আবদুল মোতিন: আর অনলাইন নয়… অবশেষে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিল স্কুল-কলেজ খোলার। প্রায় ২ বছর পর ডেস্কে সহপাঠীর পাশে বসে পড়া বুঝে নেওয়ার পালা। তবে আমার ব্যক্তিগত মত, আরও অনেক আগে খোলা উচিত ছিল স্কুল- কলেজ। যদি আরও একটু বৈজ্ঞানিক ভাবে ভাবতাম আমরা, যদি আরও একটু বেশি করে পর্যালোচনা করতাম এই অতিমারি পরিস্থিতিকে।
আমরা দেখেছি, অনেক উন্নতশীল দেশ, যেখানে পরিকাঠামো ন্যূনতম, তারাও স্কুল-কলেজ খুলে দিয়েছে। তবে আমাদের দেশ তথা রাজ্যে স্কুল-কলেজ খোলার এই দেরির কারণ, আমার মতে, দুর্বল পরিকাঠামো। করোনা পরিস্থিতিই আসলে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সরকারি স্কুলগুলোর পরিকাঠামো কতটা অনুন্নত। তাই এত দেরি করে খুলল স্কুল-কলেজ। এদিকে আমোদ-প্রমোদের উপকরণ ও ক্ষেত্রগুলো থেকে কিন্তু আগেই ব্যারিকেড উঠে গিয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করা উচিত ছিল, দুর্ভাগ্যক্রমে হয়নি।
দীর্ঘ ২ বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ। এতগুলো দিন অনলাইন ক্লাসে পড়ুয়াদের কসরত করে শিখতে হয়েছে নতুন বিষয়, বুঝতে হয়েছে নতুন নতুন অধ্যায়। আবার এই পরিসরে স্কুলছুটের সংখ্যাও বেড়ছে বিশাল। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমি নিজে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দক্ষিণ ২৪ পরগণার মতো জেলার প্রান্তিক অঞ্চলে গিয়েছি নিজের ফিল্ডওয়ার্কে। সেখানে দেখেছি, মাঠ, ছোট দোকানে কাজ করছে খুদেরা। কারণ- অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা।
যে পরিবারে দুই থেকে তিনজন খুদে সদস্য রয়েছে, অনলাইন ক্লাসের জন্য তাদের সবার হাতকে ল্যাপটপ, ডেস্কটপ তো দূরের কথা, স্মার্টফোন দেওয়ার সামর্থ্য কি গরিব গ্রামীণ মানুষগুলোর আছে? তাই অতিমারিতে সবাই ঘরবন্দি হয়েছেন। আর ইত্যবসরে বেড়েছে হু-হু করে স্কুলছুটের সংখ্যা।
আর এটা ভেবে নেওয়াটাই হয়ত ধৃষ্টতা হবে যে, প্রাথমিক স্কুলগুলোর বাচ্চাগুলোর হাতে হাতে অনলাইন ক্লাসের জন্য স্মার্টফোন তুলে দিতে পারবেন বাবা-মা। ফলশ্রুতিতে যা ক্ষতি হওয়ার হয়েছে।
আমার নিজের মনে হয়েছে, একদম ছোট ক্লাস থেকে সপ্তম-অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের একটা বড় অংশের পড়াশোনায় কোপ ফেলেছে অনলাইন সিস্টেমে পড়াশোনা। অবশেষে যখন স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, সংক্রমণের দিকটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। তাই একসঙ্গে সব পড়ুয়াদের ক্লাসরুমে না ডেকে ব্যাচ করে পড়ানো যেতে পারে। সেদিকেই হয়ত এগোবে সরকার।
আমার মত, সকাল, দুপুর, বিকাল করে শিফট ভাগ করে হোক স্কুলের পড়াশোনা। তাছাড়া কমানো হোক ছুটির সংখ্যা। সরকারি ছুটির দিনগুলো কমিয়ে আরও গতি আনা হোক ক্লাসে বসে পড়াশোনার। শহুরে এলাকায় সান্ধ্য ক্লাসের আয়োজন করা হোক। এখন শিক্ষক মহলের কাছে বিশাল চ্যালেঞ্জ ন্যূনতম পরিকাঠামোয় পড়ুয়াদের শিক্ষাদান করা।