CPIM State Conference: ‘অক্সিজেনের খোঁজে’ তিন দিনের রাজ্য সম্মেলন ধুঁকতে থাকা সিপিআইএমের, মিলবে কি জিয়নকাঠি?
West Bengal CPIM: আন্দোলনের রাস্তায় দাবি আদায়ের পথ বাতলে দিয়ে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করা সম্ভব হবে? ভোট বাক্সে তার প্রতিফলন ঘটানোর দিকে মন দেওয়া? নাকি দিস্তার পর দিস্তা তাত্ত্বিক আলোচনাতেই শেষ হবে সম্মেলন?
কলকাতা : রাজ্য বিধানসভা এখন বাম শূন্য। বিধানসভা নির্বাচনের সেই ধাক্কা কাটিয়ে খুব শ্লথগতিতে হলেও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বামেরা। আর এরই মধ্যে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে সিপিআইএমের (CPIM) ২৬ তম রাজ্য সম্মেলন। আগামিকাল কলকাতা জেলা কমিটির কার্য্যালয় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে সকাল দশটা থেকে শুরু হবে সম্মেলন। তিন দিন ব্যাপী এই সম্মেলন শেষ হবে বৃহস্পতিবার। ধুঁকতে থাকা সিপিআইএম কি খুঁজে পাবে জিয়নকাঠি? যার ছোঁয়ায় বদলে যাবে বঙ্গ সিপিআইএমের হাল। বছর কয়েক কাটলেও প্লেনামের সিদ্ধান্ত আজও কার্যকর করতে পারেনি বঙ্গ সিপিআইএম। সেই সব কার্যকর করার টোটকা কী দিতে পারবেন সিপিআইএম নেতৃত্ব? কর্মসূচি নয়, আন্দোলনের রাস্তায় দাবি আদায়ের পথ বাতলে দিয়ে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করা সম্ভব হবে? ভোট বাক্সে তার প্রতিফলন ঘটানোর দিকে মন দেওয়া? নাকি দিস্তার পর দিস্তা তাত্ত্বিক আলোচনাতেই শেষ হবে সম্মেলন?
সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট, হান্নান মোল্লাদের মতো পলিটব্যুরো সদস্যদের রাজ্য সম্মেলনে থাকার কথা রয়েছে। মূলত যাতে ভোটাভুটি এড়ানো যায়, সেই চেষ্টাই তাঁরা করবেন বলে খবর। দলের রাজ্য কমিটির নতুন সম্পাদক হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, স্বল্প পরিচিত শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের হাতেই আলিমুদ্দিনের ব্যাটন যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে আরও একটি তত্ত্ব উঠে আসছে। এমন স্বল্প পরিচিত কাউকে আনলে, দল যখন রাজ্যে সামান্য ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেই সম্ভাবনা কিছুটা ধাক্কা খাবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। এমনকী প্রকাশ্যে কিছু না বললেও সিপিআইএমের ছাত্র ও যুবরা ইতিমধ্যেই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত দলীয় সূত্রে যা খবর, তাতে শ্রীদীপ ভট্টাচার্যকে বেছে নেওয়ার সম্ভাবনাই সবথেকে বেশি। সূত্রের খবর, মহম্মদ সেলিম অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন দৌঁড়ে। এ ক্ষেত্রে যদি বড় কিছু বদল না হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই মান্যতা পাবে বলে মত রাজনীতির কারবারিদের।
তবে শেষ মুহূর্তেই কোনও চমক থাকবে কি না সেই দিকেও নজর থাকছে। কারণ, অতীতে দেখা গিয়েছে বিমান বসু, অনিল বিশ্বাস, সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রমোদ দাশগুপ্ত – যাঁরাই সম্পাদক হয়েছেন তাঁরা যথেষ্ট পরিচিত মুখ ছিলেন। রাজনৈতিক মহলে শ্রীদীপ ভট্টাচার্য সেই তুলনায় অনেকাংশেই কম পরিচিত। হাওড়া জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন বটে, তবে সেক্ষেত্রে তিনি খুব একটা সফল নন বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের। এই পরিস্থিতিতে বিজেপিকে সরিয়ে যখন আবার বামেদের ভোট বাড়ার একটা প্রবণতা দেখা গিয়েছে, সেই সময় এই ধরনের সিদ্ধান্ত দলের ক্ষেত্রে আদৌ সমীচিন হবে কি না, তা নিয়েও কাঁটাছেড়া চলছে বিস্তর।
এর পাশাপাশি কয়েক বছর আগে দলের প্লেনামে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, দলে মহিলাদের আরও জায়গা দেওয়া হবে। তরুণদের বিশেষত ৩১-৩২ বছর বয়সীদের আরও বেশি করে আনতে হবে। সেই সব সিদ্ধান্তও এখনও কার্যকর হয়নি। সেগুলিও যাতে কার্যকর হয়, তা নিয়েও আলোচনা হবে। উল্লেখ্য সাম্প্রতিক অতীতে বামেদের সভা সমাবেশ ভাল ভিড় টানতে দেখা গিয়েছে। এমনকী গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংযুক্ত মোর্চার ব্রিগেডের যা ভিড় ছিল, তা নিঃসন্দেহে দলকে অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু সেই ভিড় শেষ পর্যন্ত ইভিএমে প্রতিফলিত করতে পারছেন না বাম নেতৃত্ব। করোনা মহামারী সময় যেভাবে বামেদের তরুণ-যুবরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তা গোটা রাজ্যবাসীর প্রশংসা পেয়েছে। কিন্তু তাতেও ভোটে বিশেষ উপকার হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, রেড ভলান্টিয়ার্সদের বাংলার মানুষ কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নয়, বরং স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেই গ্রহণ করেছে বঙ্গবাসী। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে বঙ্গ সিপিআইএমের হাল ফেরাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে তিন দিনের রাজ্য সম্মেলনে।
আরও পড়ুন : Dengue: ডেঙ্গিতে বিপজ্জনক তালিকায় রাজ্যে ৪৩ পুরসভা! জেনে নিন কোন জেলায় ভয় সবথেকে বেশি?