কলকাতা: রাত পোহালেই জামাই ষষ্ঠী (Jamai Sasthi 2022)। তাতেই যেন সপ্তাহান্তের ছুটির মেজাজের পারদ আরও খানিকটা বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু এই খুশির আবহেও যেন বিষাদের ছায়া গ্রাস করেছে বউবাজারের (Bow Bazar) দুর্গা পিতুরি লেনকে। মেট্রোর কাজের জেরে বিপর্যয়। ভাঙা পড়েছে বউ বাজারের এই এলাকার একাধিক বাড়ি। ফাটলের জেরে রাতারাতি বিপজ্জনক বাড়ি ছেড়ে হোটেলে ঠাঁই হয়েছে একাধিক পরিবারের। এদিকে আর পাঁচ জনের মতো প্রতি বছর জামাই ষষ্ঠীতে হৈ হুল্লোড় আর খাওয়া-দাওয়ায় মজত দুর্গাপিতুরি লেনের বাসিন্দারা। একটা রাতের পর সব ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। এখন দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দাদের অনেকের কাছেই জামাই ষষ্ঠী মানে বিলাসিতা মাত্র। কারও কাছে আমোদ-উল্লাস আজ শুধুমাত্র নিয়মরক্ষা।মেট্রো বিপর্যয়ের ঘটনার পর বউবাজারের স্যাঁকড়া পাড়া বা দুর্গা পিতুরিতে রবিবার শাঁখের আওয়াজ নয়, উল্টে কঙ্কালসার ভাঙা বাড়িগুলির অলিতেগলিতে শোনা যেতে চলেছে হাতুরি পেটার চেনা শব্দ।
এদিকে ইতিমধ্যেই বিপজ্জনক বাড়িতে থাকা বাসিন্দাদের জরুরি নথি এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ক্রিক রো হোটেল কিউ ইন্ ও গণেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের ব্রডওয়ে হোটেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। সেখানেই সাময়িক ভাবে থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে তাঁদের। একসময় ওই এলাকারই মেয়ে ছিলেন অর্চনা চৌধুরী। তাঁর বিয়ে হয়েছে বেসরকারি সংস্থার কর্মী তাপস চৌধুরীর সঙ্গে। ২০ বছরের বিবাহিত জীবনে এবার শ্বশুরবাড়ি যেতে পারছেন না তাপসবাবু। ভিডিও কলে বাপেরবড়ির স্বাদ মেটাচ্ছেন। হোটেল থেকে পরিবারের লোকজন কবে বাড়ি ফিরবেন, সে উত্তর নেই কারও কাছেই।
এদিকে ২০১৯-এর স্মৃতি যে ফের এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি দেবে দুর্গা পাতুরি লেনের বাসিন্দারা। ২০১৯ সালেও একই ভাবে ঘরছাড়া হয়েছিলেন অনেকেই। তাতেই ক্ষোভ বেড়েছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ওই এলাকারই বাসিন্দা সঞ্জয় বসাক। পেশায় ব্যবসায়ী। ২০১৯ থেকে বাড়ি ছাড়া তিনি। বর্তমানে বেলেঘাটায় ফ্ল্যাটে থাকেন। মেয়ে শ্রীঞ্জনা বসাকের বিয়ে দিয়েছিলেন বাড়ি হারানোর পরেই। এখন প্রতি বছর জামাই ষষ্ঠী আসতেই আক্ষেপ করেন তিনি। জামাইকে নিজেদের পৈত্রিক বাড়ি কোনও দিনই দেখাতেই পারলেন না তিনি। যদিও এবারে বেলঘাটাতেই জামাইয়ের জন্য নাম মাত্র আয়োজন করছেন তিনি। জামাই শুভ্রজ্যোতী দত্ত অবশ্য অল্প আয়োজনেই সন্তুষ্ট। বাঙালির পরম্পরা টিকিয়ে রাখতে আপাতত নিজেদের ভিটে-মাটিতে ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছেন সকলে।