
কলকাতা: তিনি তৃণমূলের অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার সভাপতি। সেই ওয়েবকুপার কমিটি গতকাল ভেঙে দিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু, ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নন সংগঠনের সভাপতি তথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুই। বললেন, “আমি যে বিষয়টা জানি না, তা নিয়ে কী বলব।” পুজোর পর এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানালেন। এই নিয়ে বিরোধী তোপ দেগেছে রাজ্যের শাসকদলকে। আবার তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠনের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূলের তরফে জানানো হয়, ওয়েবকুপা-সহ শিক্ষক সংগঠনগুলির রাজ্য ও জেলা কমিটিগুলি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। উৎসব শেষের পর রাজ্য ও জেলা কমিটির পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা করা হবে। কেন কমিটি ভাঙা হল, তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনা শুরু হয়।
ওয়েবকুপার কমিটি ভেঙে দেওয়া নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন বিষয়টি জানেনই না তৃণমূলের শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান এবং ওয়েবকুপার সভাপতি ব্রাত্য বসু। এদিন তিনি বলেন, “আমি তো জানি না। যা জানি না সেটা নিয়ে আমার কী বলার থাকতে পারে। দলের সিদ্ধান্ত দল নিয়েছে। আমাকে জেনে বলতে হবে।” এর পাশাপাশি তিনি বলেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই নিয়ে পুজোর পর কথা বলব। এখন তো মুখ্যমন্ত্রী পুজোর উদ্বোধন নিয়ে খুবই ব্যস্ত রয়েছেন।”
নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যজুড়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়েবকুপার সভাপতি করা হয়েছিল ব্রাত্যকে। তারপর ধীরে ধীরে ওয়েবকুপায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা সামনে আসে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ওয়েবকুপার প্রাক্তন সহ-সভাপতি মণিশঙ্কর মণ্ডলকে ওয়েবকুপা থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেইসময় মণিশঙ্কর মণ্ডল বলেছিলেন, “গেম চেঞ্জার দাদা আখ্যায়িত করে গোটা কলকাতায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যানার লাগিয়েছিলাম। সেই নিয়ে ব্রাত্য বসু আমাকে ফোনে হুমকি দিয়েছিলেন।” তার জবাবে ব্রাত্য বলেছিলেন, “মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে জিজ্ঞাসা করুন কলকাতা শহরে ছুঁচো, ইঁদুর বা ভাম বিড়াল কেন বেড়ে যাচ্ছে? আমি কী বলব? বনমন্ত্রী বলতে পারবেন।”
সেই ঘটনার কয়েকমাস পর এবার ওয়েবকুপার কমিটি ভেঙে দেওয়া হয় সভাপতির অজান্তেই। দলের সিদ্ধান্তের কথা ব্রাত্য বসু না জানায় যখন আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “দলের তরফে সিদ্ধান্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে। এর বাইরে কে কখন জানলেন, জানলেন না সেটা কী করে বলব?”
বিরোধীরা অবশ্য শাসকদলকে এই নিয়ে আক্রমণ করতে ছাড়ছে না। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে কটাক্ষ করে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, “যদি আত্মসম্মানবোধ থাকত, তাহলে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতেন। উনি তো ঠুঁটো জগন্নাথ। তাঁর কোনও মান্যতা নেই।” শিক্ষামন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। তাঁর বক্তব্য, “কে কতটা শিক্ষিত, সেটা বিষয় নয়। প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনা করার যোগ্যতা নেই এঁদের।”
প্রসঙ্গত, এদিন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইলেন না বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য। তিনি বলেন, “তিনি নীরোগ থাকুন। সুস্থ থাকুন। আমি এটুকুই বলব।”