কলকাতা: শ্রীভূমির সুরু পথ। সে পথের দুধারে হাজার মানুষের ভিড়। আর তাদের সামলে সরাচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা। মাঝ বরাবর ব্যারিকেড করে এগোচ্ছেন সিআরপিএফ জওয়ানরা। মন্ত্রীর বাড়ির গলি থেকে একেবারে চার রাস্তা মোড়, সর্বত্র ভারী বুটের আওয়াজ। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে ঢাল, লাঠি, শব্দ বোমা, সেল… পাশ দিয়ে উঠছে তৃণমূলের জয়ধ্বনি। রাস্তার দোকানপাট শাটার অফ্! ভিড়ের মাঝে সিআরপিএফ জওয়ানদের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে গেলেন ইডি আধিকারিকরা। শুক্রবার রাতের শ্রীভূমি যেন কার্গিল! নিজেই বললেন মন্ত্রী সুজিত বসু।
শুক্রবার সকাল থেকেই ছিল টান টান উত্তেজনা। ভোর সাড়ে ছ’টার মধ্যেই ইডি আধিকারিকরা পৌঁছে গিয়েছিলেন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর বাড়িতে। ঢুকতে বেশ কিছুটা দেরি হয়েছিল ইডি আধিকারিকরা। মিনিট কুড়ি পরে ইডি আধিকারিকরা ঢোকেন দমকলমন্ত্রীর বাড়িতে। প্রায় সাড়ে তেরো ঘণ্টা ধরে চলে তল্লাশি। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ইডি আধিকারিকরা। কিন্তু শুক্রবারের সকালের শ্রীভূমি দেখিয়ে দিল ভিড় কেবল দুর্গাপুজোতেই নয়, ‘অন্নদাতা’র বিপদ হলে, অনুগামী স্থানীয় বাসিন্দারাও ভিড় জমাবেন সেখানে। সে ভিড় টেক্কা দেবে পুজোর ভিড়কেও। তবে পিছু যায়নি সিআরপিএফও। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের এই পরিমাণ সংখ্যা দেখে মন্ত্রী নিজেই বললেন, “শ্রীভূমি যেন কার্গিল হয়ে গিয়েছে।”
সন্দেশখালির ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়। লাঠি, জ্যাকেট, সেল, সাউন্ড বোমা-সবই থাকে তাঁদের সঙ্গে। একটা সময়ের পর দেখা যায় বিশেষ বাহিনী সিআরপিএফ ঘিরে ফেলে গোটা এলাকা। শ্রীভূমি রীতিমতো একটা ‘দুর্গে’ পরিণত হয়।
সকাল থেকে সুজিত বসুর বাড়ির সামনে ভিঢ় করেন অনুগামীরা। তাঁদের কেউ বলতে থাকেন সুজিত বসু তাঁদের অন্নদাতা, কেউ আবার বলেন ভগবান। কিন্তু সুজিত বসু নিজেই বলেছেন, সবাইকে শান্ত থাকতে বলা হয়েছিল। যাতে কোনও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছিল। ইডি আধিকারিকরা যখন বেরিয়ে যায় তখন সাংবাদিক বৈঠকে বসেন সুজিত বসু। সুজিত বলেন, “আমরা ভয় পাই না। আমরা ঠিক পথে আছি। এমনভাবে সিরপিএফ ঘিরে রেখেছে এলাকা. যেন মনে হচ্ছে শ্রীভূমি যেন কার্গিল হয়ে গিয়েছে।” এত বাহিনীর উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী। তিনি বারবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, এলাকার মানুষের ওপর ভরসা ছিল। সবাই এসেছিলেন। কিন্তু শান্ত থাকতে বলা হয়েছিল। রাতে যখন ইডি আধিকারিকরা সুজিতের বাড়ি থেকে বের হন, তখনও সিআরপিএফ জওয়ানদের উপস্থিতি ছিল রেকর্ড সংখ্যক।
প্রসঙ্গত শুক্রবারের পর শনিবার সকালেই পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী গঙ্গাসাগরের উদ্দেশে রওনা দেন মন্ত্রী। তখনও তিনি আগের দিনের মতোই রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, “ওঁ মূর্খ, অর্ধশিক্ষিত। ওঁর ব্যাপারে কথা বলব না। দুর্নীতি করেছে বলেই অন্য দলে পালিয়েছে। গঙ্গাসাগর থেকে ফিরে যা বলার বলব।”