কলকাতা : পুরভোটের ফল নিয়ে প্রথম থেকে আত্মবিশ্বাসী ছিল শাসক দল। চার পুরনিগমের ভোটে নিরঙ্কুশ জয় এল শাসক শিবিরে। আর ফল প্রকাশের পরই যে প্রশ্ন উঠে আসছে রাজ্য রাজনীতির আলোচনায়, তা বিধাননগরের মেয়র পদ ঘিরে। বিধাননগর পুরনিগমের ভোটে এবার প্রথম থেকেই নজরে ছিলেন হেভিওয়েট প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত ( Sabyasachi Dutta)। আর সব্যসাচীর ছেড়ে যাওয়া মেয়র পদ যিনি সামলেছেন, সেই কৃষ্ণা চক্রবর্তীও (Krishna Chakraborty) মেয়রের দৌড়ে রয়েছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর পোড় খাওয়া নেতাদের সঙ্গে বিধাননগরে টেক্কা দিচ্ছেন যে তরুণ নেতা, তিনি দেবরাজ চক্রবর্তী (Debraj Chakraborty)। বিধাননগরবাসীকে প্রশ্ন করলে ঘুরে-ফিরে এই তিনটি নামই উঠে আসছে। দলীয় নেতৃত্ব এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি যে প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হেভিওয়েট প্রার্থী সব্যসাচী। মাঝে দু বছরের বিচ্ছেদের পর তৃণমূলে ফিরে ভোটে লড়ছেন তিনি। আবার তিনিই ছিলেন বিধাননগরের দীর্ঘ সময়ের কাউন্সিলর ও পুরনিগমের প্রথম মেয়র। সল্টলেক, রাজার হাট, নিউ টাউন তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। তিনি জয়ী হতেই তাই শুরু হয়েছে গুঞ্জন। আবার তাঁর হাতেই বিধাননগরের দায়িত্ব দেওয়া হবে নাকি দলবদলের তকমা থাকায় দৌড়ে পিছিয়ে যাবেন তিনি?
মমতার আস্থা: দল বদল করে আবার ফিরে আসার পরও তাঁর প্রতি মমতার আস্থা অটুট আছে বলেই জানা যায়। শোনা যায়, বিধাননগরের ৪১ টি ওয়ার্ডের প্রার্থী বাছাই করেছে শীর্ষ নেতৃত্ব, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে একজনের কথাই বলেছিলেন, তিনি সব্যসাচী দত্ত।
বন্ধ হয় সিন্ডিকেট রাজ: জানা যায়, মেয়র হওয়ার পর নিজে উদ্যোগ নিয়ে এলাকার সিন্ডিকেট রাজ বন্ধ করেছিলেন সব্যসাচী। সেই সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন চোখে পড়তে থাকে। চকচকে রাস্তাঘাট, জলের পরিষেবা, সবটাই নজর কাড়ে। অনৈতিক কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা কার্যত বসে গিয়েছিল।
ফিরহাদের সঙ্গে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক: কলকাতা পুরনিগমের মেয়র তথা দলের কোর কমিটির অন্যতম সদস্য ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সব্যসাচীর। বিধাননগরে একমাত্র সব্যসাচীর ওয়ার্ডেই প্রচারে এসেছিলেন ববি। তাই তাঁর সমর্থন যে সব্যসাচীর দিকে যাবে, তা অনুমানযোগ্য। পাশাপাশি সব্যসাচীর মেয়র থাকালীন ফিরহাদের হাতে থাকা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকে অনুমোদন এনে এলাকার উন্নয়নের অনেক কাজ করেছিলেন বলেই জানা যায়।
তবে মেয়র পদে থাকাকালীন দল ছেড়ে যাওয়া এই নেতাকে সাধারণ মানুষ কী ভাবে গ্রহণ করবে, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
মেয়র পদে সব্যসাচী ইস্তফা দেওয়ার পর দায়িত্ব যায় কৃষ্ণা চক্রবর্তীর হাতে। মমতার ছায়াসঙ্গী হিসেবে পরিচিত তিনি। সোমবার সকালেই তাঁর কাছে আসে মমতার ফোন, তিনিও ছুটে যান দিদি-র বাড়ি। তবে কি কৃষ্ণাই মেয়র?
সমস্যা সমাধানে নিরপেক্ষতা: বিধাননগরবাসীর মতে, কৃষ্ণা কখনই কোনও বাছ বিচার করেন না। চাইলেই সাহায্য পাওয়া যায়। সব্যসাচী কাউকে সাহায্য করার আগে খতিয়ে দেখেন লোকটা সৎ না অসৎ? কৃষ্ণা সেই তুলনায় অনেক বেশি নিরপেক্ষ। সবাইকে সাহায্য করায় বিশ্বাসী।
জনসংযোগ: বাসিন্দারা বলছেন, সকাল থেকেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন কৃষ্ণা। জানার চেষ্টা করেন সাধারণ মানুষের কী সমস্যা রয়েছে। জনসংযোগে অন্যদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে তিনি। তাই অনেকেরই পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছেন কৃষ্ণা। নাগরিক হোক বা দলীয় কর্মী, সবাইকে নিয়ে তিনি চলতে পছন্দ করেন।
তবে, কৃষ্ণা চক্রবর্তীর সংগঠন ততটা পোক্ত নয় বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। আর সব্যসাচীর অসম্পূর্ণ রেখে যাওয়া কাজও তিনি শেষ করেননি বলেই অভিযোগ করছেন কেউ কেউ।
সব্যসাচী বা কৃষ্ণার পরিচিতি অনেক দিনের। সেই তুলনায় নব্য হলেও বিধাননগরের বাসিন্দারা কেউ কেউ বলছেন, ‘রাজারহাটের আসল রাজা’ দেবরাজ, তিনি নাকি এলাকার ‘আইকন’। অনেকেই চাইছেন মেয়র করা হোক দেবরাজকে।
জানা যায়, এবার পুরভোটে যে কয়েকজন প্রার্থী নাম সুপারিশ করেছিলেন তিনি, তাঁরা প্রত্যেকেই জয়ী হয়েছেন। তরুণ মুখকে সামনে আনার চেষ্টা করছেন তিনি। তাঁর সংগঠনও বেশ পোক্ত। তরুণ হলেও রাজনীতির সঙ্গে তাঁর পরিচয় দীর্ঘদিনের। ক্রমশ উত্থান হয়েছে অভিষেক-ঘনিষ্ঠ এই নেতার। তাই তিনিও, দৌড়ে নেই এ কথা বলা যায় না।
আরও পড়ুন: ভাবী মেয়রের কাছে ‘সর্বধর্ম বর্ণ নিয়ে কলকাতার মতো চকচকে শিলিগুড়ি’ চাইলেন মমতা