কলকাতা: চাকরির বদলির নির্দেশ পাঠিয়েছিল শিক্ষা দফতর। প্রতিবাদ জানিয়ে গত অগস্টে বিকাশ ভবনের সামনে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন পাঁচ শিক্ষিকা। রাজ্যজুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল সেই ঘটনায়। এর ঠিক দু’মাস পর গত নভেম্বরে সেই পাঁচ শিক্ষিকাই যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। সঙ্গে শিক্ষক নেতা মইদুল ইসলামও তৃণমূলের সঙ্গে পথ চলা শুরু করেন। সোমবার এই ছ’জনের বদলির নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হল বিকাশ ভবনের তরফে। বদলি না করার আবেদন করেছিলেন পাঁচ এসএসকে শিক্ষিকা। তার ভিত্তিতেই নির্দেশ বাতিল বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিকাশ ভবন।
অর্থাৎ শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক মইদুল ইসলাম-সহ পাঁচ শিক্ষিকার যে বদলির নোটিস ঘিরে দফায় দফায় গত বছর উত্তাল হয়েছে রাজপথ, সেই বদলির নোটিস বাতিল করল স্কুল শিক্ষা দফতর। তাঁরা এতদিন ধরে যেখানে পড়াচ্ছিলেন, সেখানেই পড়াবেন বলে জানিয়ে দিল শিক্ষা দফতর।
গত ২৪ অগস্ট বিকাশ ভবনের সামনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন পাঁচ শিক্ষিকা। দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গে বদলি করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে সল্টলেকে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ। সেখানেই গলায় বিষ ঢালেন পাঁচজন শিক্ষিকা। সেদিন এই ঘটনাকে বলা হয়েছিল বাংলার বুকে লজ্জা। শিক্ষিকারা বিষপান করতে বাধ্য হচ্ছেন এই সরকারের আমলে। এক শিক্ষিকা এই বিষপানের পর দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন।
যে পাঁচজন শিক্ষিকা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তাঁদের মধ্যে দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের প্রতিনিধিরা। সেদিন বিষপানকারী শিক্ষিকাদের দাবি ছিল, “আমরা বিষপান করতে বাধ্য হয়েছি। তার জন্য দায়ী এই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। যে বদলির নির্দেশ জারি করা হয়েছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক, নয়তো আমরা আরও তীব্রতর আন্দোলনে যাব। শিক্ষামন্ত্রী যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নেন, তবে আমরা তাঁকে স্বাগত জানাব। কিন্তু যদি সেটা না নেন, তাহলে এরপর যা হবে, তার দায়ভার শিক্ষামন্ত্রীর উপর বর্তাবে।”
শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক মইদুল ইসলাম-সহ আন্দোলনকারী পাঁচ শিক্ষিকাই ২১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে নাম লেখান। তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিলেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূলের এক কর্মসূচিতে মইদুল এবং আন্দোলনকারী শিক্ষিকারা যোগ দেন তৃণমূলে। তাঁদের গলায় উত্তরীয় পরিয়ে, হাতে জোড়াফুলের পতাকা তুলে দিয়ে দলে স্বাগত জানান শিক্ষামন্ত্রী।
যে সরকার, যে শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই দলেই কেন যোগ দিতে হল মইদুল ইসলামকে? শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের রাজ্য সম্পাদকের জবাব ছিল, “লড়াই তো যে কোনও সময়ে করা যায়। এটা তো গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। একাধারে লড়াই থাকে, একাধারে আলাপ আলোচনা থাকে। এই সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। সেটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আমরা মনে করি সরকার যে ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনমুখী প্রকল্প নিচ্ছে, বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ করছে, সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছে নিশ্চিত ভাবে তারা শিক্ষকদেরও সমস্ত দিকই দেখবে।”