কলকাতা: এসএসকেএম-এ দুই চিকিৎসকের ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন। রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঝুঁকির অস্ত্রোপচারে তোলপাড় স্বাস্থ্য ভবন। অভিযোগ, ইউরোলজি ও কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের দুই চিকিৎসকের বনিবনা না হওয়ায়, কার্ডিওথোরাসিক বিভাগেরই অনভিজ্ঞ আরএমও-র সাহায্যে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার হয় এক রোগীর। এসএসকেএম সূত্রে খবর, অভিজ্ঞ কার্ডিওথোরাসিক সার্জেন না থাকায় অস্ত্রোপচারের টেবিলে প্রবল রক্তপাত হয় রোগীর। শেষ পর্যন্ত ইউরোলজির চিকিৎসকের দক্ষতায় প্রাণ বাঁচল রোগীর। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা ভাবা যায় না। অভিযোগ শুনে হতবাক স্বাস্থ্য ভবনও। স্বাস্থ্য ভবন জানিয়েছে, ঠিক কী ঘটেছে, তা বিভাগীয় প্রধানের কাছে জানতে চাওয়া হবে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদেরই প্রশ্ন, রোগীর প্রাণ আগে না দুই চিকিৎসকের অহং আগে? কার্ডিওথোরাসিক অ্যান্ড ভ্যাসকুলার সার্জারি (Cardiothoracic and Vascular Surgery) ডিপার্টমেন্টে অ্যাসোসিয়েট পদমর্যাদার কোনও প্রফেসারের অনুপস্থিতিতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারের অনুমতি মিলল কীভাবে? প্রশ্ন উঠছে সে বিষয়েও।
এসএসকেএম- যে ঘটনা ঘটেছে, তা অনভিপ্রেত। ঘটনার সূত্রপাত মাস খানেক আগে। আইএমএ কলকাতা নির্বাচন ঘিরে চিকিৎসকদের মধ্যে তখন উত্তেজনা তুঙ্গে। সে সময় নির্বাচন সংক্রান্ত একটি মিটিং ছিল। সেই মিটিংয়ে যাবেন বলে কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ইউরোলজির প্রফেসরকে জানান, তাঁকে দ্রুত ছেড়ে দিতে হবে। ইউরোলজির প্রফেসর স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের যে অস্ত্রোপচার, তা দ্রুততার সঙ্গে হয় না। ফলে তিনি যদি আসতে না পারেন, তাঁর পরবর্তী অন্য কাউকে যাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, এমনটাই জানান ইউরোলজির প্রফেসর। এরপর কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের প্রফেসর বলেন, এই আর্জি যেন করেন ইউরোলজির প্রফেসরই। সমস্যা শুরু হয় সেখান থেকেই। ইউরোলজির প্রফেসর স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সমস্যাটা তাঁর নয়। যাঁর সমস্যা, তাঁকেই বলতে হবে। এই টানাপোড়েন চলছিল।
রোগীর অস্ত্রোপচারের দিন দুুপুর দেড়টা নাগাদ কার্ডিও থোরাসিক বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের আসার কথা ছিল। ২.১৫ মিনিট নাগাদ ইউরোলজি বিভাগে হাজির হন। অপারেশনের সময়ে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর একটি মন্তব্য করেন, যা নিয়ে বিতর্ক। অভিযোগ, অপারেশনের সময়েই নাকি অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মন্তব্য করেন, “কোনও কর্পোরেট হাসপাতালে ইউরোলজির চিকিৎসক কাজ করতে পারতেন না।” এই মন্তব্যের পাল্টা ইউরোলজির প্রফেসরও বলেন, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের বাবা যাতে তাঁর কাছে কোনও রোগী রেফার না করেন। উল্লেখ্য কার্ডিওথোরাসিক প্রফেসরের বাবা চিকিৎসক নেতা। তিনি প্রভাবশালী। এইভাবে টানাপোড়েন চলে।
দুই চিকিৎসকের মধ্যে সমস্যা চলছিল। যেদিন অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়, সেদিন ওটিতে রক্তপাত হয় রোগীর। কিন্তু তখন কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর আসেননি। পাঠানো হয় এক আরএমওকে। এ প্রসঙ্গে এসএসকেএমের ইউরোলজি বিভাগের প্রধান দিলীপ পাল বলেন, “আরএমও এসেছিল প্রথমে, পরে চিকিৎসকও আসেন। ব্লাড লস আরএমও-র জন্য হয়নি। অন্য কারণে হয়েছে। আমি দুই চিকিৎসকের সঙ্গেই কথা বলেছি। সবটা মিটে গিয়েছে।” বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কর্তৃপক্ষ কীভাবে চিকিৎসকের এই আচরণ মেনে নিলেন? এই প্রসঙ্গেই উঠে আসছে স্বাস্থ্যে অস্বাস্থ্যের করুণ ছবি।