
কলকাতা: জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার অভিযোগে মামলা তৃণমূলের। আর সেই মামলায় রাজ্যের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠল কলকাতা হাইকোর্টে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে ছিল মামলার শুনানি। গত ২৯ নভেম্বর বিধানসভায় তৃণমূলের বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। সেখানে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচির একেবারে শেষ পর্যায়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় শাসকদলের তরফে। এদিকে তখন বিধানসভার গাড়ি বারান্দায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বিজেপি বিধায়করা। অভিযোগ, সেখান থেকেই জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা করা হয়। এরপরই থানায় অভিযোগ, আদালতে মামলা। সেই মামলা চলাকালীন বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘দু’ পক্ষই স্লোগান দিচ্ছিল। সে সময় তারা কী করবে? কোথায় জাতীয় সঙ্গীত হচ্ছিল খেয়াল রাখবে? এখানেই জাতীয় সঙ্গীত অসৎ উদ্দেশে গাওয়া হয়েছিল কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। জাতীয় সঙ্গীত কি দেশকে সম্মান জানানোর জন্য গাওয়া হয়েছিল নাকি অপর পক্ষকে ফাঁসিয়ে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল?’
এদিন বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘আমার কাছে একটু মামলা এসেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে যে একজন সিআরপিএফ জওয়ান যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে বা অন্য কোথাও আক্রান্ত হয়ে ৯০ শতাংশ শারীরিক ক্ষমতা হারিয়েছেন। কিছুদিন আগে তাঁর বাড়িতে দুষ্কৃতী হামলা হয়। তাঁর মায়ের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের কাছে গেলেও এফআইআর দায়ের করা হয়নি। এখন তাঁরা আদালতে এসেছেন। সেখানে পুলিশ অভিযোগ করার পরই এফআইআর দায়ের করার প্রয়োজন মনে করল না। আর এখানে এফআইআর দায়ের হয়ে গিয়েছে। ভাল…। আপনারা মনে করেছেন দরকার, তাই করেছেন। আদালত বাকিটা খতিয়ে দেখবে।’
এদিন বিজেপির তরফে আইনজীবী সওয়াল করেন, ‘তৃণমূলের কর্মসূচি থেকে স্লোগাব ওঠে গলি গলি মে শোর হ্যায়, নরেন্দ্র মোদী চোর হ্যয়। তারপর হঠাৎ করেই জাতীয় সঙ্গীত শুরু হয়। এই দেখুন ভিডিয়ো।’ বিজেপির তরফে এদিন বলা হয়, আদালতের কাছে তাঁদের অনুরোধ, যদি জাতীয় সঙ্গীত যথাযথ ভাবে না গাওয়া হয়ে থাকে তাহলে যাঁরা গাইলেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এ নিয়ে এফআইআরও করা হয়েছে বলে বিজেপির তরফে জানানো হয়। একইসঙ্গে বলা হয়, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় কাঁসর-ঘণ্টা বাজানো হয়েছে।
বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘জাতীয় সঙ্গীতকে অস্ত্রের মত ব্যবহার করছেন কেন? একজনের কর্মসূচি বন্ধ করার জন্য জাতীয় সঙ্গীত গাইতে শুরু করে দিলেন? এটা কি জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সঠিক সময়?চিৎকার-চেঁচামেচির মধ্যে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হয়?’
উদাহরণ হিসাবে বিচারপতি বলেন, ‘মনে করুন এসএসসির যে ধরনা-বিক্ষোভ চলছে, সেখানে দু’টি অবস্থান মঞ্চ আছে। একটি অবস্থান মঞ্চের লোকদের পুলিশ তুলতে গেল, অপর মঞ্চের লোকজন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া শুরু করল। তাহলে কি পুলিশ দাঁড়িয়ে যাবে? প্রতিদিন স্কুলে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়। শুধু মন্ত্রী বা বিধায়কের এই অধিকার আছে তেমন নয়। কিন্তু সেটা যথাযথভাবে নিয়ম মেনে গাইতে হবে।’
এরপরই ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি বলেন, ‘আজকে আর কোনও মামলা শুনব না, শুধু এই মামলাই শুনব। এটা এত গুরুত্বপূর্ণ মামলা যে খুন-ধর্ষণের মামলা বাদ দিয়ে এটাই শুনতে হবে। প্রয়োজন হলে কালকেও শুধু এই মামলা শুনব, আর কোনও মামলা শুনব না।” আগামী ১০ জানুয়ারি ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে। অন্যদিকে এদিন আদালত নির্দেশ দেয় আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এ মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ থাকছে।