কলকাতা : সর্বহারার দল। সেই দলের হোলটাইমারের কি না ২২ লাখের গাড়ি। প্রশ্নটা তুলেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। জবাব দিতে দেরি করেননি শতরূপ ঘোষ। কারণ, তাঁকেই নিশানা করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র। সিপিএমের যুব নেতা জানিয়ে দেন, গাড়িটা তাঁর বাবা তাঁকে কিনে দিয়েছেন। এরপরই কুণালের পাল্টা প্রশ্ন, সর্বহারা দলের হোলটাইমারের গাড়ি কেনার শখ বা মানসিকতা হয় কী করে? এই নিয়ে সিপিএমের অবস্থান ব্যক্ত করলেন সুজন চক্রবর্তী। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বলেন, “প্রত্যেকে তাঁর বোধ অনুসারে চলেন। পারিবারিক সম্পত্তি কী আছে? বাবা কাকা ঠাকুরদা বা দাদা তাঁকে কী কিনে দেবেন, সাধারণভাবে তা পার্টির দেখার কথা নয়। সেভাবে পার্টি দেখেও না। তবে বেআইনিভাবে কেউ নিজে কিছু করছেন কি না, সেটা অবশ্যই নজরে থাকে।”
শতরূপের গাড়ি নিয়ে এদিন সকালে প্রথমে খোঁচা দেন কুণাল। সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ২০২১ সালের নির্বাচনী হলফনামায় শতরূপের সম্পত্তির হিসেব ২ লাখ টাকা। সেই শতরূপ কীভাবে ২২ লাখ টাকার গাড়ি কিনলেন? নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে শতরূপের নির্বাচনী হলফনামার অংশ, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সহ নথির ছবিও তুলে ধরেছেন। পাল্টা তোপ দাগেন সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষও (CPIM Leader Shatarup Ghosh)। কটাক্ষের সুরে বলেন, “বিয়েতে ডাকিনি বলে রাগ হয়েছে।” এই ইস্যুতে শতরূপের হয়ে ব্যাট ধরে সুজন চক্রবর্তী বলেন, “কুণাল ইনকাম ট্যাক্সে যাক না। তাতে আমার হোক, সেলিম হোক, শতরূপ হোক, তন্ময় হোক যার খুশি নাম দিক। আমাদের কোনও আপত্তি নেই। বেআইনি সম্পদ ধরা হোক। মানুষের জন্য এটা জরুরি। কিন্তু, পারবেন কি যেতে? রাজি আছেন?”
এদিকে এদিনই আবার ফেসবুকে বামেদের এক হাত নিতে দেখা গিয়েছে যুব তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যকে। লিখেছেন, “তথাকথিত সর্বহারাদের চতুর্দিকে যা অবস্থা দেখছি তাতে ভিতরে একটা অদ্ভুত বাজে অনুভূতি হয়। ভাল লাগে না। যন্ত্রণা হয়। রাজনীতি নিজের ভালর জন্য, নাকি সমাজের ভালোর জন্য?” যদিও সুজনের দাবি, যদিও শতরূপের দাবি, বাবার দেওয়া টাকাতেই ওই গাড়ি কিনেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বিমান বসু হোক বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, একাধিক প্রথমসারির বাম নেতাদের কঠিন জীবনসংগ্রাম, ত্যাগ, অতি সাধারণ জীবনশৈলী নিয়ে প্রায়শই সোশ্য়াল মিডিয়ায় গলা তুলতে দেখা যায় বাম কর্মী-সমর্থকদের। এবার সেই সিপিএমের বিরুদ্ধেই চিরকুটে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ সরব হয়েছে তৃণমূল। সুপারিশই ছিল বামেদের লোক ঢোকানোর মূল মন্ত্র। মুখে আদর্শের কথা বললেও আদপে কেউই সাধু নয়, এ কথাই বলছেন কুণাল-ব্রাত্যর মতো তৃণমূলের নেতারা। মমতার নির্দেশে শুরু হয়েছে বাম দুর্নীতির ময়নাতদন্ত। পঞ্চায়েত ভোটের আগেই সামনে আসবে দুর্নীতির শ্বেতপত্র। বলেছেব সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। যদিও শতরূপ প্রসঙ্গ উঠতেই এদিন রীতিমতো রেগে যেতে দেখা যায় সুজনকে। রীতিমতো চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন, “শতরূপ আমাদের পার্টির কর্মী। এতে কোনও সন্দেহ নেই। যদি মনে হয় সে বেআইনি সম্পদ করছে, উপার্জনের সঙ্গে সঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে আদলতে যাও, ইনকাম ট্যাক্সের কাছে যাও। খেলা শেষ। এসব কথা আগে নিজেদের দিকে তাকিয়ে বলুন। কুণাল ইনকাম ট্যাক্সে যাক না। তাতে আমার হোক, সেলিম হোক, শতরূপ হোক, তন্ময় হোক যার খুশি নাম দিক। আমাদের কোনও আপত্তি নেই। বেআইনি সম্পদ ধরা হোক। মানুষের জন্য এটা জরুরি। কিন্তু, পারবেন কি যেতে? রাজি আছেন?”