কলকাতা: ভোটের আগে রাজ্যে বেলাগাম হিংসার অভিযোগ। সেই অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে রাজভবনে (Raj Bhawan) চালু হয়েছে ‘পিস রুম’। ভোট সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ শুনতেই এই সাহায্য কক্ষ খুলেছে রাজভবন। অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তা সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নজরে আনা হবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই শাসকদলের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, আদর্শ আচরণবিধি যেখানে বলবৎ, সেখানে এভাবে কি রাজভবন ‘পিস রুম’ খুলতে পারে? এই ‘শান্তিকক্ষে’ আস্থা নেই কংগ্রেসের। সিপিএমও আদর্শ আচরণবিধি বলবৎ থাকাকালীন এ ধরনের ঘোষণা নিয়ে সন্দিহান। তবে বিজেপি দারুণ খুশি এই সিদ্ধান্তে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রীতিমতো জানিয়ে দিলেন, পিস রুম খোলার ২৪ ঘণ্টা কাটেনি, তার আগেই নাকি উপচে পড়েছে অভিযোগের তালিকা।
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে হিংসার ঘটনা ঘটেছে ভাঙড়, ক্যানিংয়ে। বোমাবাজি, গুলি চলে সেখানে। শুধু ভাঙড় বা ক্যানিং নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসার অভিযোগ উঠেছে। তারপরই প্রাক নির্বাচনী হিংসায় কঠোর অবস্থানের কথা জানান রাজ্যপাল। শুধু বার্তা নয়, এবার অ্যাকশন হবে বলে মন্তব্য করেন রাজ্যপাল। ভাঙড় ও ক্যানিং ঘুরে দেখেন। এরপরই শনিবার রাজভবন প্রেসনোট দিয়ে জানায় তারা একটি কন্ট্রোল রুম খুলছে, যার নাম পিস রুম।
মনোনয়ন দাখিল পর্ব মেটা মানেই ঝামেলা মিটে গেল এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে, বিরোধী প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর জন্য নানা জায়গা থেকে চাপ আসে। ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গা থেকে সে অভিযোগ আসতেও শুরু করেছে। এইরকমই অশান্তির খবর থাকলে, কোনও প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল অভিযোগ জানাতে চাইলে এই পিস রুমে অভিযোগ জানাতে পারেন। বাংলায় প্রথমবার এরকম ঘটনা ঘটল, যেখানে রাজভবন আলাদা করে ভোটের সময় সাহায্য কক্ষ খুলল। ইমেল, ফোনে জানানো যাবে অভিযোগ।
এমনই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। দলীয় সাংসদ শান্তনু সেনের বক্তব্য, “নির্বাচন কমিশনের আওতায় এখন সবকিছু। আদর্শ আচরণ বিধি বলবৎ আছে। নির্বাচন আচরণ বিধির ঊর্ধ্বে কেউ নন, স্বয়ং রাজ্যপালও নন। সুতরাং এই সময় এটা কতটা করা যায় আমার জানা নেই। রাজ্যপাল অতি উৎসাহী হয়ে যেভাবে এ সমস্ত কাজকর্ম করছেন, এত বড় রেল দুর্ঘটনা ঘটল, এই উৎসাহ তো দেখা গেল না। এত মানুষের প্রাণ বিপন্ন হল, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছুটে গেলেন, কোথায় ছিলেন তখন উনি? সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে ওনার উচিত নিজের এক্তিয়ারে থেকে প্রশাসনিক প্রধান ও নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করা।”
রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্যপালের কোনও অধিকারই নেই এটা করার। উনি একজন মনোনীত ব্যক্তি। সংবিধানগত ভাবে ওনার যে অধিকার, রাজ্য মন্ত্রিসভার সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁকে পদক্ষেপ করতে হয়। কিন্তু বিজেপি অনৈতিকভাবে অবিজেপি রাজ্যে রাজ্যপালকে ব্যবহার করছে।” সিপিএম নেতা সুজন চক্রর্তীও বলছেন, “এটার আইনগত ভিত্তি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা জরুরি। সম্ভবত নেই। রাজ্যপালের কাজ এটা নয়। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের যা দায়িত্ব, সেই আইনশৃঙ্খলা ও সেই সংক্রান্ত বিষয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা রাজভবনের দায়িত্ব না।”
যদিও বিজেপি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, “যা শুনছি হেল্পলাইন চালু হতেই প্রচুর অভিযোগ ইতিমধ্যেই এসেছে। বাড়িতে ভাঙচুর, মনোনয়ন জমা দিতে না পারা, ছেলেমেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো অভিযোগ এসেছে বলে শুনেছি।” তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলছেন, “শান্তি ভবন শান্তি ভবনেই থাকবে। অশান্তি মেটানোর কোনও ব্যবস্থা হবে না। রাজভবনে একটা শান্তিভবন খুললাম, এটা কোনও অ্যাকশন নয়। কিছুই হবে না। রাজ্যপালকে মানে এই সরকার?”