আপডেট: ভাল আছেন সৌরভ, কলকাতাতেই চিকিৎসা হবে জানালেন ডোনা

সায়নী জোয়ারদার | Edited By: ঋদ্ধীশ দত্ত

Jan 03, 2021 | 7:28 PM

হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, রুটিনমাফিক সকালের ইসিজি করা হবে। রাতের ইসিজি রিপোর্ট সন্তোষজনক।

আপডেট: ভাল আছেন সৌরভ, কলকাতাতেই চিকিৎসা হবে জানালেন ডোনা
ফাইল চিত্র।

Follow Us

কলকাতা: ভাল আছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। রাতে ভাল ঘুম হয়েছে। কোনও অস্বাভাবিকতাও নেই। রবিবার জানাল উডল্যান্ডস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সিইও রূপালি বসু জানান,সোমবারই বৈঠকে বসবে মেডিকেল বোর্ড। পরবর্তী চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে কথা বলবেন বোর্ডের সদস্যরা। সূত্রের খবর, থাকতে পারেন দেবী শেঠি।

রবিবার সকালেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সৌরভের অক্সিজেন সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়েছে। সকালে চা, ছানা, টোস্ট খেয়েছেন। অনবরত পর্যবেক্ষণ করছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা মনে করছেন, আপাতত ঝুঁকি কাটিয়ে উঠেছেন মহারাজ। তবে অ্যান্টিবায়োটিক চলছে। নতুন স্টেন্ট কতটা কাজ করছে তাও দিনভর নজরে রাখা হচ্ছে। এদিন হাসপাতালের দুপুরের বুলেটিনের পর ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় জানান, কলকাতাতেই চিকিৎসা চলবে সৌরভের। তাঁকে বাইরে কোথাও নিয়ে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই।

এদিন সকালেই প্রাক্তন অধিনায়কের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এবার ফোন করলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী (PM Narendra Modi)। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এদিন সকাল ১০টা নাগাদ ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করেন নরেন্দ্র মোদী। প্রায় তিন-চার মিনিট কথা হয়। সৌরভ বর্তমানে ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ফোন করায় কিছুক্ষণ কথা বলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

হাসপাতাল থেকে বেরোনোর সময় ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার দুপুরে।

শনিবার রাতেই ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলেন সচিন তেণ্ডুলকর। সৌরভের খোঁজ নেন তিনি। ফোন করেন লতা মঙ্গেশকরও। সকাল থেকেই সৌরভকে দেখতে হাসপাতালে ভিআইপিদের ভিড়। বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্য, বৈশালী ডালমিয়া, অরূপ রায়, তাপস রায়, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা দেখা করেন সৌরভের সঙ্গে। সূত্রের খবর, এদিন কলকাতায় আসতে পারেন বিসিসিআই সচিব জয় শাহ। অন্যদিকে সৌরভের অসুস্থতার খবর পেয়ে একাধিকবার ফোনে খোঁজ নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

রবিবার সকালে উডল্যান্ডসে অশোক ভট্টাচার্য।

আরও পড়ুন: হৃৎপিণ্ডে ‘ক্রিটিক্যাল ব্লক’, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পর ভাল আছেন ‘মহারাজ’, ঠিক কী হয়েছিল সৌরভের?

সৌরভের পর্যবেক্ষণে তৈরি মেডিকেল বোর্ডের অন্যতম চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল বলেন, “সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাকি দু’টি ব্লকেজের ক্ষেত্রে কী ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে তা মেডিক্যাল বোর্ডে আলোচনার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত হবে। তবে স্টেন্ট এবং বাইপাস সার্জারির মধ্যে সৌরভের বয়সের কথা মাথায় রেখে আমি অন্য দু’টি ব্লকেজের ক্ষেত্রেও স্টেন্ট বসানোর পক্ষপাতী। এখন যা প্রযুক্তি তাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও স্টেন্ট বসানোয় কোনও বাধা নেই। মানসিক চাপের সৌরভের হার্ট অ্যাটাকের কারণ বলে আমার মনে হয় না। এক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস যে সৌরভের রয়েছে, সেটিকেই হার্ট অ্যাটাকের কারণ হিসাবে আমি এগিয়ে রাখব।”

শনিবারই সৌরভের খবর পেয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা। তিনি বলেন, “দাদার সঙ্গে এত বছর দেশের, রাজ্যের হয়ে খেলেছি। আইপিএল খেলেছি। দাদাকে কোনওদিন অসুস্থ হতে দেখিনি। দাদাকে গতকাল হাসপাতালে দেখে খুব কষ্ট হয়েছিল। তবে দাদা কামব্যাক সুপারস্টার, তিনি সেইভাবেই আবার কামব্যাক করবেন। দাদাকে দেখে আমরা বড় হয়েছি, উনি আমাদের আদর্শ।” একইসঙ্গে লক্ষ্মীরতন বলেন, “অসুস্থ বোধ করার সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে দাদা চিকিৎসককে ফোন করে সবটা সামাল দিলেন তা ওনার অফস্টাম্পের বাইরের স্ট্রোকের পারফেক্ট টাইমিংয়ের সঙ্গেই তুলনীয়।”

শনিবার দুপুরে হঠাৎই খবর আসে বুকে ব্যথা নিয়ে উডল্যান্ডসে ভর্তি হয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কিছু পরেই চিকিৎসকরা জানান, হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তাঁর। খবর ছড়াতেই গোটা দেশ উদ্বেগে অস্থির। সেলেব্রিটি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে আম ভারতীয় কিংবা ‘দাদার’ ভক্তরা সকলের একটাই প্রার্থনা তিনি যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন। হাসপাতালও অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে সবরকম ব্যবস্থা নেয়।

বিকেলের মধ্যেই সৌরভের অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হয়। বসানো হয় স্টেন্ট। উডল্যান্ডস হাসপাতাল সূত্রে খবর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হৃৎপিণ্ডে তিনটি ব্লক পাওয়া যায়। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পরে দু’টি ব্লক দূর করতে স্টেন্ট বসানো হয়। আরেকটি ব্লকের ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে সে বিষয়ে পরবর্তী ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পর চিকিৎসকরা জানান, ভাল আছেন সৌরভ।

আরও পড়ুন: ‘দাদা একেবারে চাঙ্গা রয়েছেন’, সন্ধ্যায় খেলেন চা-বিস্কুট, নৈশাহারে চিকেন স্যুপ-টোস্ট

তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়রা। প্রত্যেকেই ‘বেহালার ছেলে’টাকে দেখে এসে বলেছেন, ওর খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব অটুট। মনোবল একটু ভাঙতে দেননি। স্বভাবসিদ্ধ হাসিমুখটাই সাহস জুগিয়েছে সকলকে। সন্ধ্যায় চা-বিস্কুটও খান। রাতে খান স্যুপ, টোস্ট। রবিবার সকালে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, ভাল আছেন ‘দাদা’।

 

Next Article