
কলকাতা: বেজেছে ভোটের দামামা। বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ একুশে জুলাই। একুশের মঞ্চ থেকেই যে তৃণমূল সুপ্রিমো ছাব্বিশের রণনীতি ঘোষণা করবেন তা বলাই বাহুল্য। ইতিমধ্যেই বিজেপি শাসিত রাজ্যেগুলিতে বাঙালি হেনস্থা ইস্যুতে সরব হয়েছে তৃণমূল। এবার একেবারে চেনা ছক ভেঙে একুশের আগেই পথে নেমেছিল মমতা-অভিষেক। দিনটা ছিল ১৬ জুলাই। বাঙালি অস্মিতায় শান দিয়ে তোপের পর তোপ দেগেছেন গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশের মত, একুশের মঞ্চেও তারও তারই প্রতিচ্ছবি দেখা যেতে চলেছে।
তৃণমূলের কাছে এই মঞ্চ বরাবরই রাজনৈতিক শপথ গ্রহণের মঞ্চ। এই মঞ্চই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে একসময় পরিবর্তনের আন্দোলনের অন্যতম ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। ২০০৮ সালে এই মঞ্চেই নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাষণে ঝড় উঠেছিল সভাজুড়ে। এরপর ২০১১ সালে পালা বদলের পর এই মঞ্চই হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিজয় উৎসবের মঞ্চ। এই মঞ্চ থেকেই আত্মপ্রকাশ করেছিলেন খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তৃণমূলের নতুন গণসংগঠন তৃণমূল যুবর সভাপতি হিসেবে নাম ঘোষণা হয়েছিল অভিষেকের।
২০১৪ সালে এই মঞ্চ থেকেই দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছিলেন মমতা। দিলিতে অবিজেপি কংগ্রেসী সরকার গড়ার ডাক দিয়েছিলেন তিনি। ঝড় উঠেছিল একুসের বিধানসভাতেও। ওই বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই একুশে জুলাই মঞ্চ থেকেই বিজেপিকে বহিরাগত আখ্যা দিয়েছিল তৃণমূল। তারপর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার বঞ্চনার ইস্যুতে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল। তারপর থেকে কখনও একশোদিন কখনও আবাস ইস্যুতে দিল্লিতেও ঝড় তুলেছেন অভিষেকরা। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ স্বাক্ষী ছিল সেই রাজনৈতিক অভিমুখ নির্ধারণের। এরপর চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে আবার দিল্লিতে অবিজেপি সরকার গঠনের ডাক দিয়েছিলেন মমতা। এই সময়েই যে রাজ্যে যে অবিজেপি দল শক্তিশালী সেই দলকে মুখ করে বিজেপির বিরুদ্ধে ওয়ান ইস্টু ওয়ান জোট গড়ার প্রস্তাবও দেন মমতা। তৈরি হয়েছে ইন্ডিয়া জোট। এবার সামনে নতুন লড়াই।
ইতিমধ্যেই ১৬ জুলাই পথে নেমে মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন এবারের লড়াইয়ে বিজেপিকে রুখতে তৃণমূলের বড় হাতিয়ার বাঙালি অস্মিতা। পাশাপাশি পহেলগাঁও ইস্যুতে কেন্দ্রের ব্যর্থতা নিয়েও ইতিমধ্যে সুর চড়িয়েছেন অভিষেক। সব মিলিয়ে বাঙালির উপর নির্যাতন, বাংলাকে বঞ্চনা, প্রাপ্য না মেটানো এবং বাংলা ভাষাকে অমর্যাদা করার মতো ইস্যুগুলোই এবারের একুশে জুলাই মঞ্চে প্রতিধ্বনিত হতে পারে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। তবে ইতিমধ্যেই আবার বাংলা থেকে ঘুরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সাফ বলেছেন বাঙালি আবেগ বিজেপির কাছেই সুরক্ষিত। দুর্গাপুরের মঞ্চে শুরুতেই তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল কালী, দুর্গার নাম। কথা বলেছিলেন বাংলাতেও। বাংলার শিল্প সম্ভাবনার কথা মনে করিয়ে একবার সুযোগ চেয়ে নিয়েছিলেন বাংলার মানুষের কাছে। উল্টে আরজি কর থেকে, কসবা কাণ্ড নিয়ে গর্জে উঠেছিলেন। এবার তার পাল্টা মমতা কিছু বলেন কিনা তা দেখার।