই বৃদ্ধা। তাঁর দাবি, বিয়ে করতেই চরিত্র বদলে যায় সঞ্জয়ের ওই দিদির। কিশোরীকে ঠাকুমার থেকে সর্বদা দূরেই রাখতেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমায় বাড়িতে ঢুকতে দিত না। মেয়েটা আসতে চাইত, কিন্তু সব সময় দূরে দূরে রাখত। আমরা দূরত্ব বজায় রেখেই কথা বলতাম।’
মঙ্গলবার কিশোরীর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই ওই সৎ মা ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। স্থানীয়দের দাবি, ‘বাচ্চাটার উপর অত্য়াচার করত। রাত দু’টোর সময় ওঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিল।’ আরও এক বাসিন্দা বলেন, ‘মেয়েটার উপর প্রায় অত্যাচার করত। ওই লোকটা (কিশোরীর বাবা) আগে বউকে মেরেছে। শ্যালিকার সঙ্গে বিয়ে করেছে। ও তো এখন গর্ভবতী। ওই জন্য মেয়েটাকে এরা মেরে দিয়েছে। একেবারে পরিকল্পিত খুন। এই মেয়েটার (সৎ মা) ভাই তো আরজি কর মামলায় জেলে রয়েছে।’