তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় ফের চাঁদের হাট, সায়নী-কাঞ্চন-রাজ কে কোন কেন্দ্রে?

একুশের নির্বাচনে (West Bengal Assembly Election 2021) তৃণমূলের (TMC) প্রার্থীতালিকায় রয়েছেন প্রায় এক ডজন তারকা প্রার্থীর নাম। রয়েছেন রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty) , সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (Sayantika Banerjee) , সায়নী ঘোষ (Saayoni Ghosh), কাঞ্চন মল্লিক (Kanchan Mullick)

তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় ফের চাঁদের হাট, সায়নী-কাঞ্চন-রাজ কে কোন কেন্দ্রে?
গ্রাফিক্স- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Mar 05, 2021 | 6:11 PM

কলকাতা: ভোটমুখী বাংলায়(West Bengal Assembly Election 2021)  সর্বপ্রথম প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের এই তালিকায় নবীণ-প্রবীণ এবং মহিলাদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। তবে বরাবরের মতোই ঘাসফুল প্রার্থী তালিকায় এবার বিশেষভাবে নজর কেড়েছে রাজনীতিতে নবাগত তারকাদের উপস্থিতি। এই তালিকায় রয়েছেন প্রায় এক ডজন তারকা প্রার্থীর নাম।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কোন তারা কোথায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন

সায়নী ঘোষ: আসানসোল দক্ষিণ রাজ চক্রবর্তী: বারাকপুর জুন মালিয়া: মেদিনীপুর সদর কাঞ্চন মল্লিক: উত্তরপাড়া লাভলী মৈত্র: সোনারপুর দক্ষিণ বিদেশ বসু: উলুবেড়িয়া পূর্ব মনোজ তিওয়ারি: শিবপুর সোহম চক্রবর্তী: চণ্ডীপুর কৌশানি মুখোপাধ্যায়: কৃষ্ণনগর উত্তর সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়: বাঁকুড়া অদিতি মুন্সি: রাজারহাট-গোপালপুর।

কিছুদিন আগেই সাহাগঞ্জের ময়দানে মমতার মেগা সভায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন সায়নী ঘোষ (Saayoni Ghosh) , কাঞ্চন মল্লিক (Kanchan Mullick), রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty), সূদেষ্ণা রায় প্রমুখেরা। একুশের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে এবার তাঁদের অনেককেই প্রার্থী করা হল। এই তালিকায় বিশেষ নজরে থাকছেন সায়নী। সম্প্রতি টিভি চ্যানালে সায়নীর একটি মন্তব্য ও সোশাল মিডিয়ার পুরানো একটি পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। এমনকী সায়নীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁকে নানা হুমকির শিকার হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ। এমতাবস্থায় সায়নী ঘোষ, দেবলীনা দত্তের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, অভিনেতা দেবলীনা দত্তও টিভি চ্যানেলে একটি মন্তব্য করে গেরুয়া শিবিরের রোষানলে পড়েছেন। এরপর সায়নীর তৃণমূলে যোগদান ও প্রার্থী হওয়া নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।

অন্যদিকে, ঘরের মাটি বারাকপুর বিধানসভা কেন্দ্রে লড়তে চলেছেন হালিশহরের ছেলে রাজ চক্রবর্তী। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ভেবেচিন্তেই বাংলা সিনেমার এই ‘হিট পরিচালক’কে বারাকপুর থেকে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেত্রী। রাজের বড় ফ্যান ফলোয়ার্স রয়েছে এই শহুরে এলাকায়। অরপ্জুন সিং-এর প্রভাব থাকা এই বলয়ে একটু অন্য ছকে খেলতে চেয়েছে তৃণমূল, আর সে জন্যই প্রার্থী করা হয়েছে রাজ চক্রবর্তীকে। রাজের তরুণ মুখ কাজে লাগিয়ে ‘জেন ওয়াই’-এর বড় অংশের ভোট ঝুলিতে পুরতে চাইছ তৃণমূল। টিকিট পেয়ে আত্মবিশ্বাসী রাজ এদিন বলেন, “বারাকপুরের ওলিগলি আমি চিনি। আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা, বারাকপুর নৈহাটি এলাকায়। আমি জানি ওখানকার মানুষদের সমস্যা কী। আমাকে তারকা প্রার্থী ভাববেন না। আমাকে সাধারণ একজন প্রতিনিধি ভাবুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালন করব। সবাইকে নিয়ে কাজ করব। এলাকাকে সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে গড়ে তুলব।” এরপরই নেত্রীকে রাজের প্রতিশ্রুতি, “দিদি আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি বারাকপুর সিট জিতিয়েই তোমাকে উপহার দেব।”

এদিকে, বৃহস্পতিবারই তৃণমূলে যোগ দিয়েই নির্বাচনের টিকিট পেয়ে গিয়েছেন ‘রাই কিশোরী’ অদিতি মুন্সি। তিনিও এবার রাজারহাট গোপালপুরের প্রার্থী। দলে যোগ দিয়েই প্রার্থী তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বঙ্গ রাজনীতিতে এটাই এখন ট্রেন্ডিং।

সোহম চক্রবর্তী (Soham Chakraborty) গত বারের নির্বাচনে বড়জোড়া কেন্দ্র থেকে পরাজিত হয়েছিলেন। এবারও দাঁড়াচ্ছেন তিনি। তবে কেন্দ্র বদলে হয়েছে চণ্ডীপুর। সোহম বলেন, “এখন আমার পুরো সময়টাই ভোটের জন্য রেখেছি। গতবারও আমি যেটা বলেছিলাম, আবারও বলছি। মানুষ যদি আমাকে গ্রহণ করে নেন, তাহলে কাজ করব তাঁদেরই জন্য।”

অন্যদিকে, হাওড়ার শিবপুরে যেখানে বিজেপির তরফে রুদ্রনীল ঘোষকে (Rudranil Ghosh) দাঁড় করানোর কথা শোনা যাচ্ছে, সেই আসনে দলনেত্রী তৃণমূলের হয়ে ব্যাট ধরার দায়িত্ব দিয়েছেন ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারিকে।

অন্যদিকে, তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত উত্তরপাড়ায় ঘাসফুল প্রার্থী অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। হুগলি জেলার এই আসনে গত দু’বারই অন্যরকম প্রার্থী পেয়েছে। এবার এর ব্যতিক্রম হল না। ২০১১ সালে পরিবর্তনের নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে লড়েছিলেন শিল্পী অনুপ ঘোষাল, ২০১৬ সালে ঘাসফুল প্রার্থী হন সাংবাদিক প্রবীর ঘোষাল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা বরাবরই তারকা খচিত হয়ে থাকে। বহু ক্ষেত্রে দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতে বাইরে থেকে তারকা প্রার্থী দেওয়া হয়। পাশাপাশি, তারকা প্রার্থীদের নিজস্ব জনপ্রিয়তাও বিভিন্ন সময় বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, সাধারণত তারকাদের রাজনৈতিক ভিত মজবুত না হওয়ায়, তাঁদের চালনা করতেও সুবিধা হয় দলের। তবে এ সবের বাইরেও ফ্ল্যাশ মব থেকে শুরু করে দেওয়ালে দেওয়ালে স্প্রে প্রিন্ট- হিট প্যারোডি, টু্ম্পা সোনা গানের রাজনীতির ‘ভার্টিক্যাল ট্রেন্ডিং’এ টিকে থাকতে গেলে প্রার্থী তালিকাতে তারকা-তারুণ্য যে জরুরি এবার তা প্রতিফলিত হয়েছে ঘাসফুল প্রার্থী তালিকায়, এমনটাই মত একাংশের পর্যবেক্ষকের।