কলকাতা: রাজ্যে চোখ রাঙাচ্ছে করোনার নতুন গ্রাফ। কিন্তু খামতি নেই উৎসব অনুষ্ঠানে। সম্প্রতি গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধের জন্য দাবি করেছে গেরুয়া শিবির। পদ্ম শিবিরের যুক্তি, করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় দিল্লি-সহ একাধিক রাজ্যে কড়া বিধিনিষেধ ও সতর্কতা জারি হয়েছে। তাহলে কেন বাদ থাকবে বঙ্গ? কোভিড-কাঁটায় কুম্ভ মেলাও বাতিল করা হয়েছে বলে জানান বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। তাহলে কেন গঙ্গাসাগর মেলা হচ্ছে?
পাল্টা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন গঙ্গাসাগরের মেলা সবার। কেউ যদি আসতে চান তাঁকে তিনি আটকাতে পারেন না। কোভিড প্রোটোকল মেনেই তীর্থযাত্রীরা মেলায় আসবেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এই দ্বৈরথেই পাল্টা দিলীপ ঘোষকে তোপ দাগলেন ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)।
রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রীর কথায়, “দিলীপবাবুকে বলব, আপনি একটু শুয়ে থাকুন। ঘুমোন বরং। আপনি বলেছিলেন ‘ইস বার দোসো পার’! তা তো আর হয়নি। তাই এখন আর কথা বলার দরকার নেই। তৃণমূল ২০০ পার করেছে, তাই তৃণমূল ঠিক করবে রাজ্যে কী হবে বা না হবে। মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত সচেতনভাবে গোটা বিষয়টি দেখছেন, সেখানে আর দিলীপ দা’র কথা শুনে রাজ্য চলবে না। মুখ্যমন্ত্রী যা নির্দেশ দেবেন আমরা সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। ”
গঙ্গাসাগর মেলায় ভক্ত সমাগমের জেরে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ঘটনায় দিলীপ ঘোষ মন্তব্য করেন, “কুম্ভ মেলা বন্ধ থাকল। তারপরেও কী করে গঙ্গাসাগর মেলা করা হচ্ছে! সংক্রমণ যে হারে তাতে চিন্তার কথা। আগে থেকে সতর্ক পদক্ষেপ করলে অনেক সমস্যা এড়ানো যায়।”
পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, তাঁর পক্ষে আচমকা মেলা বন্ধ করা সম্ভব নয়। যে তীর্থযাত্রীরা আসবেন তাঁরা কোভিড বিধি মেনেই আসবেন। কিছুদিন আগেই গঙ্গাসাগরে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ করে বলেছিলেন, কুম্ভমেলার জন্য কোটি টাকা ব্যয় করে কেন্দ্র। কিন্তু, গঙ্গাসাগরের উন্নয়নে কোনও অর্থসাহায্য আসেনি কেন্দ্রের তরফে। বারবার চিঠি লিখেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ করেন মমতা।
এদিকে, গঙ্গাসাগরে যাতে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়, তার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ করেছে সরকার। কোভিড পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে শুরু করে অ্যাম্বুলেন্স এমনকী দাহঘাটের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে গঙ্গাসাগরে।
জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মেলা চত্বরে ১৯১০ টি শয্য়া সম্পন্ন ১৩ টি হাসপাতাল, ৫ টি আইসোলেশন ওয়ার্ড, ২৩৫ টি শয্যা সম্পন্ন ৪ টি সেফ হোম, ৫০০ টি শয্য়া সম্পন্ন কোভিড হাসপাতাল, কাকদ্বীপ চত্বরে ৬ টি দাহঘাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই উট্রামঘাট আর গঙ্গাসাগর দ্বীপের মধ্যে ১৩টি হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে।
প্রত্যেক হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য থাকবে ২৫ টি অ্যাম্বুলেন্স। এ ছাড়াও থাকছে ৩টি ওয়াটার অ্যাম্বুল্যান্স ও ১টি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স। কোনও রোগী গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে প়ড়লে থাকবে গ্রিন করিডোরের ব্যবস্থাও। শিশুদের জন্য থাকছে ৯২ টি শয্য়ার ব্যবস্থা। কাকদ্বীপ ও রুদ্রনগর হাসপাতালেও করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষ শয্য়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে এখনই সাগরে নেমে স্নান করার ছাড়পত্র দেয়নি প্রশাসন। আপাতত ই-স্নানেই জোর দেওয়া হচ্ছে। সংক্রমণ প্রতিহত করতেই এই বিশেষ ব্যবস্থা বলে খবর সূত্রের।
আরও পড়ুন: ‘পদত্যাগ করা উচিত’, দাবি বিজেপির, হাইকোর্টে ভুল স্বীকার AG-র