
কলকাতা: কোথাও ‘সাব্বির দা’, কোথাও ‘মণিরুল দা’, কোথাও ‘প্রেম দা’ কোথাও আবার দিদি। কলেজগুলিতে ‘দাদা-দিদি’-র বাড়-বাড়ন্ত কি ক্রমেই বাড়ছে? অভিযোগ, দাদাদের নির্দেশ ছাড়া যেন নড়ে না গাছের পাতাও। তাঁরা যা বলবেন তাই। আকছাড় এই অভিযোগ উঠে আছে কলেজগুলি থেকে। চলতি বছরে সরস্বতী পুজোর সময় যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজে পুজো নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। সেখানেও দাদাগিরির অভিযোগ উঠেছিল। এই আবহের মধ্যে কসবার ঘটনা। ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল ছাত্র নেতার। গ্রেফতারও হয়েছেন। তিনিও কলেজের এক প্রকার ‘দাদা’-ই ছিলেন। আর কসবাকাণ্ডের পর থেকেই কলেজগুলিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাপট নিয়ে বিরোধী দলগুলি শুরু করেছে চর্চা। প্রশ্ন তুলেছেন, কেন কলেজগুলিতে কেন এত বাড়-বাড়ন্ত দাদা-দিদিদের?
কোন কলেজে কোন দাদা-দিদি?
কলেজ পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী কলেজে রয়েছেন সাব্বিরদা, আশুতোষ কলেজে রয়েছেন সার্থকদা। তিনি আবার (কলেজের হেড ক্লার্ক) রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন বাপ্পাদা। তবে দীনবন্ধু
অ্যানড্রিউজ কলেজে কোনও দাদা নেই। সেখানে আবার রয়েছেন দিদি। নাম রিয়াদি। বিদ্যাসাগর কলেজে রয়েছেন মণরুলদা, অপরদিকে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে আছেন দেবুদা, আর চিত্তরঞ্জন কলেজে রয়েছে প্রেম দা। এই সকল ‘দাদা-দিদি’-দের দাপট কলেজগুলি চলে বলেই একাংশের পড়ুয়াদের অভিযোগ।
কেন কলেজগুলিতে দাদাদের দাপট?
নির্বাচন হচ্ছে না। যার জেরে কলেজে-কলেজে নির্বাচন ছাড়াই ইউনিয়ন তৃণমূলের দখলে। প্রায় প্রত্যেক কলেজের দায়িত্বেই রয়েছেন বহিরাগত TMCP দাদারা। তাঁরাই সর্বেসর্বা। নির্বাচন ছাড়াই দখলে ইউনিয়ন রুম। ২০১৭ সালে কলেজগুলিতে হয়েছিল শেষ নির্বাচন। তারপর আর ভোট না হওয়ায় প্রাক্তনীদের দাপট ক্রমেই বেড়েছে বলে অভিযোগ। কলেজের ভিতরে অবাধ যাতায়াত তাঁদের। ২০১৯ ও ২০২০ সালে শুধুমাত্র প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট হলেও আর কোনও নির্বাচন হয়নি। যার জেরে দাদাতন্ত্র চলেই আসছে বলে দাবি বিরোধীদের। বহিরাগতদের দাপটে যে কোনও দিন অন্য কলেজেও এই ঘটনা ঘটতে পারে, আশঙ্কা একাংশ প্রিন্সিপালদের।
যোগেশচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায় বলেন, “অছাত্ররা অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেছেন। যে শব্দ আমি মুখে উচ্চারণ করতে পারব না। এতবার পুলিশকে জানিয়েছি…পুলিশ পিকেটও বসেছে। তবুও এদের তাণ্ডবলীলা বন্ধ করা যায় না।” প্রিন্সিপল কাউন্সিলের প্রাক্তন সভাপতি পূর্ণচন্দ্র মাইতি বলেন, “কোনও নিয়ম নীতি চলে না। এখন দাদাদের নিয়মটাই। অধ্যক্ষরা ঠুঁটো জগন্নাথ। কিছু বললেই মাথা কাটা যায়। এক মিনিটে তাঁদের চেয়ার নড়ে যাবে। অধ্যক্ষরা অসহায়। তাঁরা বলে। সব জায়গার এক অবস্থা।”
যদিও, পুরোটা অস্বীকার করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অভিরূপ চক্রবর্তী বলেন, “যাঁরা শূন্য থেকে মহাশূন্য়ে পথে তাঁদের ভুলভাল কথার উত্তর দেব না। একটা নির্বাচন করতে দেড়মাস সময় লাগে। সাধারণ ছাত্ররা TMCP-র উপর আস্থা রাখে। তাই ইউনিয়ন রুম দখলে।” এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, “দশ বছর ধরে নির্বাচন হয় না। কলেজ ছাড়ার পরও জিএস হয়ে বসে আছে।” বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “কলেজ কন্ট্রোল করছে তৃণমূলের তোলাবাজরা। এদের বয়স তিরিশের বেশি। এদের দুটো করে বাচ্চা আছে। এরা বিবাহিত।”