কলকাতা: ছুঁতমার্গ আগেই কাটিয়েছে কংগ্রেস। ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল হিসাবে পরিচিত শিবসেনার সঙ্গে জোট করে সরকার গড়ে । সে সময়ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ বার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে হাত মেলানোয় একই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে সে প্রশ্ন উঠছে খোদ কংগ্রেসের অন্দর থেকেই। অনেকেই আব্বাস সিদ্দিকির দলকে ‘মৌলবাদী’ আখ্যা দিয়েছেন। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা আনন্দ শর্মা এই জোটকে কটাক্ষ করে সরাসরি দলেরই লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীকে কার্যত কাঠগড়ায় দাঁড় করান। ব্রিগেডের সমাবেশ নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ওই মঞ্চে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর উপস্থিতি ও সমর্থন লজ্জাজনক এবং বেদনাদায়ক। আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট নেহরু-গান্ধীর ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার সঙ্গে খাপ খায় না। এরপরই জোটে কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে জোর জল্পনা তৈরি হয়। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, অধীরকেই কেন কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন রাজ্যসভার সাংসদ আনন্দ শর্মা?
বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফ-এর জোট পাকা হলেও আসন রফা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। মূলত কংগ্রেসের সঙ্গেই বোঝাপড়া বাকি থেকে গিয়েছে আইএসএফ-এর। এরপর ব্রিগেডের মঞ্চে প্রকাশ্যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আসন রফা নিয়ে তোপ দেগে পারদ চড়ান আব্বাস সিদ্দিকি। বক্তৃতা রাখা নিয়ে অধীরের সঙ্গে মতানৈক্য তৈরি হয়। ব্রিগেড সমাবেশের পর পরস্পর বিরোধী প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে তাঁদের। এরফলে জোটের বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সে সময়ই আগুনে ঘি ঢালে আনন্দ শর্মার টুইট। তবে, আনন্দকে কড়া জবাব দিয়ে সব জল্পনা উড়িয়ে দেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী। কংগ্রেস সাংসদ বুঝিয়ে দেন, হাই কম্যান্ডের নির্দেশ মতোই প্রদেশ কংগ্রেস তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। অধীরের আরও দাবি, ধর্মনিরেপক্ষ দল হিসাবে পরিচিত সিপিএম। সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, বিমান বসুর মতো বাম নেতারা যখন আইএসএফ-কে সিলমোহর দিচ্ছে, সেখানে আব্বাসের দলকে ‘মৌলবাদী’ বলা প্রশ্নই ওঠে না।
Know ur facts @AnandSharmaINC ji
1. CPI(M) led Left Front is leading the secular alliance in West Bengal of which Congress is an integral part. We are determined to defeat BJP’s communal & divisive politics and an autocratic regime.
1/4— Adhir Chowdhury (@adhirrcinc) March 1, 2021
2/4
Know ur facts @AnandSharmaINC : –2. @INCIndia has got its full share of seats. Left Front is allocating seats from its share to the newly formed Indian Secular Front-ISF. Ur choice to call the decision of CPM led front ‘communal’ is only serving the polarising agenda of BJP
— Adhir Chowdhury (@adhirrcinc) March 1, 2021
ব্রিগেডের মঞ্চে কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসাবে শুধুমাত্র অধীর রঞ্জন চৌধুরীই ছিলেন না। আব্বাসের সঙ্গে মঞ্চ শেয়ার করেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলও। ওয়াকিবহালের মতে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া তা সম্ভব হতো না। এছাড়া অধীর স্পষ্ট করে দেন, তাদের প্রাপ্য আসন থেকে আইএসএফ-কে এক কোণাও দেওয়া হচ্ছে না। এমনকী কংগ্রেসের ঘাঁটি মালদা, মুর্শিদাবাদে আইএসএফ-কে পাত্তা দিতে চাইছেন না অধীর। প্রথম থেকেই আইএসএফ-কে আসন ছাড়া নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন তিনি। বাধ্য হয়ে নাম না করে আব্বাসকে বলতে হয়েছে, সোনিয়া গান্ধী চাইলেও কলকাটি করছেন বাংলার এক নেতা। তা সত্ত্বেও ডোন্ট কেয়ার মনোভাব দেখা গিয়েছে অধীর চৌধুরীকে। তবে, আইএসএফ-কে নিয়ে মৌলবাদী প্রশ্ন উঠতেই, বামদের পাশে থেকে গর্জে উঠতে দেখা গেল বহরমপুরের ‘বাদশাকে’।
আরও পড়ুন- ৯২ আসন ‘সুরক্ষিত’ কংগ্রেসের, তবে আব্বাসকে আসন ছাড়া নিয়ে জট অব্যাহত
উল্লেখ্য, আনন্দ শর্মাকে পাল্টা তোপ দেগে অধীর বলেন, “উনি অন্য কোনও রাজনৈতিক দল থেকে রাজ্যসভার টিকিট পেতে চাইছেন?” অধীরের কটাক্ষে এই বিতর্কের নয়া মোড় নেয়। সম্প্রতি, গুলাম নবি আজ়াদের মুখে একাধিকবার মোদীর প্রশংসায় অস্বস্তিতে কংগ্রেস। গুলামের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তর জল্পনা রয়েছে। প্রসঙ্গত, ‘বিক্ষুব্ধ’ ২৩ কংগ্রেস নেতার মধ্যে অন্যতম একজন হলেন আনন্দ শর্মা। হাইকম্যান্ডকে দেওয়া ‘বেসুরো’ চিঠিতে গুলাম নবি আজ়াদ, কপিল সিব্বলের মতো আনন্দ শর্মারও নাম রয়েছে। সে সময় সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর হয়ে একমাত্র মুখ খুলেছিলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সম্প্রতি দলে অধীরের পদোন্নতি এবং গান্ধী পরিবারের আস্থাভাজন আচরণে ক্ষুব্ধ কংগ্রেসের দুঁদে নেতাদের একাংশ। আনন্দ শর্মার এই কটাক্ষ তারই বর্হিপ্রকাশ।