South DumDum Electrocution: খাটের ওপর টেডি, প্লাস্টিকে দুই বন্ধুর ম্যাচিং পুজোর জামা! রইল না শুধু শ্রেয়া-অনুষ্কাই

TV9 Bangla Digital | Edited By: শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী

Sep 23, 2021 | 10:23 AM

South DumDum Electrocution: শ্রেয়া বণিক ও অনুষ্কা নন্দীর বাড়ির ছোট্ট ঘরগুলিতে আজ তিল ধারণের জায়গা নেই। মুখে কথা নেই কারোরই, নির্বাক চোখই যেন সন্তানহারা মায়েদের সাত্বনা দিচ্ছে।

South DumDum Electrocution: খাটের ওপর টেডি, প্লাস্টিকে দুই বন্ধুর ম্যাচিং পুজোর জামা! রইল না শুধু শ্রেয়া-অনুষ্কাই
বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু দুই কিশোরীর (নিজস্ব চিত্র)

Follow Us

দমদম: ঘরের মেঝেতে এখনও গোড়ালি ডোবা জল। খাটের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে বই-খাতা, মোবাইল ফোন! খাটেরই স্ট্যান্ডে ঝুলছে তার ইউনিফর্ম। সোকেসের কোণে রাখা ছোট্ট বসার টুলটার ওপর প্লাস্টিক আর তাতেই পুজোর জন্য কেনা নতুন জামা। ঠিক ছিল, ওই জামাটাই অষ্টমীতে পড়বে সে! সবই রয়ে গিয়েছে, রইল না শুধু অনুষ্কাই। ৩০ সেপ্টেম্বরই জন্মদিন ছিল মেয়েটার। অকাল দুর্যোগ প্রাণ কেড়েছে তার। সঙ্গে সে নিয়ে গিয়েছে প্রিয় বান্ধবীকেও। দক্ষিণ দমদমের (South DumDum) মতিঝিল কলোনির সেই ছোট্ট গলির এক চিলতে ঘরে শুধুই হাহাকার। পাশাপাশি দুই বাড়ির মেয়ে আজ শেষ হয়ে গিয়েছে! বাড়ির সামনে জমা জলে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট (Electrocution) হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাদের। শ্রেয়া বণিক ও অনুষ্কা নন্দীর বাড়ির ছোট্ট ঘরগুলিতে আজ তিল ধারণের জায়গা নেই। মুখে কথা নেই কারোরই, নির্বাক চোখই যেন সন্তানহারা মায়েদের সাত্বনা দিচ্ছে।

বুধবার সন্ধ্যায় পড়তে যাচ্ছিল অনুষ্কা। বিকালে পড়তে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় দেরি হয়ে যায়। পাশেই তার বন্ধু শ্রেয়ার বাড়ি। তাকে ডাকতে গিয়েছিল। অনুষ্কার মা জানান, বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়েই তারা যাচ্ছিল। উল্টোদিক থেকে একটি দুধের গাড়ি আসায় তারা পাশ কাটাতে যায়।

শ্রেয়া টাল সামলাতে না পেরে রাস্তার ধারে বাতিস্তম্ভ ধরে নেয়। বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে যায় সে। বুঝতেই পারেনি অনুষ্কা। ভেবেছে শ্রেয়ার শরীর খারাপ করছে। আর তাকে ধরতে গিয়ে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয় সেও। ব্যস, সব শেষ! পড়াশোনা, খাওয়া-ঘুম বাদ দিয়ে দিনের বেশিরভাগ সময়টা একসঙ্গে কাটত শ্রেয়া-অনুষ্কা। একসঙ্গেই চলে গেল তারা। আর ফাঁকা করে দিয়ে গেল দুই মায়ের বুক।

পাড়ার দুই মেয়ের এই মর্মান্তিক পরিণতি মেয়ে নিতে পারছেন না কেউই। বুক ফাঁটছে আর সঙ্গে ফাঁটছে মুখও! ক্ষোভ যেন ভিতর থেকে উগরে আসছে। কোথায় প্রশাসন? কোথাও গেলেন নেতা-মন্ত্রীরা? ডুকরে কেঁদে উঠলেন অনুষ্কার মাও।

চোখ জ্বলছে তাঁর, গলা শুকিয়ে আসছে। ঘরে ভর্তি লোকের মাঝে এ প্রসঙ্গ উঠতেই হাউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠলেন। বললেন, “ভোটের সময় হুডখোলা গাড়িতে রাস্তার এ মাথা-ও মাথা করেন! কিন্তু ভোট পেরোলেই সব শেষ। কোথায় গেলেন? আমাদের গলিতেও তো ঢোকেন না। সৌগত রায়ের শাস্তি চাই আমরা। বোঝেন না কীভাবে থাকি, না বুঝে কেন বললেন?”

নিহত অনুষ্কার মা প্রিয়াঙ্কা নন্দী (নিজস্ব চিত্র)

স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চলছে কানাঘুষো। সৌন্দর্যায়নের জন্য লাগানো অনুচ্চ বাতিস্তম্ভের সুইচ বক্স খোলা ছিল। ওখানে নাকি এ ধরনের বাতিস্তম্ভগুলি এ ভাবেই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। দুর্যোগের সময় বাতিস্তম্ভের সুইচ বক্স বন্ধ থাকার কথা। সাধারণ নিয়মে এটাই হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে চূড়ান্ত অবহেলার ছবি ধরা পড়ছে। আর তার মাশুল গুনতে হল দুই কিশোরীকে।

শ্রেয়া অনুষ্কা চলে গেল! রয়ে গিয়েছে তাদের টেডি! আর সেটাই সম্বল সন্তানহারা মায়েদের। নরম পুতুল বুকে আঁকড়ে মেয়ের শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করছেন অনুষ্কার মা। আর শ্রেয়া মা সব কিছুর উর্ধ্বে। তাঁর শরীরে সার নেই, চোখ ঝাপসা! স্থির দৃষ্টি শুধু ঘরের জমা জলের দিকেই।

আরও পড়ুন: Electrocution: বাতিস্তম্ভের খোলা সুইচ বক্স বৃষ্টিতে ভিজছিল , দক্ষিণ দমদমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত ২

Next Article