কলকাতা: ভোটের (Bhawanipore By-Election) প্রচারে ঝড় তুলেছেন বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। এবার ভোটের দিনও সকাল থেকে ময়দানে নেমে পড়লেও বিজেপির ‘লড়াকু নেত্রী’। বৃহস্পতিবার ভোট শুরুর অনেক আগে থেকেই ভবানীপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে, বিভিন্ন বুথে ঘুরে বেড়ান প্রিয়াঙ্কা। প্রার্থী জানান, ভবানীপুরের মানুষ নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করুন, ভোট দিন, এটুকুই চাইব।
এদিন প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল বলেন, “আমি তো আশা করব, মানুষকে বার বার অনুরোধ করছি ভয়ের কোনও কারণ নেই। নামুন আর ভোট দিন। আমি সবটাই মানুষের উপর ছেড়ে দিয়েছি। যদি মানুষ চায় তা হলে দেখবেন, যা নন্দীগ্রামে হয়েছে, তা ভবানীপুরেও হবে।” ভোটের দিন সকালেই প্রিয়াঙ্কার বিস্ফোরক দাবি, এই কেন্দ্রে অনেক ভোটার ভোট দিতে আসেন না। যার অন্যতম কারণ, শাসকদলের ‘দাদাগিরি’।
প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল এ প্রসঙ্গে বলেন, “দেখুন এখানে ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায়ই এটা করার চেষ্টা করে এরা (তৃণমূল কংগ্রেস)। আবাসনের নিচে গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। এবার যদিও সে সব চলবে না। আমরা সকলের কাছে ফোন নম্বর দিয়ে এসেছি। বলেছি, যে কোনও ধরনের সমস্যা হলে ফোন করতে। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”
ভবানীপুরে ভোটারের বিন্যাস অনেকটা এইরকম — সংখ্যালঘু ভোটার সংখ্যা ২৪ শতাংশ, বাংলা ভাষায় কথা বলেন এমন ভোটার ৪২ শতাংশ, অবাঙালি হিন্দু ভোটার ৩৪ শতাংশ। এই ৩৪ শতাংশ এবার ভোটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিজেপি পুরোদমে চেষ্টা করছে, এই ৩৪ শতাংশ ভোটের বড় অংশটাই নিজেদের ঘরে তুলতে। সে কারণেই ভোর থেকে এলাকায় ঘুরছেন প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল।
অধিকাংশ বুথে যখন নিরাপত্তা রক্ষীরাও পুরোপুরি তৈরি হয়নি, বুথের দরজা খোলেনি সেই সময় রাস্তায় নেমে প্রিয়াঙ্কা এই ভোটারদের আশ্বস্ত করতে চাইছেন, তিনি পাশে রয়েছেন। অনেক সময় এমন অভিযোগ ওঠে, ভবানীপুরের অবাঙালি যে ভোটাররা রয়েছেন, তাঁরা সহসা ভোট দিতে যেতে চান না। স্বাভাবিক ভাবেই এই কেন্দ্রে একটা বড় অংশের ভোট পড়ে না। এই জায়গাটাই ‘মার্কিং’ করছে বিজেপি। তাই ভোটের সকালে বুথে বুথে গিয়ে প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল যেমন দেখছেন, তাঁদের এজেন্ট রয়েছে কি না। একই সঙ্গে রাস্তায় কনভয় নিয়ে যাওয়ার ফাঁকে তিনি ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিতও করছেন। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বিজেপির অন্যতম প্রত্যাশার জায়গা এই অবাঙালি ভোটবাক্স।
বুধবারই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “যদি ৬০-৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে তবে বিজেপি সেখানে জিতবে। কিন্তু আমরা সন্দেহে রয়েছি। যে ধরনের আক্রমণ হয়েছে, তাতে উচ্চবিত্ত বা সম্পদশালী যে ভোটাররা রয়েছেন, তাঁরা কতটা ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের বহুতল থেকে নীচে নামবেন, সেই নিয়ে আমরা খানিকটা সন্দিহান। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আরেকটু সক্রিয় হওয়া উচিত। তাঁদের ভোট কেন্দ্রে আনার চেষ্টা করা উচিত। যেহেতু এই কেন্দ্রে বরাবর ভোটের হার কম থেকেছে, তাই দেখা উচিত যে ভোটগুলো যেন অন্য কেউ না দিয়ে দেয়।” অর্থাৎ ভোটে রিগিংয়ের আশঙ্কা করছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি।
পাল্টা তৃণমূলের বিধায়ক তাপস রায় অবশ্য বলেছেন, “বিজেপি অসত্যে অভ্যস্ত। এই সমস্ত কথার কোনও ভিত্তি নেই। এই দাবির সপক্ষে যদি কোনও প্রমাণ বিজেপি দেখাতে পারে, তবে দিক। ওদের তো জানানোর বহু জায়গা রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ও তৃণমূলের ভবানীপুরে এসবের (রিগিং) কোনও দিন দরকার পড়েনি, কোনও দিন পড়বেও না।”