কলকাতা: তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’য় শনিবার সকালেই প্রকাশিত হয়েছে পুরভোটে তৃণমূল কর্মীদের ভূমিকা ঠিক কী রকম হবে। সূত্রের খবর, এদিনই নিরপেক্ষভাবে ভোট পরিচালনার জন্য রাজ্য প্রশাসনকে শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছে। ১০৮টি পুরসভায় রবিবার ভোট। কারণ ইতিমধ্যেই দিনহাটা পুরসভা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় করেছে শাসকদল। তার আগে শনিবার সন্ধ্যায় এই বার্তা দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে। দলীয় মুখপত্রে ভোটের দিন নেতা কর্মীদের ভূমিকা নিয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও অশান্তির মেঘ সম্পূৰ্ণ দূর হয়নি বলেই মত শাসকদলের অনেকের। তাঁদের মতে, গোলমাল হলে কে কাকে থামাবে এটাই এখন প্রশ্ন। প্রশাসনকেই সে ক্ষেত্রে মোকাবিলা করতে হবে। দল, রং নির্বিশেষে কোথাও কোনওরকম কেউ গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে লাঠিও হাতে তুলে নিতে পারে পুলিশ, রয়েছে এমন নির্দেশও।
রাজনৈতিক মহলের মতে, এবারের পুরভোটে তৃণমূলের সবথেকে বড় কাঁটা নির্দল। শাসকদল প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার পর থেকেই জেলায় জেলায় বিক্ষোভ বিদ্রোহে বিড়ম্বনা বেড়েছে দলের অন্দরে। দীর্ঘদিনের জন প্রতিনিধি টিকিট না পেয়ে নির্দলের হয়ে ভোটে লড়ার ঘোষণা করেছেন। দলও কঠোর হাতে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বহিষ্কার করা হয়েছে বহু নেতা কর্মীকে। কিন্তু তারপরও এমন অনেক নির্দল প্রার্থী রয়ে গিয়েছেন যাঁরা রবিবারের পুরভোটে শাসকদলের অস্বস্তির কারণ হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, নির্দলের সঙ্গে তৃণমূলের প্রার্থীদের অশান্তির আশঙ্কাও থাকছে অনেকটাই। এই পরিস্থিতিতে যা করার প্রশাসনকেই করতে হবে। কোনওরকম পক্ষপাতের অভিযোগ উঠলে তা অবস্থা আরও জটিলই করবে। তাই শাসকদল শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে বলেই সূত্রের দাবি।
এদিন তৃণমূলের মুখপত্রে ‘কাল ১০৮ পুরসভায় ভোট, তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা মনে রাখুন’ শীর্ষক একটি লেখায় বলা হয়েছে, ‘দল এবং শাখা সংগঠন, গণসংগঠনের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পাশে থেকেই ভোট করছেন। রবিবার এই স্পিরিট অব্যাহত থাকুক।’ একইসঙ্গে লেখা হয়েছে, ‘আত্মবিশ্বাস ভাল কিন্তু অতি আত্মবিশ্বাস কেউ দেখাবেন না। শেষ ভোটারের ভোট পর্যন্ত মনঃসংযোগ দিয়ে বুথ বা ক্যাম্পে থাকুন। বিরোধীরা জানে তারা হারবেই। তাই প্রচারে থাকতে তারা প্ররোচনা দিয়ে নাটক করতে পারে। কোনওভাবে এইসব প্ররোচনায় পা দেবেন না। দরকারে নেতৃত্ব বা পুলিশকে জানাবেন।’ যদিও তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, “আত্মতুষ্টি এড়াতেই ঐক্যবদ্ধ থাকার ডাক দেওয়া হয়েছে। কোনও নির্দল কাঁটা নয়।”
এদিকে শনিবারই ভিডিয়ো কনফারেন্সে সিনিয়র বিশেষ পর্যবেক্ষকদের নির্বিঘ্নে ভোট করানোর বার্তা দিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস। সৌরভ দাসের মতে, “নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, তার জন্য আমরা সিনিয়র বিশেষ পর্যবেক্ষকদের বলেছি। কোনওরকম বিচ্যুতি বরদাস্ত করা হবে না। কড়া হাতে ভোট করাতে হবে। মানুষ যাতে তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। জিরো টলারেন্স। নাগরিকদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন সিনিয়র বিশেষ পর্যবেক্ষকরা।”
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এদিনই বলেন, “শাসকদল ভয়ে আছে। নির্বাচন কমিশনকে যা বলা হয়েছে কোনওটাই শোনেনি এখনও পর্যন্ত। সিভিক পুলিশ নির্বাচনে একটা বড় দায়িত্ব নিচ্ছে। হওয়ার কথা না। আসলে ভোটটা মুঠোয় নেওয়াই ওদের লক্ষ্য।”
আরও পড়ুন: Anis Khan Death: বাম ছাত্র যুবদের মিছিল ঘিরে রণক্ষেত্র পাঁচলা! আটক মীনাক্ষি, রক্তাক্ত পুলিশ কর্মীও