
কমলেশ চৌধুরী ও সৌভিক সরকারের ইনপুট
কলকাতা: একের পর এক দুর্যোগ। কখনও নিম্নচাপ, কখনও ঘূর্ণাবর্ত বা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব। বাংলার পিছু ছাড়ছে না বৃষ্টি। নভেম্বরেও খুব একটা শীতের আমেজ বুঝতে পারবেন না, এমনটাই পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অফিস। শীতের জন্য ডিসেম্বর পর্যন্তই অপেক্ষা করতে হবে। আপাতত দুর্যোগের হাত থেকে রেহাই মিললেও, নিম্নচাপের প্রভাবে আজও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২১-২২ সালেও অক্টোবর মাসে রাতের দিকে তাপমাত্রা ১৮-১৯ ডিগ্রিতে নেমেছিল। তবে এবার গোটা অক্টোবরটাই কেটে গিয়েছে বৃষ্টিতে। ১৫ বছরে এত উষ্ণ অক্টোবর দেখেনি কলকাতা। নভেম্বরেও ভাল ঠান্ডা পরার আশা নেই। এমনটাই পূর্বাভাস মৌসম ভবনের।
আলিপুর আবহাওয়া অফিসের তরফে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে নিম্নচাপের প্রভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হবে রাজ্যে। আপাতত দক্ষিণবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের দিকে সরছে নিম্নচাপ। রবিবার-সোমবার-মঙ্গলবার রাজ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। তবে উত্তরবঙ্গে দুর্যোগের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে উত্তরবঙ্গে। ধসের আশঙ্কা পার্বত্য এলাকায়। জলস্তর বাড়ছে নদীরও। এর জেরে নিচু এলাকা প্লাবিত হবার আশঙ্কা। বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা বাংলা বেশিরভাগ জেলাতেই।
ঘূর্ণিঝড় মান্থার অবশিষ্ট অংশ নিম্নচাপ রূপে ঝাড়খণ্ড থেকে বিহারের দিকে সরছে। পশ্চিমবঙ্গে এর প্রভাব থাকবে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় এই নিম্নচাপ আরও দুর্বল হয়ে শক্তি হারাবে। অন্যদিকে, আগামিকালের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে নতুন নিম্নচাপের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। পূর্ব-মধ্য আরব সাগরেও নিম্নচাপ শক্তিশালী হবে। গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়ে এই সিস্টেম গুজরাট উপকূলে অবস্থান করছে। এর ল্যান্ডফলের সম্ভাবনা কম। হরিয়ানা ও রাজস্থানে ঘূর্ণাবর্ত ঘনীভূত হয়েছে। অসমে রয়েছে আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত।
আগামী ৫ ও ৬ নভেম্বর উপকূলে হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাতের তাপমাত্রা কমার আশা নেই। তবে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে উত্তরবঙ্গে। গত ২৪ ঘণ্টায় জলপাইগুড়িতে বৃষ্টি হয়েছে ১৬৯ মিলিমিটার, মালদহে ১২০ মিলিমিটার, আলিপুরদুয়ারে ১০৩ মিলিমিটার ও বাগডোগরায় ৯২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
আজ কলকাতায় মেঘলা আকাশ থাকবে। বজ্রবিদ্যুৎ সহ বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দুপুর পর্যন্ত। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামিকাল থেকে রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ থাকতে পারে। সোমবার থেকে আবার শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে। আজ দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকবে ২৬.৮ ডিগ্রি। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১.৮ ডিগ্রি। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা থাকবে ৬৮ থেকে ৯০ শতাংশ।
আলিপুর আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী,শনিবার ও রবিবার বজ্রবিদ্যুৎ সহ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গে। সোমবার ও মঙ্গলবার আবার শুষ্ক আবহাওয়া; পরিষ্কার থাকবে আকাশ। বুধবার থেকে বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়বে।
আজ দক্ষিণবঙ্গে আংশিক মেঘলা আকাশ থাকবে। বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা কয়েকটি জেলাতে। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, কলকাতা, হাওড়া, নদিয়াতে বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি। সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইবে।
রবিবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হবে কিছুটা। কমবে বৃষ্টির পরিমাণ। তবে বেশিরভাগ জেলাতেই আংশিক মেঘলা আকাশ ও বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা বৃষ্টি দুয়েক পশলা হতে পারে। সোমবার ও মঙ্গলবার পরিষ্কার আকাশ থাকবে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমবে। বৃষ্টির সম্ভাবনা কার্যত নেই।
বুধবার ও বৃহস্পতিবারে ফের বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উপকূলের জেলাগুলিতে। বুধবার বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি থাকবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। বৃহস্পতিবার বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়বে উত্তর ও দক্ষিণ উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়।
গত কয়েকদিনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিতে কার্যত বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। সপ্তাহান্তেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। রবিবারেও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হবে। সোমবার থেকে আবহাওয়া বদলাবে উত্তরবঙ্গে।
আবহাওয়া অফিস আজ উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। আজ শনিবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলাতে। বাকি জেলাতেও বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দমকা বাতাস বইতে পারে।
রবিবার উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইবে। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে। আকাশ পরিষ্কার থাকবে।