কলকাতা: ব্রিগেড সমাবেশ শুরুর আগেও ঘুরে ফিরে এসেছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম। ব্রিগেডে তিনি সশরীরে উপস্থিত থাকবেন কিনা তাই নিয়ে চলছিল বিস্তর জল্পনা। অবশেষে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে অসুস্থ বুদ্ধদেববাবু ব্রিগেডে যাননি। পাঠিয়েছিলেন একটি নোট। কিন্তু রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চে সেই বুদ্ধদেবের কথা অনুচ্চারিত থেকে গেল। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি থেকে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু থেকে পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, কারোর ভাষণেউ উঠে এলেন না তিনি।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ সিপিএম নেতা ছিলেন ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’ স্লোগানের অন্যতম প্রবক্তা। বাম নেতাদের ভাষণে বেকারদের কর্মসংস্থানের আশ্বাস ও রাজ্য তথা দেশের বেকারদের অবস্থার কথা উঠে এলেও বুদ্ধবাবুর কথা উঠে এল না তাঁদের বক্তব্যে।
রবিবার কংগ্রেস এবং আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF)-কে সঙ্গী করে গড়ে ওঠা বামেদের ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ থেকে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি ঘোষিত হয়েছে। মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন বাংলায় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে রাজ্যের সরকারি, আধা সরকারি ক্ষেত্রে সমস্ত শূন্যপদে নিয়োগ হবে। উঠে এসেছে চর্চিত ‘ভাইপো’ ও চিটফান্ড প্রসঙ্গ। উঠেছে রাজ্যে শিল্পস্থাপনের কথাও। কিন্তু ২০০৬ সালে ২৩৫টি আসনে জিতে বামেরা ক্ষমতার ফিরলে শিল্পায়নের যিনি প্রধান কান্ডারি ছিলেন, সেই তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথাও উচ্চারণ করলেন না কেউ।
রবিবার ব্রিগেডে উপস্থিত থাকতে না পারার যন্ত্রণা নিয়ে শনিবার একটি নোট পাঠান অসুস্থ বুদ্ধবাবু। তাতে তিনি লেখেন, “বুঝতে পারছি বহু মানুষ সমাবেশে আসবেন এবং অনেকে এসে গেছেন। বড় সমাবেশ হবে। এরকম একটা বৃহৎ সমাবেশে যেতে না পারার মানসিক যন্ত্রণা বোঝানো যাবে না। মাঠে ময়দানে কমরেডরা লড়াই করছেন আর আমি শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ মেনে চলেছি। ময়দানে মিটিং চলছে আর আমি গৃহবন্দী যা কোনদিন কল্পনাও করতে পারিনি। সমাবেশের সাফল্য কামনা করছি।” সেই নোট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেন সিপিএম নেতারা। তাই ব্রিগেডের সভাতে তিনি সশরীরে না থেকেও ছিলেন। শুধু তিনি অনুচ্চারিত থেকে গেলেন সতীর্থদের ভাষণে।
আরও পড়ুন: সোমবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সম্ভাবনা, কারা পাচ্ছেন একুশের ভোটে টিকিট?
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে ব্রিগেডের সমাবেশে অক্সিজেনের নল নাকে নিয়েই বুদ্ধদেব উপস্থিত হন। ধুলোবালিতে তাঁর শারীরিক সমস্যা বাড়তে পারে। তাই সাদা অ্যাম্বাসেডরে বসেই খানিকক্ষণ বক্তব্য শুনেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর এই ক্ষণিক উপস্থিতিই বাম কর্মীদের ব্যাপক উদ্দীপনা যুগিয়েছিল। তার আগে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ব্রিগেডের মাঠে শেষবার ভাষণ দিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। সেই সময়েই রাজ্যে বিজেপির ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার আভাস পেয়ে দলীয় কর্মী, সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘সামনে বড় লড়াই। তৈরি হও। শুধু লড়লে হবে না। জিততে হবে।’’ সেই স্মৃতি টেনে এনে বাম কর্মী, সমর্থকদের আবেগে উস্কে দিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। কিন্তু ব্রিগেডে পাম অ্যাভিনিউর বাসিন্দার কথা তুললেন না সূর্যবাবুও।