কলকাতা: প্রতি আক্রমণের পালায় এবার তৃণমূলের নিশানায় সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ (Shatarup Ghosh)। পার্টির হোলটাইমার হওয়ার পরেও কীভাবে তিনি ২২ লাখ টাকার গাড়ি চড়েন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। এত সম্পত্তি এল কীভাবে? প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে কুণাল। এবার তার জবাব দিলেন শতরূপ। আলিমুদ্দিন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের গাড়ি কেনার পাই-পয়সার হিসেব বুঝিয়ে দিলেন সিপিএম নেতা। বললেন, গাড়িটির কথা বলা হচ্ছে, সেটির পেমেন্ট করা হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে। জানুয়ারির ১৬ তারিখ গাড়িটির ডেলিভারি পেয়েছিলেন তিনি। সায়েন্স সিটির কাছে একটি শোরুম থেকে কিনেছিলেন ওই গাড়িটি। গাড়ি কেনার রশিদও সাংবাদিক বৈঠকে দেখালেন শতরূপ।
শতরূপ ঘোষ সিপিএম হোলটাইমার। দলের সর্বক্ষণের কর্মী। সেখানে তাঁর এত টাকার গাড়ি এল কোথা থেকে? তা নিয়েই প্রশ্ন কুণালের। শতরূপ জানাচ্ছেন, গাড়ি কেনার টাকা তাঁর বাবা দিয়েছিলেন। তাঁর বাবা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ একটি সংস্থার চাকুরি করতেন। দুটি চেকের মাধ্যমে গাড়ির পেমেন্ট করা হয়েছিল। সঙ্গে সামান্য কিছু টাকা নগদেও দেওয়া হয়েছিল গাড়ি কেনার জন্য। সিপিএম নেতা জানালেন, ওই দুটি চেকের মধ্যে একটি তাঁর নিজের অ্যাকাউন্টের এবং অপরটি বাবার অ্যাকাউন্টের। শতরূপের অ্যাকাউন্ট থেকে চেক মারফত আড়াই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। তাঁর বাবার অ্যাকাউন্টের চেক থেকে ১৮ লাখ ১ হাজার টাকা পেমেন্ট করা হয়েছিল গাড়ি কেনার জন্য। বাকি ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা নগদে দেওয়া হয়েছিল।
এদিন আলিমুদ্দিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে গাড়ি কেনার সঙ্গে সম্পর্কিত সব নথি তুলে ধরেছেন শতরূপ। নিজের ও তাঁর বাবার যে চেকদুটি ব্যবহার করেছিলেন, সেই দুটিও দেখান। বাবার চেকে যে ১৮ লাখ ১ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল, সেই টাকা কোথা থেকে এল, সেই হিসেবও তুলে ধরেন শতরূপ। জানালেন, তাঁর বাবার বেশ কয়েকটি ফিক্সড ডিপোজিট ছিল। সেগুলির কোনওটির মেয়াদ শেষ হচ্ছিল ২০২৪ সালে, কোনওটি ২০২৫ সালে, আবার কোনওটি ২০২৬ সালে। বাবার নামে থাকা এমন সাতটি ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে গাড়ি কেনার টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে জানালেন শতরূপ।
কুণাল ঘোষের আরও প্রশ্ন ছিল, কেন শতরূপের বাবা সরাসরি নিজের নামে গাড়ি কেনেননি। সেই প্রশ্নেরও জবাব দিলেন সিপিএম নেতা। বললেন, ‘আমার বাবার আমি একমাত্র সন্তান, তাই তিনি ঠিক করেছেন আমার নামে কিনবেন। আমার বাবার এখন ৭৩ বছর বয়স। বাবা মনে করছেন এই বয়সে এসে নতুন করে নিজের নামে না কিনে, আমার নামে কিনবেন।’
কুণাল ঘোষ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যাঁরা সর্বহারার দলের কথা বলে, তাঁদের একজন তরুণ নেতার মানসিকতা হয় কীভাবে ২২ লাখ টাকার বিলাসবহুল গাড়িতে চড়ার? পার্টি হোলটাইমারের ২২ লাখ টাকার গাড়িতে চড়ার শখ হয় কী করে?’ সেই প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন শতরূপ। বলেছেন, ‘আমার শখ-আহ্লাদ নিয়ে আপনি বেশি ভাববেন না। আপনি যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা মদন মিত্রর শখ আহ্লাদের সঙ্গে আমার শখ আহ্লাদের তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন আমার শখ খুবই সামান্য। যে শখ-আহ্লাদের সামগ্রী অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া গেলে, আপনি বরং সেই সব শখ-আহ্লাদ নিয়ে ভাবুন।’
শতরূপের পরামর্শ, ‘এটা নিয়ে ঘেউ ঘেউ করে লাভ নেই।’ বললেন, ‘রাজ্য সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে শুরু করে হাজারটা সোর্স রয়েছে। যদি কারও ক্ষেত্রে কোনও বেনামি সম্পত্তির হদিস ওদের কাছে থাকত, তাহলে ওরা ছেড়ে কথা বলত না। ওই হদিশগুলি নেই বলেই হাস্যকর গল্প বলছে।’