
কলকাতা: রাজ্যের প্রথম সারির হোমিপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ। সেই ডিএন দে হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণকাজে ছাড়পত্র দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। কনভেন্ট লেনে স্বাস্থ্য দফতরের সেই প্রকল্পে বাধাদানের অভিযোগ উঠেছে কলকাতা পৌরনিগমের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যে প্রকল্পে সম্মতি দিয়েছিলেন, কাউন্সিলরের ‘বাধা’-য় এক বছর ধরে থমকে সেই ৫৮ লাখ টাকার প্রকল্প। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর।
ডিএন দে হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। মুখ্যমন্ত্রীর ‘সম্মতি’-র রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ডিএন দে হোমিপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের জন্য ৫৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। এই হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস হওয়ার কথা কনভেন্ট লেনে। আর সেই কাজই গত এক বছর ধরে থমকে রয়েছে। বিরোধীদের বাধায় নয়। কাজ থমকে শাসকদলের কাউন্সিলরের ‘বাধা’-য়।
তৃণমূল কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগ তুলেছেন ডিএন দে হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। একবার নয়, তিন-তিনবার কাউন্সিলরের অনুগামীদের বাধায় কাজ বন্ধ রেখেছে পূর্ত বিভাগ। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে আর্থিক মঞ্জুরির পর পূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় প্রকল্পের জমিতে সীমানা দেওয়াল তৈরির কাজ। কিন্তু বারবার বাধার সম্মুখীন হতে হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৬০ শতাংশ কাজ হওয়ার পর তা আটকে দেন কাউন্সিলরের অনুগামীরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে চলতি সপ্তাহে কাজ করতে গেলে একই অভিজ্ঞতা হয় পূর্ত বিভাগের। তৃণমূল কাউন্সিলরের বাধায় স্বাস্থ্য দফতরের প্রকল্প ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। নিরুপায় হয়ে স্বাস্থ্য ভবনের দ্বারস্থ দ্বারস্থ হয়েছে হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগপত্রে কাউন্সিলরের নির্দেশে স্থানীয়রা প্রকল্পের কাজে বাধা দিচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ডিএন দে হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কয়েকমাস আগে PWD আমাদের জানায়, স্থানীয় দুষ্কৃতীদের বাধায় কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমি লিখিতভাবে জানাতে বলি। তারপর কাজ শুরু হলেও আবার বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় কাউন্সিলর সহযোগিতা করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।” মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের কাজে অসহযোগিতা দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার। তিনি বলেন, “অভিযোগ যে কেউ তুলতে পারেন। প্রকল্প এলাকায় একটি শিশু উদ্যান রয়েছে। মতিঝিল এলাকার নিকাশি পরিকাঠামোও রয়েছে।” এই দুই কারণেই স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন বলে মত কাউন্সিলরের। অধ্যক্ষের অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের কাজ আটকে রাখার ক্ষমতা কি আমার রয়েছে?”
যদিও কাউন্সিলরের বক্তব্য ভিত্তিহীন বলে মত কলেজ কর্তৃপক্ষের। একবছর ধরে একাধিকবার আর্জি জানিয়েও সমস্যা সমাধানে কাউন্সিলর সক্রিয় হননি বলে কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি। কোন স্বার্থে স্বাস্থ্য দফতরের প্রকল্পে ‘অসহযোগিতা’ কাউন্সিলরের? প্রশ্নবাণে বিদ্ধ কলকাতা পৌরনিগমের তৃণমূল কাউন্সিলর।