বছর কয়েক আগে এক অষ্টমীর সকালে তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল বর্ধমানের খাগড়াগড়। রাতারাতি লাইমলাইটে চলে এসেছিল রাজ্যের এই অখ্যাত জনপদ। জঙ্গিদেরই একটি ভুল সামনে এনেছিল বাংলায় জেএমবির কার্যকলাপ। নড়েচড়ে বসেছিলেন গোয়েন্দারা। শুরু হয় ধরপাকড়। ধরা পড়ে কওসর-সহ একাধিক মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি। এরপর থেকে এ রাজ্যে জেএমবি খানিকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র কোমর ভেঙে দেওয়া গিয়েছে। এমনটাই মনে করা হচ্ছিল। আর ঠিক তখনই ফের সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। সূত্রের খবর, দেশ জুড়ে জঙ্গি জাল ছড়াতে শুরু করেছে একাধিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। আর সেই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলার মাটিকে।
গোয়েন্দাদের হাতে সম্প্রতি যে তথ্য এসেছে তা ভয়ঙ্কর। এ রাজ্যকে কাজে লাগিয়েই নাকি জঙ্গি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে একাধিক বাংলাদেশি জঙ্গিগোষ্ঠী। শুধু তাই নয়, ভেঙে পড়া সংগঠনকে নতুন করে অক্সিজেন দিতে কাশ্মীরকে ব্যবহার করতে শুরু করেছে জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, গত দু’বছরে একাধিকবার কাশ্মীরে গিয়েছিলেন জেএমবি-র দুই শীর্ষ কর্তা। একজন সালাউদ্দিন সালেহিন ওরফে বড়ভাই আর অন্যজন আনোয়ারুল ইসলাম হৃদয়। সালাউদ্দিনই বর্তমানে জেএমবি প্রধান। আর আনোয়ারুল জামাত জঙ্গি গোষ্ঠীর ভারতীয় শাখার সামরিক প্রধান। গত কয়েক বছরে এ রাজ্যে জেএমবি জঙ্গি সন্দেহে যারা ধরা পড়েছে তাদের জেরা করেই এই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
সম্প্রতি হরিদেবপুর থেকে জেএমবি জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। তাঁদের জেরা করার পর সালাউদ্দিনের কাশ্মীর যোগ প্রকাশ্যে এসেছে। কলকাতা পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা তিন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেন। ধৃতরা হলেন নাজিউর রহমান পাভেল, মেকাইল খান এবং রবিউল ইসলামকে জেরা করতেই প্রকাশ্যে আসে তাদের জঙ্গি যোগ। জানা যাচ্ছে, আল কায়দা-পন্থী জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা আল আমিন। আর সেই আল আমিনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নাজিউর রহমান পাভেল। আল আমিন বাংলাদেশে গ্রেফতার হন। পরে নাম ভাঁড়িয়ে কলকাতায় আশ্রয় নেন পাভেল।
হাফিজুর রহমান ওরফে সালাউদ্দিন সালেহিন। বর্তমানে জেএমবির প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন সালাউদ্দিন। সংগঠনে ‘বড় ভাই’ নামে পরিচিত সালাউদ্দিন। ৪৯ বছর বয়সী সালাউদ্দিন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা।
গোড়া থেকেই জেএমবি-র সর্বোচ্চ কমিটির সুরার সদস্য তিনি। বাংলাদেশে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ৪০টি মামলা রয়েছে। তিনটি মামলায় সালাউদ্দিনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে। খাগড়াগড়ের পরই ভারতীয় গোয়েন্দাদের নজর পড়ে সালাউদ্দিনের ওপর। আলকায়দার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত সালাউদ্দিন। আইএসের সঙ্গে যোগযোগ রয়েছে ‘বড় ভাই’-এর। খাগড়াগড়, বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণ সহ ভারতের ৬টি মামলায় অভিযুক্ত সালাউদ্দিন। ২০১৮ সালে ভারত ও বাংলাদেশে জেএমবির দায়িত্বে আসে ‘বড় ভাই’। তারপরেই আলকায়দা সালাউদ্দিনের মাধ্যমে জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরিতে উদ্যোগী হয়।
গত আট বছরে বনগাঁ, উলুবেড়িয়া এবং মেটিয়াবুরুজে তিনবার গোয়েন্দাদের চোখে ধুলে দিয়েছেন সালাউদ্দিন। গোয়েন্দাদের দাবি, এ দেশেই গা-ঢাকা দিয়ে আছে ‘বড় ভাই’। বাংলা সহ পূর্ব ভারতে আল-কায়দার জাল ছড়ানোর মূল কারিগর। আলকায়দাকে রুখতে তাই বড় ভাইয়ের হদিশ পেতে মরিয়া ভারত এবং বাংলাদেশ, দু’দেশের গোয়েন্দারা।