
কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে শাসকদল যখন বিরোধীদের ফলায় প্রতি মুহূর্তে বিদ্ধ, তখন পাল্টা ময়দানে তৃণমূলও। সুজন চক্রবর্তী থেকে শুরু করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু (Jyoti Basu), অভিযোগের তালিকায় বাদ যাননি কেউই। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, “জ্যোতি বসু বড় দুর্নীতি করেছেন। সেই সময় উচ্চমাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করা অনেক মেধাবী পড়ুয়ারা জয়েন্টে পাশ করতে না পেরে ডাক্তারি পড়তে পারতেন না। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর কোটা ছিল দশটা ডাক্তারি ও দশটা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর। সিপিএম নেতা মানিক দত্তের ছেলে সেই সময় সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করে আজকে ডাক্তার হয়েছেন জ্যোতিবাবুর কোটায়। উনি দুর্নীতি করেননি?” বাম শরিক দল ফরওয়ার্ড ব্লকের এক সময়ের দাপুটে নেতা ছিলেন উদয়ন গুহ। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। উদয়নের এমন মন্তব্যে সম্প্রতি হইচই পড়ে যায়। সোমবার টিভি নাইন বাংলাকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে উদয়ন গুহ ব্যাখ্যা দিলেন কেন তিনি জ্যোতি বসু সম্পর্কে এ কথা বলেছিলেন।
উদয়ন গুহ বলেন, “জ্যোতিবাবু মহান রাজনীতিবিদ। শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করি। তবে উনি তো ভগবান নন। উনি কোনওদিনও ভুল করেননি, কোনও দোষ করেননি, এমনটা তো নয়। আমি যেটা বলেছি, জ্যোতিবাবুর আমলে কোটা ছিল ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে। ১০টা করে আসন সংরক্ষিত ছিল মুখ্যমন্ত্রী কোটায়। গরিবদের কথা তো ছেড়েই দিলাম, মেধাবী পড়ুয়া যখন আসন পাচ্ছে না, সেই সময় দেখেছি বিভিন্ন নেতাদের ছেলে মেয়ে, আত্মীয়স্বজন, পার্টির লোকেরা এমনকী সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করেও মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়েছেন।”
উদয়নের বক্তব্য, তৃণমূলের জমানায় যদি বারবার বলা হয়, যোগ্যদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। একই ঘটনা বাম আমলেও হয়েছে। তাহলে তা কেন অন্যায় হবে না? উদয়নের কথায়, “কম যোগ্য বা অযোগ্যদের ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির দায় কেন জ্যোতিবাবুর উপর বর্তাবে না? এই প্রশ্নে অন্যায় কোথায়? এতে তো আমি কারও চাকরি যাক বলছি না, অন্য কোনও প্রশ্নও তুলছি না।”
কিন্তু সেই কোটা পদ্ধতি তো অনেকদিনই লুপ্ত। তাহলে হঠাৎ প্রাক্তন বাম নেতার মুখে কেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নাম? উদয়ন গুহ বলেন, “জ্যোতিবাবুর প্রসঙ্গ টানলাম কারণ জ্যোতিবাবুকে ভগবান বলে প্রজেক্ট করার একটা চেষ্টা হয়। জ্যোতিবাবুও যে ভগবান ছিলেন না, তিনিও যে দলের স্বার্থে কিছুটা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন বা যেটা ভুল সেটা করেছেন সেটাই বলার চেষ্টা করেছি। এর মানে একেবারেই এমন নয় আমি জ্যোতিবাবুকে শ্রদ্ধা করি না। বাম আন্দোলনকে দিশা দেখিয়েছেন তিনি। তবে তিনিও সে পথে হেঁটেছেন।”
প্রশ্ন উঠছে, বাম নেতাদের নাম নিয়ে তৃণমূল কি নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির সামনে ঢাল খাড়া করছে? উদয়ন গুহ বলেন, “কোথাও দুর্নীতি হলে তার শাস্তি হোক। ঢালের কোনও ব্যাপারই নেই। কিন্তু আঙুল শুধু একদিকে উঠবে এটা হয় না। আর অতীতে যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটা তুলে ধরায় অন্যায়টাই বা কোথায়?”