Tab Scam: নজিরবিহীন দৃশ্য! ছাত্রদের সামনে অপরাধের কাঠগড়ায় তাদের গুরুরা, ‘বলির পাঁঠা’ প্রধান শিক্ষকরা?
Tab Scam: প্রধান শিক্ষকদের দাবি, তাঁদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগেই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে জলপাইগুড়ির শিক্ষা ভবনে ডিআই-কে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান প্রধান শিক্ষকদের সংঠনের সদস্যরা। স্মারকলিপিও দেওয়া হয় সংগঠনের তরফে।
টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আগেই। জেলে গিয়েছেন মন্ত্রী থেকে শিক্ষাকর্তারা। তাই বলে দুর্নীতির শিকার খোদ সন্তানতুল্য স্কুল পড়ুয়ারা! আর কাঠগড়ায় পিতৃতুল্য প্রধান শিক্ষক! বাংলায় আবারও এক নজিরবিহীন অভিযোগ। শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে কোনও অদৃশ্য শক্তিবলে! ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে তদন্ত, চলছে ধরপাকড়ও। অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী থেকে শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও। কেলেঙ্কারির শিকড় যে অনেক গভীরে, তা বোঝাই যাচ্ছে। এরই মধ্যে নাম জড়িয়েছে প্রধান শিক্ষকদের!
‘হেড স্যর’ বা ‘হেড মিস্ট্রেস’-এর নাম শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথানত হয়ে আসে পড়ুয়াদের। একটি স্কুলের সর্বোচ্চ সম্মানীয় পদ এটি। সেই শিক্ষকদের নাম যদি এফআইআর-এ ওঠে, তাহলে কতটা বিশ্বাস রাখবেন অভিভাবকরা? পড়ুয়ারাই বা কতটা শ্রদ্ধা দেখাতে পারবেন?
তথ্য আপলোড করার ক্ষেত্রেই ভুল?
ট্যাব-কাণ্ডে একদিকে সাইবার হানার অভিযোগ উঠছে, অন্যদিকে, প্রশ্ন উঠেছে স্কুল তথা প্রধান শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়েও। রাজ্য সরকার একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য যে টাকা দেয়, সেই যোজনার নাম ‘তরুণের স্বপ্ন’। যারা এই যোজনার টাকা পাবে, তাদের নাম, ঠিকানা, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর- সব আপলোড করার দায়িত্ব স্কুলের।
আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, তথ্য আপলোড করতে হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষিকাকে। অভিযোগ উঠেছে, ওই তথ্য আপলোড করার ক্ষেত্রে ভুল হওয়াতেই ট্যাবের টাকা চলে যাচ্ছে অন্য অ্যাকাউন্টে। ফলে আঙুল উঠছে প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধেই। ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষকদের হাত থেকে সেই দায়িত্ব সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে শিক্ষা দফতর।
একাধিক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় FIR
একাধিক জায়গায় প্রধান শিক্ষকদের নামে এফআইআর পর্যন্ত হয়েছে। মেদিনীপুর, মালদহ থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গে জেলাতেও দায়ের হয়েছে অভিযোগ। শিক্ষক মহলের একাংশের দাবি, এফআইআর হয়েছে মানেই প্রধান শিক্ষক অভিযুক্ত, তা নয়। যেহেতু একটি স্কুলের ‘অথরিটি’ হন তাঁরা, অর্থাৎ তাঁদের হাতেই থাকে স্কুলের মূল দায়িত্ব, তাই কোনও অঘটন ঘটলে, আগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে এভাবে থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ায় রাজ্য জুড়ে গর্জে উঠেছেন প্রধান শিক্ষকরা। জেলা পরিদর্শকরা কীভাবে জামিন অযোগ্য ধারায় প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করলেন, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
‘দায় আমাদের নয়’
তথ্য ভুল থাকার অর্থই প্রধান শিক্ষকদের দায়? প্রধান শিক্ষকদের সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতির দাবি, রাতের পর রাত জেগে পোর্টালে তথ্য আপলোড করার কাজ করেছেন তাঁরা। তারপরও সব অভিযোগের দায় নিতে হচ্ছে তাঁদের।
রাজ্যের প্রধান শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ট্যাব কেলেঙ্কারিতে আমার-আপনার কারও দায় নেই। পুরো দায় শিক্ষা দফতরের। অতি দ্রুততার সঙ্গে এই কাজ সম্পন্ন করেছি আমরা। শিক্ষা দফতরের উচিত ছিল, আমাদের পাশে দাঁড়ানো।”
প্রধান শিক্ষকরা কি বলির পাঁঠা?
এইভাবে অভিযোগ ওঠায় প্রধান শিক্ষকদের দাবি, তাঁদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগেই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে জলপাইগুড়ির শিক্ষা ভবনে ডিআই-কে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান প্রধান শিক্ষকদের সংঠনের সদস্যরা। স্মারকলিপিও দেওয়া হয় সংগঠনের তরফে। ট্যাব দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
জলপাইগুড়ি কদমতলা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রীতা রায় সেনগুপ্ত বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে বলেন, “কেবলমাত্র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ব্যাঙ্কের IFSC কোড এই দুই তথ্যের ভিত্তিতে টাকা প্রদান করা হচ্ছে। ফলে অ্যাকাউন্ট নম্বরের একটা সংখ্যা এদিক ওদিক হলেই টাকা অন্যের অ্যাকাউন্ট চলে যাচ্ছে। আর তা হলেই মামলা রুজু করে দেওয়া হচ্ছে প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।” তাই তাঁর দাবি, প্রয়োজনে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আর আধার নম্বর- দুটোই দেওয়ার জায়গা থাকুক, তাহলে টাকা পাঠানো নিয়ে কোনও সমস্যা থাকবে না।
আইনি পথে হাঁটবেন প্রধান শিক্ষকরা!
প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেড মিস্ট্রেস’-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি স্পষ্ট জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষকদের এই দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বের করে আনতে সবরকমের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন তাঁরা। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে আইনি পথে যেতে রাজি আছি। প্রধান শিক্ষকদের সুস্থভাবে ক্লাসে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লড়াই করা হবে। জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার কথাও ভাবা হচ্ছে।” তবে এখনও পর্যন্ত কোনও মামলা দায়ের হয়নি।
কী বলছে শিক্ষা দফতর?
প্রধান শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষা পোর্টালের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে শিক্ষা দফতর। সেই কারণেই এই ঘটনা। বারবার এই বিষয়ে জানানোও হয়েছে শিক্ষা দফতরকে। যে পোর্টালের অডিট হয় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে, সেখানে আধিকারিকরাই বা সারা বছর কী করেছেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। তাঁদের আরও দাবি, প্রধান শিক্ষকদের কন্যাশ্রী প্রকল্পের কাজও করতে হয়। সে ক্ষেত্রে কোনও অভিযোগ উঠছে না।
এই প্রসঙ্গে শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “যদি কোনও প্রধান শিক্ষক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কাজ করে থাকেন, তাহলে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে তাঁকে। কিন্তু কোনও প্রধান শিক্ষক যদি কিছু না করে থাকেন, তাহলে ভয় কীসের! এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমাদেরও বিভিন্ন অভিযোগের জন্য হাজিরা দিতে হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে। তবে দোষ প্রমাণিত না হলে কোনও শাস্তি হবে না।”
উল্লেখ্য, শিক্ষা দফতর ইতিমধ্যে ব্যবস্থা করেছে যাতে পড়ুয়ারা নিজেরাই নিজেদের তথ্য আপলোড করতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকদের ভূমিকা থাকবে না।