কলকাতা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এ এক রেকর্ড সাফল্য। এই প্রথমবার ভবানীপুরের সব ক’টি ওয়ার্ড নিজেদের দখলে রাখল তৃণমূল। ২০১১ সাল, ২০১৬ সাল কিংবা ২০২১ সাল… সুব্রত বক্সি থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কিংবা মাস খানেক আগে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, কেউই এতদিন ভবানীপুরের সবকটি ওয়ার্ডে লিড তুলতে পারেননি। আজকের সাফল্যে তাই তৃণমূল সুপ্রিমো নিজেও আবেগাপ্লুত।
জয়ের পর প্রথম বক্তব্যতেই তাই মমতার গলায় শোনা গেল, “এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কোনও ওয়ার্ডের মানুষ আমাদের হারাননি। ২০১৬ সালেও আমি একটি দুটি ওয়ার্ডে ভোট কম পেয়েছিলাম। এবার একটি ওয়ার্ডেও ভোট কম পাইনি।”
ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে মোট আটটি ওয়ার্ড রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র হল‘মিনি ভারত’। কারণ, গোটা ভারতে যে ধরনের ভাষাভাষি মানুষদের বৈচিত্র দেখা যায়, ঠিক একই ধরনের বৈচিত্র দেখতে পাওয়া যায় ভবানীপুরেও। এখানে বাঙালি হিন্দু ভোটারদের হার ৪২ শতাংশ। অবাঙালি হিন্দু রয়েছেন ৩৪ শতাংশ। এবং মুসলিম অর্থাৎ সংখ্যালঘু ভোটারদের হার ২৪ শতাংশ।
এবারের ভোটে আটটি ওয়ার্ডের কোথায় কতটা ভোট পেলেন মমতা? ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মমতা লিড পেয়েছেন ২৩৬৬ ভোটে। ৭০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এগিয়ে ছিলেন ১৫৫৬ ভোট। ৭১, ৭২, ও ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে যথাক্রমে ৬০৯৯, ৩৫০০ এবং ৫৮৮৯ ভোটে এগিয়ে ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে লিড ছিল ৪৯৭৯ ভোটের। ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ২১৬৭৯ ভোটের ব্যবধান রেখেছিলেন মমতা। আর ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ব্যবধান ছিল ১২ হাজারেরও বেশি। অর্থাৎ সবকটি ওয়ার্ড থেকেই জিতে নবান্নে বসতে চলেছেন মমতা।
২০১৪ সাল থেকেই বিজেপি টানা লিড নিয়ে এসেছিল ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে। ২০১৪ সাল থেকে এই একটি মাত্র ওয়ার্ডে কখনই কোনও নির্বাচনে পিছিয়ে থাকেনি বিজেপি। এমনকী, গত বিধানসভা নির্বাচনেও এখান থেকে বিজেপি এগিয়ে ছিল। কিন্তু উপনির্বাচনে মমতা এখানে প্রার্থী হতেই সব হিসেব-নিকেশ কার্যত উল্টে গেল।
বিজেপিকে বড় ধাক্কা দিয়েছে ভবানীপুরের ৬৩ নম্বর, ৭৪ নম্বর ও ৭১ নম্বর ওয়ার্ড। ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে অবাঙালি আধিপত্য বেশি। মোট ভোটারদের মধ্যে ৫০ শতাংশ এই ওয়ার্ডে অবাঙালি। কিন্তু এখানেও খুব একটা সুবিধা করতে পারল না বিজেপি নেতৃত্ব।
যদিও বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হচ্ছে, ছাপ্পা দিয়েই এই ফল পেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তবে বিজেপি যাই বলুক, আপাতত সেসবে কর্ণপাত করতেই চান না মমতা। তাই বলতে শোনা গেল, “ভবানীপুর জায়গাটা ছোট, কিন্তু বৃত্তটা অনেক বড়। ভবানীপুরের মানুষ আজ দেখিয়ে দিল। সারা বাংলা আজ ভবানীপুরের দিকে তাকিয়ে ছিল।”