কলকাতা: এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে আর বাড়ি ফিরতে পারলেন না পরিচালক তরুণ মজুমদার। পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত এই চিত্র পরিচালক সোমবার সকালে প্রয়াত হন। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি কিডনি এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন। ১৪ জুন তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হতেই তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। মাঝে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। সম্প্রতি ফের অবস্থার অবনতি হয়। এর পরই সোমবার মৃত্যু হল এই প্রবীণ পরিচালকের।
বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এই প্রবীণ পরিচালকের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৩১ সালের ৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার বগুড়ায় জন্ম তরুণের। বাবা বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তরুণের পড়াশোনা কলকাতাতেই। ১৯৫৯ সালে প্রথম পরিচালনা করেন তিনি। এর পর একের পর এক কালজয়ী ছবি পরিচালনা করেছেন তিনি। তার মধ্যে পলাতক, নিমন্ত্রণ, সংসার সীমান্তে, গণদেবতা ছিল অন্যতম। তাঁর পরিচালিত ভালবাসা ভালবাসা, দাদার কীর্তির মতো সিনেমাগুলি সে সময় প্রবল জনপ্রিয় হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে।
তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে টুইট করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী এবং শ্রীজিৎ মুখার্জি।
Black day for the entertainment industry as Padma Shri #TarunMajumdar bid us his final goodbye. An ineffable loss. May he rest in peace and power. pic.twitter.com/tGHUDIPdIy
— Raj chakrabarty (@iamrajchoco) July 4, 2022
The last of the constellation which had Ray,Ghatak,Sen & Sinha, who cracked the rare alchemical code of box office, film festival & awards glory regularly leaves us today. Nimontron, Shreeman Prithviraj, Shongshar Shimaante,Pawlatok, Thogini – travel well, Legend. #TarunMajumdar
— Srijit Mukherji (@srijitspeaketh) July 4, 2022
এসএসকেএম থেকে এনটিওয়ান স্টুডিয়োয় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল প্রয়াত চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদারের দেহ। সেখান থেকে দেহ দানের জন্য ফের এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে তাঁর দেহ। হাসপাতালের মর্গেই দেহ গ্রহণ করেছেন চিকিৎসকরা। পরিচালকের ইচ্ছা মেনে তাঁর চক্ষুও দান করা হয়েছে। গণদর্পণের কর্মীদের উপস্থিতিতে পরিচালকের চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে বের করা হল প্রয়াত চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদারের দেহ। এনটি ওয়ান স্টুডিয়োয় নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর দেহ। সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন চিত্র জগতের মানুষরা। হাসপাতাল থেকে বের করে সিপিএমের পতাকা দেওয়া হয়েছিল তাঁর মরদেহের উপরে। বুকের উপরে রাখা হয়েছিল গীতাঞ্জলি।
তরুণ মজুমদারের মৃত্যুতে শোকাহত অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। চিত্র পরিচালকের প্রয়ানে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “হারালাম এক কিংবদন্তি পরিচালককে… হারালাম এক অতুলনীয় মানুষকে… হারালাম আমার শিক্ষককে।” পরিচালকের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন তিনি।
তরুণ মজুমদারের মৃত্যুতে বাংলার সমাজ জীবনের ক্ষতি হল বলে মত সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর। তিনি বলেছেন, “সংস্কৃতি জগতে ইন্দ্রপতন। তরুণ মজুমদারের ছবি মানুষের বিবেকের কাজ করেছে। শুধু শিল্পজগতের নয়, বাংলার সমাজ জীবনের বড় ক্ষতি। তাঁর প্রয়াণে আমরা গভীর শোকাহত।”
তরুণ মজুমদারের প্রযাতে শোকজ্ঞাপন করলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তিনি বলেছেন, “ভারতীয় সিনেমাকে অন্য মাত্রা দিয়েছেন তিনি। কোনও গল্পের পারিবারিক গভীরতা কতটা হতে পারে, প্রেমকে কী ভাবে দেখাতে তা উনি শিখিয়েছিলেন। উনার সঙ্গে তিনটি ছবি করতে পেরে আমি ভাগ্যবান। সেই তিনটি ছবিই মানুষের মনের মধ্যে রয়েছে গিয়েছে।”
চিত্র পরিচালকের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, “উনার বালিকা বধূ ছবি আমি ১৮ বার দেখেছি। উনি যা দিয়ে গিয়েছেন তা নিয়ে আমাদের অনেক দিন চলবে।”
“মানুষটাকে দেখেছি অত্যন্ত কাছ থেকে। আদ্যপান্ত সহজ সরল একজন মানুষ। কাজের প্রতি এত নিষ্ঠা ভালবাসা আর ক’জনের আছে? কাজ ছাড়া অন্য কিছুই চিন্তা করতে দেখিনি কোনওদিন। শুধু কাজ আর কাজ… আর একের পর এক শিল্পী তৈরি করা। জীবনের অনেক মুহূর্ত কেটে গিয়েছে এভাবেই। খাওয়াদাওয়া, আনন্দ করা কিছুই ছিল না তাঁর জীবনে। শুধু কাজ আর কাজ… সারাজীবন ধরে শুধু কাজ করেই গেলেন তিনি। বিগত বেশ কিছু বছরে সেই কাজের ঢেউ বদলে গেল। তাই হয়তো কম অফার পেয়েছেন। আমি আশা করিনি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন। আমি আর কিছু বলতে পারছি না… আর কিছু বলার নেই আমার… উনি আর নেই!”
তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। প্রয়াত পরিচালকের পরিবারের লোকদের সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
Saddened to learn about the demise of Veteran Bengali Filmmaker #TarunMajumdar. His classics like Dadar Kirti, Balika Badhu are eternally imbibed in our hearts and earned him 4 National Awards & Padma Shri in 1990.
Prayers and condolences to the bereaved family and his fans. RIP
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) July 4, 2022
এসএসকেএম থেকে প্রয়াত পরিচালকের দেহ নিয়ে যাওয়া হবে এনটি ওয়ান স্টুডিয়োয়। সেখান থেকে তরুণ মজুমদারের দেহ ফের নিয়ে আসা হবে এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানেই দেহদাহ করা হবে। গণদর্পণের কর্মকর্তা শ্যামল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রয়াত পরিচালকের দেহ দান করা হবে।
প্রয়াত পরিচালকের মৃত্যুর পর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের তরফে গান স্যালুটের প্রস্তাব দেওযা হয়েছিল। কিন্তু পরিচালকের পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, মৃত পরিচালকের এ সবে মত ছিল না। সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানাতেই হবে না গান স্যালুট।
প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার চাইতেন না তাঁর মৃত্যুর পর দেহে ফুল, মালা দেওয়া হোক। তাঁর সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েই ফুল মালা দেওয়া হবে না দেহে।
মৃত্যুর আগে দেহদানের অঙ্গীকার করেছিলেন তরুণ মজুমদার। দেহদানের পাশাপাশি চক্ষুদানেরও অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি। সেই মতো প্রয়াত পরিচালকের দেহ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে এসএসকেএম হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগ। তবে দেহদান করতে গেলে মৃতের পরিবারের লোকের সম্মতি লাগে। পরিচালকের পরিবারের লোকেদের থেকে সেই সম্মতি পেলেই দেহ গ্রহণ করবে এসএসকেএম হাসপাতাল। পাশাপাশি তাঁর কর্নিয়া সংগ্রহের প্রস্তুতিও নিচ্ছে এসএসকেএম হাসপাতাল।
চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদারের মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়াত পরিচালকের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তরফে প্রকাশ করা শোকবার্তায় লেখা হয়েছে, “বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।ভিন্নধারার রুচিসম্মত সামাজিক চলচ্চিত্র নির্মাণে তরুণ মজুমদার উজ্জ্বল নিদর্শন রেখে গিয়েছেন। তাঁর ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রয়োগ দর্শককে আবিষ্ট করে রাখে। তরুণ মজুমদার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র, ‘বালিকা বধূ’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’, ‘সংসার সীমান্তে’, ‘গণদেবতা’, ‘শহর থেকে দূরে’, ‘পথভোলা’, ‘চাঁদের বাড়ি’, ‘আলো’ ইত্যাদি উল্লেখের দাবি রাখে।” সেই শোকবার্তায় লেখা হয়েছে, “তাঁর প্রয়াণ চলচ্চিত্র জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমি তরুণ মজুমদারের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।”