কলকাতা: আর জি কর হাসপাতালের (R G Kar Hospital) দেহ কাঁটাছেড়া বিতর্কে আর নতুন তথ্য। টিভি নাইন বাংলার হাতে এল আর জি করের বিতর্কিত দেহগুলির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। এই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে আরও জোরালো হচ্ছে দেহগুলিকে কর্মশালায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ। অভিযোগ উঠেছে, ময়নাতদন্তের জন্য আনা পাঁচটি দেহ আর জি করের ইএনটি বিভাগের কর্মশালায় কাঁটাছেড়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আর সেই পাঁচটি দেহের মধ্যে চারটির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট একমাত্র টিভি নাইন বাংলার হাতে। কী এমন রয়েছে সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে?
দেখা যাচ্ছে, চারটি ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই আঘাতের জায়গায় একই ধরনের কথার উল্লেখ রয়েছে। প্রত্যেকটি দেহে নাকের দু’টি ফুটোর উপরের দিকে ০.১ ইঞ্চির ক্ষত রয়েছে। প্রতিটি ক্ষত থেকেই হলদে রঙের তরল বেরিয়েছে। সঙ্গে রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যখন এই ক্ষত হয়েছে, তখন শরীরে কোনও ভাইটাল রিঅ্যাকশন দেখা যায়নি। অর্থাৎ, এই ক্ষতের বিষয়টি শরীর টের পায়নি। আর এই চারটি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকেই আরও স্পষ্ট হচ্ছে আর জি করের ইএনটি কর্মশালায় দেহগুলি ব্যবহার করার তত্ত্ব।
প্রথমত, প্রতিটি দেহেই একই ধরনের ক্ষত। নাকের ছিদ্রের উপরের দিকে। খুবই সূক্ষ্ম ক্ষত। ০.১ ইঞ্চির। আর যে কর্মশালাটি নিয়ে এত বিতর্ক, সেটিও নাক-কান-গলা বিভাগেরই। দ্বিতীয়ত, রিপোর্টে বলা হচ্ছে হলদে রঙের ক্ষরণের কথা। সাধারণভাবে কোথাও কেটে গেলে, বা ক্ষত তৈরি হলে যে রক্ত বেরোয়, তা লাল রঙের হয়। তাহলে কি মৃত্যুর পরে এই ক্ষতগুলি তৈরি হয়েছিল? সেই প্রশ্নটিও আরও জোরালো হচ্ছে। তৃতীয়ত, যখন এই ক্ষতগুলি তৈরি হয়েছিল, তখন শরীরে তার কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ফলে আরও স্পষ্ট হচ্ছে, মৃত্যুর পর ক্ষতের তত্ত্ব। এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে, খোদ আর জি কর হাসপাতালের পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে।
চমকে দেওয়ার মতো তথ্য আরও রয়েছে। যে চারজনের ময়না তদন্তের রিপোর্ট টিভি নাইনের হাতে এসেছে, তাদের মধ্যে দুইজন ৩ জানুয়ারি পথ দুর্ঘটনায় জখম হয়েছিল। ৪ জানুয়ারি মৃত্যু হয়েছিল। একজন অসুস্থ হয়ে ৪ তারিখ ভর্তি হয়েছিল আরজি করে, সেই দিনই মৃত্যু হয়। অপর জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। অর্থাৎ, প্রতিটি দেহের সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর কোনও মিল নেই। কিন্তু তাও কেন নাকের উপরে উভয় পাশে একই ধরনের ক্ষত চারটি দেহ? যে অভিযোগ উঠছে, এই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তা আরও জোরালো হচ্ছে বলেই মনে করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ শোভন দাস।
ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অজয় গুপ্ত এই ময়নাতদন্তের রিপোর্টের বিষয়ে ব্যাখ্যা, প্রতিটি ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে প্রথম আঘাতের কথায় উল্লেখ রয়েছে ০.১ ইঞ্চির একটি ক্ষত। সঙ্গে এটিও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এতে কোনও ভাইটাল রিঅ্যাকশন নেই। যাঁদের ক্ষেত্রে অন্যান্য আঘাত রয়েছে, সেগুলির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ভাইটাল রিঅ্যাকশন আছে। তার মানে ওই আঘাতগুলি যখন জীবিত ছিল, তখন হয়েছিল। অর্থাৎ, মৃতদেহের মধ্যে কিছু একটা করা হয়েছে এবং সেটি নাকের মধ্যে দিয়ে করা হয়েছে। সেই কারণেই নাকের ছিদ্রের দুই দিকে এটি রয়েছে। অর্থাৎ, মৃতদেহের নাকে একটি বিশেষ ধরণের পরীক্ষা করা হয়েছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টগুলির মধ্যে দুটিতে লেখা রয়েছে পোস্টমর্টেম ইনজুরির কথা। সেই বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, মৃতদেহের উপরে এই দুটি আঘাত করা হয়েছে। অর্থাৎ, পোস্টমর্টেমে যখন এসেছে, তখন সেই ইনজুরি ছিল সেখানে।
ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো দেহ আর জি করের ইএনটি বিভাগের কর্মশালায় ব্যবহারের অভিযোগ সবার আগে প্রকাশ করেছিল টিভি নাইন বাংলা। লাগাতার এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টিভি নাইন বাংলা। উঠে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। উঠে এসেছে আর জি করের ডোমের বক্তব্য। সেখানে হাটে হাঁড়ি ভেঙে গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, পাঁচ জানুয়ারি সকাল আটটায় পাঁচ দেহ পৌঁছে গিয়েছিল নাক-কান-গলা বিভাগের প্রশিক্ষণ শিবিরে!
কিন্তু ফরেন্সিকের বিভাগীয় প্রধান বা অধ্যক্ষ, কেউই কিছু স্বীকার করছেন না। ফরেন্সিকের বিভাগীয় প্রধান জবাব দেওয়ার দায় ঠেলছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকে। আর অধ্যক্ষকে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে এই বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছিলেন। ক্যামেরার সামনে কিছু না বললেও প্রাথমিকভাবে তাঁর বক্তব্য ছিল, এমন কিছু ঘটেছে বলে তাঁর জানা নেই। পরে অবশ্য অধ্যক্ষের থেকে স্বাস্থ্যভবন জবাব চাইলে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ডিএমই, হেলথ সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলে তারপর তিনি এই বিষয়ে মন্তব্য করবেন।