কলকাতা: টিভি নাইন বাংলার নক্ষত্র সম্মানের সন্ধেয় আজ শহরে তারার মেলা। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের জন্য সম্মানিত করা হচ্ছে বাংলার বিভিন্ন বিশিষ্টজনকে। তারায় ভরা এই সন্ধে আরও আলোয় ভরিয়ে তুলেছেন টিভি নাইন নেটওয়ার্কের এমডি বরুণ দাস। টিভি নাইন বাংলার নক্ষত্র সম্মানের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় আজ বার বার তিনি জোর দিয়েছেন নারী ক্ষমতায়নের দিকে। সামনেই দুর্গাপুজো। বাঙালির প্রাণের উৎসব। নারী ক্ষমতায়নের কথা বলতে বলতে তাঁর মুখে উঠে এল দেবী দুর্গার কথাও। মনে করিয়ে দিলেন, দেবী দুর্গা এখানে শুধু মাতৃরূপে পূজিতা হন না, শক্তি রূপেও পূজিতা হন।
টিভি নাইন বাংলার এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে বুধবার সন্ধেয় থাকার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি আজ থাকতে পারেননি। আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে টিভি নাইন নেটওয়ার্কের এমডি বরুণ দাসের। মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি। তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। নক্ষত্র সম্মানের সন্ধেয় বক্তব্য রাখার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাও বলেন টিভি নাইন নেটওয়ার্কের এমডি বরুণ দাস। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী দিনে বাংলাই গোটা দেশকে পথ দেখাবে। বললেন, “আমরা আশা করি, বিশ্ব আঙিনায় যখন ভারতের উত্থান হচ্ছে, তখন বাংলা আবারও গোটা দেশকে দিশা দেখাবে। আর অনুপ্রেরণার ক্ষেত্রে যাঁর কথা না বললেই নয়, তিনি আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। দেশের ২৮টি প্রদেশের মধ্যে এই মুহূর্তে তিনিই একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী।” শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও সকলকে উৎসাহিত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
সমাজে মহিলাদের গুরুত্ব কতটা, তাও এদিন নক্ষত্র সম্মানের সন্ধেয় তুলে ধরলেন টিভি নাইন নেটওয়ার্কের এমডি বরুণ দাস। ব্যক্তিগতভাবে নারী ক্ষমতায়নকে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, সমাজে এখনও মহিলাদের পেশাগত সাফল্যকে তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। বললেন, “আজও একজন মহিলার সাফল্য বিচার করা হয় তিনি কতটা ভাল মা, মেয়ে অথবা স্ত্রী… সেই নিরিখে। তাঁর পেশাগত সাফল্যের দিকটা অনেকটাই পিছনের সারিতে থাকে।” তবে বাঙালি সমাজে মহিলাদের যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাতে একজন বাঙালি হিসেবে সবসময় গর্ববোধ করেন টিভি নাইন নেটওয়ার্কের এমডি বরুণ দাস। বললেন, “শুধু মহিলাদের সম্মান দেওয়ার দিক থেকেই নয়, আরও অনেক ক্ষেত্রেই দেশের অন্য যে কোনও প্রান্তের থেকে বাংলায় প্রগতিশীল মনোভাব রয়েছে।” নক্ষত্র সম্মানে বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেন, “আজকের সন্ধেয় আমরা এমন পাঁচজন অসামান্যাকে সম্মান জানাব, যাঁরা বাস্তবের দুর্গা। তাঁরা অন্য দুর্গা।”
একইসঙ্গে উচ্চাশা ও লোভের ফারাকও বোঝালেন তিনি। টিভি নাইন নেটওয়ার্কের এমডি বরুণ দাসের মতে, আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় বাণিজ্য, চাকরি, মাথা পিছু আয়, পরিবারের স্বাচ্ছল্য… প্রতিটিই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি মনে করেন, আজকের দিনে বাঙালিরা অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চাশার পিছনে ছুটছে না। এর একটি বড় কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, বাঙালির কাছে সম্ভবত উচ্চাশা ও লোভ সমার্থক হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই দু’টি যে সমার্থক নয়, সেই কথাই আজ টিভি নাইন বাংলার নক্ষত্র সম্মানের অনুষ্ঠানে বোঝালেন তিনি। তাঁর মতে, “উচ্চাশা পূরণ করার জন্য যদি যোগ্যতা ও কঠোর পরিশ্রম না থাকে, তাহলে সেটা লোভে পরিণত হয়। বড় চাকরি, বিরাট লাভ, সম্পত্তির পিছনে ছোটা… এগুলি লোভ নয়, যদি সেই প্রচেষ্টার পিছনে থাকে যোগ্যতা এবং পরিশ্রম। এর সঙ্গে চাই নিজের উপর বিশ্বাস ও অনুপ্রেরণা।”
নক্ষত্র সম্মানের অনুষ্ঠানে স্বামী বিবেকানন্দের ভাবধারার কথাও তুলে ধরেন তিনি। যে কোনও কাজের ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস যে কতটা জরুরি তা বোঝানোর জন্য স্বামী বিবেকানন্দের একটি উদ্ধৃতির কথা বলেন টিভি নাইন নেটওয়ার্কের এমডি বরুণ দাস। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘পুরনো ধর্মমতে নাস্তিক বলতে বোঝায়, যিনি ভগবানে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু নতুন ধর্মমতে, যাঁর নিজের উপর বিশ্বাস নেই, সেই নাস্তিক।’ স্বামী বিবেকানন্দের সেই মতাদর্শের কথাও এদিন নক্ষত্র সম্মানের সন্ধেয় মনে করিয়ে দিলেন তিনি।