কলকাতা: মঞ্চে মেরেকেটে রয়েছে আড়াই হাজার দর্শকের আসন। কিন্তু অসমর্থিত সূত্র বলছে, নজরুল মঞ্চে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢুকেছিলেন সাড়ে সাত হাজার দর্শক। পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকেছিলেন বহু জন। খুলে দেওয়া হয়েছিল মঞ্চের সাতটি দরজাও। অতিরিক্ত ভিড়, কাজ করছিল না শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, তারই মধ্যে কেউ রাসায়নিক স্প্রে করেছিলেন, ধরে নেওয়া হচ্ছে, সেটি ফায়ার এক্সটিংগুইশর। দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে সঙ্গীতশিল্পী কেকে-র অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনায় বেশ কিছু তত্ত্ব সামনে আসছে। উঠে আসছে উদ্যোক্তাদের চরম অদূরদর্শিতা, চরম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ।
কেকে-এর আকস্মিক মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা রাজ্যকে। মঙ্গলবার রাতের পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে ঘোরাফেরা করছে তাঁর শেষ অনুষ্ঠানের বেশ কিছু মুহূর্তের ভিডিয়ো। তাতে দেখা গিয়েছে, কীভাবে ভিড় হয়েছিল সেই স্বল্প পরিসরে।
ভিডিয়ো এক. একটি ভিডিয়ো দেখা গিয়েছে, উদ্যোক্তাদের মধ্যেই কেউই পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে দর্শকদের ছত্রভঙ্গ করতে ফায়ার এক্সটিংগুইশর স্প্রে করেন।
ভিডিয়ো দুই. প্রথম দিকে মঞ্চ মাতাচ্ছিলেন কেকে। কিন্তু মাঝপথেই তাঁর আচরণে একটা অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। তিনি বারবার মঞ্চের পিছন দিকে চলে যাচ্ছিলেন। টেবিলে রাখা সাদা রুমাল দিয়ে ঘাম মুছছিলেন। জল খাচ্ছিলেন।
ভিডিয়ো তিন. কেকে ইশারায় বলেছিলেন, এসি কাজ করছে না। স্পট লাইট বন্ধ করতে বলেছিলেন তিনি।
মাঝে একবার অনুষ্ঠান থামাতে হয়েছিল কেকে-কে। নজরুল মঞ্চে কেএমডিএ-এর এক কর্মী ঘটনার সাক্ষী। তিনি বলেন, “রেলিং টপকে লোক চলে এসেছিল। স্টেজের দু’পাশে ভিড় ছিল। সাতটা দরজার মধ্যে দুটো দরজা ভেঙেই গিয়েছে। পাঁচটা দরজা খোলা ছিল। এত ভিড় হয়েছিল দরজা ওরাই খুলে দিয়েছিল। এসি কাজ করছিল না।”
ওই কর্মী জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানের মাঝেই রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ পাঁচ-সাত মিনিটের জন্য তিনি বিশ্রামে যান। একটু বিশ্রাম নিয়ে তিনি আবার গানে ফেরেন। ভিড় যে ব্যাপক ছিল, তা কেএমডিএ-এর কর্মীর কথাতেই স্পষ্ট ছিল।
সূত্রের খবর, দু’দিনের ফেস্টের জন্য প্রচুর পাস বিতরণ হয়। ফলে ভিড় হয়ে যায় আসন সংখ্যার কয়েক গুণ বেশিই। যার জন্যই তৈরি হয় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। এর দায় কার? উঠছে প্রশ্ন।
বুধবার সকালেও নজরুল মঞ্চে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ২০ টি গানের তালিকা স্টেজে পড়ে। সেই তালিকাই দর্শকদের জন্য তৈরি করেছিলেন কেকে। মঞ্চের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ইট-পাটকেল। চোখে পড়েছে ভাঙা অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা।
অস্বস্তিজনিত কারণে মাঝপথেই অনুষ্ঠান থামিয়েছিলেন কেকে। সামাজিক মাধ্যমে ঘোরাফেরা করছে আরও একটি ভিডিয়ো। যেখানে দেখা গিয়েছে, মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন কেকে। তাঁর সামনে ম্যানেজার। এই ভিডিয়োটিতে কেকে-কে রীতিমতো বিধ্বস্ত দেখিয়েছে।