কলকাতা: প্রথম উক্তি: ‘দিদি হয়ে ঠিক ছিল, পিসি হয়েই সর্বনাশ’। দ্বিতীয় উক্তি: ‘আজ বলতে দ্বিধা নেই। অভিষেক আমাকে আধঘণ্টা ধরে বুঝিয়েছিলেন। আমি লজ্জিত এবং অনুতপ্ত।’ বক্তা একজনই, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)। প্রথমটা একুশের ভোটের নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মমতাকে আক্রমণ করে তাঁর কটাক্ষপূর্ণ সম্ভাষণ। আর দ্বিতীয়টা রবিবার ত্রিপুরায় অভিষেকের সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁরই সরল স্বীকারোক্তি। ১০ মাসের ব্যবধানে ফের পদ্ম ছেড়ে তৃণমূলে ফিরলেন রাজীব। তাঁর এই ‘ভোলবদলকে’ কার্যত চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ (Soumitra Khan)। কটাক্ষ হেনে সেরেল্যাক খাওয়ার পরামর্শও দিলেন তিনি।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে একটি ফেসবুক লাইভে এসে সরাসরি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে সৌমিত্র বলেন, “রাজীববাবু আপনাকে বলি, আপনি তো উপমুখ্যমন্ত্রী হতে দলে এসেছিলেন। মমতা আপনাকে ভাল জায়গা দিয়েছিলেন কয়েকটা, কিন্তু, আপনার পোষালো না। আপনি তো বিজনেসম্যান। ৫৫ বছর বয়সে আপনি এতটাই শিশু যে বুঝতেই পারেননি দল ক্ষমতায় আসবে কি না। তাই আপনাকে ভুল বুঝিয়ে দলে আনা সম্ভব হয়েছিল। তা ভাল…আপনি বরং মাঝেমধ্যে সেরেল্যাক খাওয়া অভ্যেস করুন।”
এখানেই না থেমে বিষ্ণপুর সাংসদের আরও সংযোজন, “আপনি নিজেকে এত বড় নেতা ভেবেছিলেন যে বাংলা থেকে নয়, সুদূর ত্রিপুরাতে গিয়ে আপনাকে তৃণমূলে যোগদান করতে হল। উপমুখ্যমন্ত্রী হতে না পেরে ফিরে যেতে হল আপনাকে। ভাল হয়েছে আপনি গিয়েছেন। আসলে বাংলার রাজনীতিটা তো এখন বিজনেস হয়ে গিয়েছে। সেখানে আপনার মতো বিজনেসম্যানরা কোনও আদর্শের ধার ধারেন না। আজ এখানে তো কাল ওখানে চলে যান।”
এরপর দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে সৌমিত্র ভরসা না হারানোর বার্তা দিয়ে জানান, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় দলে কোনও চারটে লোক বেশি আনতে পারেননি। তাঁর চলে যাওয়ায় দলের কোনও ক্ষতি হবে না। বিজেপি শক্তিশালী দল। এদিন সৌজন্যের রাজনীতি করার অনুরোধও করেন সৌমিত্র।
রবিবার ত্রিপুরায় দাঁড়িয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করে নিলেন তাঁর ভুল হয়েছিল দল ছেড়ে। তিনি দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আধ ঘণ্টা ধরে যিনি বুঝিয়েছিলেন তিনি আর কেউ নন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে ফের তৃণমূলে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তাই অভিষেককে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ ও আর কৃতজ্ঞতা জানালেন তিনি। একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করলেও বেশির ভাগ সময়ই অভিষেককেই নিজের নেতা হিসাবে বর্ণনা করলেন রাজীব।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিমত, তৃণমূলে কে ফিরবেন বা কাকে ফেরানো হবে তার বড় দায়িত্ব নিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তিনি কয়েক দিন আগে খড়দহের সভায় ঘোষণা করেছিলেন, যাঁদের ফেরানো হচ্ছে, তাঁদের প্রায়শ্চিত্ত করেই তবেই এন্ট্রি হচ্ছে। অভিষেকের নিজের কথায়, ‘অত সোজা নয়’। এমনকি তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, সব দলবদলুকে চান্স দিলে বিজেপি বাংলা থেকে উঠে যাবে।
রাজীব কোন প্রায়শ্চিত্ত করে তৃণমূলে ফিরলেন সেটা দলের অন্দর খবর। তবে প্রকাশ্য সভায় তিনি নিজেই জানালেন লজ্জিত এবং অনুতপ্ত। তাঁকে ভুল বুঝিয়ে বিজেপি-তে নিয়ে যাওয়া হয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে তাঁকে আরেকবার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অভিষেককে বারংবার ধন্যবাদ জানান রাজীব। বলেন, ‘আমার নেতা’।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মাদার ফিগার’ বলে এসেছেন রাজীব। যদিও একুশের ভোটে একে অন্যকে আক্রমণ-ও কম করেননি। তাঁর মন্ত্রিত্বকালে বন দফতরে বড় দুর্নীতির অভিযোগ করে হাওড়াতেই আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সাফ জানিয়ে দেন এর তদন্তও হবে। আর যে রাজীব এদিন বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, ভোট আর ক্ষমতা দখল ছাড়া তাদের আর কোনও এজেন্ডা নেই, ভোটের সময় মমতাকে সাম্প্রদায়িক বলতেও দ্বিধা করেননি।
আবার তাঁর চাটার্ড ফ্লাইটে গিয়ে বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে তৃণমূলের সমালোচনায় রাজীব পাল্টা বলেছিলেন, ‘রাজ্যের মধ্যেই দলের জনসভায় যোগ দিতে হেলিকপ্টারে যাচ্ছেন ভাইপো। তবে চার্টার্ড প্লেনে দোষ কোথায়?’
এসবের মধ্যে দলে ফেরা হয়ত কঠিন ছিল। চাটার্ড ফ্ল্যাইটে দিল্লি উড়ে গিয়ে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। অভিষেকের কথায় ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতে কি এবার তাঁরই ত্রিপুরা সফরে গিয়ে রাজীবের ঘরওয়াপসি? প্রশ্নটা উঠছে। যদিও, সোমবার কলকাতায় ফিরে রাজীব বলেন, “আমি তৃণমূলের প্রতি আমার প্রাক্তন দলের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি অত্যন্ত খুশি। দল আমাকে ফের জায়গা দিয়েছে।”
দেখুন ভিডিয়ো:
আরও পড়ুন: Kalyan Banerjee: ‘কেউ কথা রাখেনি!…আমায় মেনে নিতে হবে’, রাজীবের প্রত্যাবর্তনে ‘অভিমানী’ কল্যাণ
কলকাতা: প্রথম উক্তি: ‘দিদি হয়ে ঠিক ছিল, পিসি হয়েই সর্বনাশ’। দ্বিতীয় উক্তি: ‘আজ বলতে দ্বিধা নেই। অভিষেক আমাকে আধঘণ্টা ধরে বুঝিয়েছিলেন। আমি লজ্জিত এবং অনুতপ্ত।’ বক্তা একজনই, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)। প্রথমটা একুশের ভোটের নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মমতাকে আক্রমণ করে তাঁর কটাক্ষপূর্ণ সম্ভাষণ। আর দ্বিতীয়টা রবিবার ত্রিপুরায় অভিষেকের সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁরই সরল স্বীকারোক্তি। ১০ মাসের ব্যবধানে ফের পদ্ম ছেড়ে তৃণমূলে ফিরলেন রাজীব। তাঁর এই ‘ভোলবদলকে’ কার্যত চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ (Soumitra Khan)। কটাক্ষ হেনে সেরেল্যাক খাওয়ার পরামর্শও দিলেন তিনি।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে একটি ফেসবুক লাইভে এসে সরাসরি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে সৌমিত্র বলেন, “রাজীববাবু আপনাকে বলি, আপনি তো উপমুখ্যমন্ত্রী হতে দলে এসেছিলেন। মমতা আপনাকে ভাল জায়গা দিয়েছিলেন কয়েকটা, কিন্তু, আপনার পোষালো না। আপনি তো বিজনেসম্যান। ৫৫ বছর বয়সে আপনি এতটাই শিশু যে বুঝতেই পারেননি দল ক্ষমতায় আসবে কি না। তাই আপনাকে ভুল বুঝিয়ে দলে আনা সম্ভব হয়েছিল। তা ভাল…আপনি বরং মাঝেমধ্যে সেরেল্যাক খাওয়া অভ্যেস করুন।”
এখানেই না থেমে বিষ্ণপুর সাংসদের আরও সংযোজন, “আপনি নিজেকে এত বড় নেতা ভেবেছিলেন যে বাংলা থেকে নয়, সুদূর ত্রিপুরাতে গিয়ে আপনাকে তৃণমূলে যোগদান করতে হল। উপমুখ্যমন্ত্রী হতে না পেরে ফিরে যেতে হল আপনাকে। ভাল হয়েছে আপনি গিয়েছেন। আসলে বাংলার রাজনীতিটা তো এখন বিজনেস হয়ে গিয়েছে। সেখানে আপনার মতো বিজনেসম্যানরা কোনও আদর্শের ধার ধারেন না। আজ এখানে তো কাল ওখানে চলে যান।”
এরপর দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে সৌমিত্র ভরসা না হারানোর বার্তা দিয়ে জানান, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় দলে কোনও চারটে লোক বেশি আনতে পারেননি। তাঁর চলে যাওয়ায় দলের কোনও ক্ষতি হবে না। বিজেপি শক্তিশালী দল। এদিন সৌজন্যের রাজনীতি করার অনুরোধও করেন সৌমিত্র।
রবিবার ত্রিপুরায় দাঁড়িয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করে নিলেন তাঁর ভুল হয়েছিল দল ছেড়ে। তিনি দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আধ ঘণ্টা ধরে যিনি বুঝিয়েছিলেন তিনি আর কেউ নন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে ফের তৃণমূলে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তাই অভিষেককে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ ও আর কৃতজ্ঞতা জানালেন তিনি। একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করলেও বেশির ভাগ সময়ই অভিষেককেই নিজের নেতা হিসাবে বর্ণনা করলেন রাজীব।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিমত, তৃণমূলে কে ফিরবেন বা কাকে ফেরানো হবে তার বড় দায়িত্ব নিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তিনি কয়েক দিন আগে খড়দহের সভায় ঘোষণা করেছিলেন, যাঁদের ফেরানো হচ্ছে, তাঁদের প্রায়শ্চিত্ত করেই তবেই এন্ট্রি হচ্ছে। অভিষেকের নিজের কথায়, ‘অত সোজা নয়’। এমনকি তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, সব দলবদলুকে চান্স দিলে বিজেপি বাংলা থেকে উঠে যাবে।
রাজীব কোন প্রায়শ্চিত্ত করে তৃণমূলে ফিরলেন সেটা দলের অন্দর খবর। তবে প্রকাশ্য সভায় তিনি নিজেই জানালেন লজ্জিত এবং অনুতপ্ত। তাঁকে ভুল বুঝিয়ে বিজেপি-তে নিয়ে যাওয়া হয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে তাঁকে আরেকবার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অভিষেককে বারংবার ধন্যবাদ জানান রাজীব। বলেন, ‘আমার নেতা’।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মাদার ফিগার’ বলে এসেছেন রাজীব। যদিও একুশের ভোটে একে অন্যকে আক্রমণ-ও কম করেননি। তাঁর মন্ত্রিত্বকালে বন দফতরে বড় দুর্নীতির অভিযোগ করে হাওড়াতেই আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সাফ জানিয়ে দেন এর তদন্তও হবে। আর যে রাজীব এদিন বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, ভোট আর ক্ষমতা দখল ছাড়া তাদের আর কোনও এজেন্ডা নেই, ভোটের সময় মমতাকে সাম্প্রদায়িক বলতেও দ্বিধা করেননি।
আবার তাঁর চাটার্ড ফ্লাইটে গিয়ে বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে তৃণমূলের সমালোচনায় রাজীব পাল্টা বলেছিলেন, ‘রাজ্যের মধ্যেই দলের জনসভায় যোগ দিতে হেলিকপ্টারে যাচ্ছেন ভাইপো। তবে চার্টার্ড প্লেনে দোষ কোথায়?’
এসবের মধ্যে দলে ফেরা হয়ত কঠিন ছিল। চাটার্ড ফ্ল্যাইটে দিল্লি উড়ে গিয়ে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। অভিষেকের কথায় ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতে কি এবার তাঁরই ত্রিপুরা সফরে গিয়ে রাজীবের ঘরওয়াপসি? প্রশ্নটা উঠছে। যদিও, সোমবার কলকাতায় ফিরে রাজীব বলেন, “আমি তৃণমূলের প্রতি আমার প্রাক্তন দলের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি অত্যন্ত খুশি। দল আমাকে ফের জায়গা দিয়েছে।”
দেখুন ভিডিয়ো:
আরও পড়ুন: Kalyan Banerjee: ‘কেউ কথা রাখেনি!…আমায় মেনে নিতে হবে’, রাজীবের প্রত্যাবর্তনে ‘অভিমানী’ কল্যাণ