কলকাতা: সেমিনার হলে আদৌ কি তিলোত্তমার সঙ্গে কিছু ঘটেছিল? কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির রিপোর্ট নিয়ে যখন চাপানউতর চলছে, সেই সময় আরজি কর কাণ্ডে প্রকাশ্যে এল একাধিক বিস্ফোরক তথ্য। ঘটনার রাতে তিলোত্তমার সহকর্মীরা কে কোথায় ছিলেন? কে প্রথম কী অবস্থায় তিলোত্তমার দেহ দেখেছিলেন? চেস্ট মেডিসিনের পরবর্তী ঘটনাক্রম কী ছিল? সিবিআইয়ের কাছে কার কী জবানবন্দি ছিল? পুলিশের কাছে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়রের বয়ান কী ছিল? ডেথ সার্টিফিকেট বা কী ভাবে ইস্যু হয়? ডেথ সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরকারী চিকিৎসকের বক্তব্য কী ছিল? ঘটনার কথা জানা মাত্র সন্দীপ ঘোষ কী নির্দেশ দিয়েছিলেন? টিভি নাইনের হাতে এল বিস্ফোরক সেই সব নথি।
৯ অগস্ট রাত ১২টা নাগাদ একসঙ্গে ডিনার করেন তিলোত্তমা, পিজিটি সৌমিত্র রায়, অর্ক সেন, হাউসস্টাফ গোলাম আজম, ইন্টার্ন শুভদীপ সিংহ মহাপাত্র। রাত ২টো। পিজিটি সৌমিত্রর দাবি এক রোগী অসুস্থতার কথা তিলোত্তমাকে ঘুম ভাঙিয়ে জানান। আর এক চিকিৎসককে ফোন করতে বলেন তিলোত্তমা।
রাত ২টো ১৯। সেমিনার রুমেে তিলোত্তমাকে লাল কম্বলে ঘুমোতে দেখেন পিজিটি অর্ক।
রাত ২ টো ৫০। হাউসস্টাফ গোলাম আজম সেই সময় সেমিনার রুমে যান। গোলামের দাবি কারও সাড়া না পেয়ে দরজা বন্ধ করে চলে আসেন।
এখানেই তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। গোলাম বলছেন, তিনি দরজা বন্ধ করেন। অভিযুক্ত সিভিকের বয়ান বলছে, দরজা খোলা ছিল। তাহলে গোলামের বন্ধ করা দরজা খুলল কে?
যদিও রাত সাড়ে তিনটে পর্যন্ত দুই পিজিটি, হাউসস্টাফ, ইন্টার্ন জেগেছিলেন। পরের সকালে কী হল? চিকিৎসক নেতা কৌশিক চাকি বলেন, “যে ব্যক্তি প্রথম সেই রুমে ঢোকে সে বলছে দরজা প্রায় খোলা অবস্থায় ছিল। খোলা অবস্থায় এক মহিলা প্রাণ বাঁচাতে চিৎকার করছেন কেউ শব্দ পেল না?”
পরের সকালে কী হল?
ঘটনা শুনেই দেহ মর্গে পাঠাতে ইউনিট হেড সুমিত রায় তপাদারকে নির্দেশ দেন সন্দীপ ঘোষ! সেমিনার রুমে তিলোত্তমার দেহ প্রথম দেখেন পিজিটি সৌমিত্র রায়। সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের কাছে সৌমিত্রর বয়ান, ৯ অগাস্ট সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট নাগাদ তিলোত্তমাকে দেখতে না পেয়ে সেমিনার রুমে যান। সেমিনার রুমে টেবিলের পিছনে তিলোত্তমার নগ্ন দুই পা, তাঁর দেহের অস্বাভাবিক অবস্থান দেখেই সৌমিত্র বেরিয়ে আসেন। ফোন করেন তিলোত্তমাকে। তাঁকে না পেয়ে পিজিটি অর্ককে ফোনে বিষয়টি জানান সৌমিত্র।
তবে, দেহ প্রথম দেখতে পাওয়ার সময় নিয়ে সৌমিত্রর বয়ানের সঙ্গে অর্কর বয়ানের ফারাক আছে। সৌমিত্রর দাবি, ৯ অগস্ট সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে তিনি সেমিনার রুমে তিলোত্তমাকে অস্বাভাবিক অবস্থায় দেখার এক মিনিট পরই অর্ককে ফোন করেন। অর্কর বক্তব্য, এই ফোন এসেছিল সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ!
সিবিআইয়ের কাছে অর্ক জানিয়েছে, “সেমিনার রুমে ঢুকে দেখি অর্ধনগ্ন অবস্থায় তিলোত্তমার নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করে সেখান থেকে বেরিয়ে বলতে থাকি, তিলোত্তমার সঙ্গে কিছু একটা ঘটেছে! সুইসাইড কি না নিশ্চিত নয়।”
অর্ক কেন ‘সুইসাইড’ বলল তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আরেক পিজিটি প্রিয়া গিরি। ৯ অগস্ট সকালের ডিউটিতে নার্সিং স্টেশনে কর্মরত ছিলেন পিজিটি প্রিয়া গিরি, পুজা রাই, ভ্যানিলা কৃষ্ণন। সেমিনার রুম থেকে বেরিয়ে নার্সিং স্টেশনে এসে এই তিনজনকে খবর দেন অর্ক। সেই সময়ই অর্কর মুখে ‘সুইসাইড’ শব্দবন্ধ শোনেন প্রিয়া গিরি, ভ্যানিলা কৃষ্ণনরা। পরে সিবিআইয়ের কাছে প্রিয়া গিরি বলেছেন, “তিলোত্তমার দেহ দেখেই মনে হচ্ছিল এটা ধর্ষণ-খুনের ঘটনা।” অর্ক বলেছিলেন, “তিলোত্তমা সুইসাইড করেছে।”
পিজিটি প্রিয়া গিরির বয়ানে আরও এক তথ্য প্রকাশ্যে। রহস্যময় ব্লু-টুথ হেডফোনের সন্ধান মিলেছিল তিলোত্তমার দেহ মর্গে নিয়ে যাওয়ার সময়। এই ব্লু-টুথ হেডফোনের সূত্র ধরেই সিভিককে গ্রেফতার করে পুলিশ প্রিয়া বয়ানে জানিয়েছেন, দেহ মর্গে নিয়ে যাওয়ার সময় এক পুলিশকর্মী নীল রঙের ব্লু-টুথ হেডফোন দেখিয়ে জানতে চান সেটি তিলোত্তমার কি না। “আমাদের এই বিষয়টি জানা না থাকায় ডক্টর সৌমিত্র রায়কে জিজ্ঞাসা করার জন্য বলি।” সৌমিত্র নিশ্চিত করেছিলেন কি না তা তাঁর বয়ানে কোথাও উল্লেখ নেই। শুধু পিজিটি প্রিয়া গিরি একা নন, তিলোত্তমার দেহ নিরীক্ষণ করেই এটা যৌন নির্যাতন, খুনের ঘটনা বলে দাবি করেছেন তিলোত্তমার ইউনিট হেড সুমিত রায় তপাদারও।
সিবিআইয়ের কাছে সুমিত রায় তপাদারের দাবি, “সকাল ন’টা পঞ্চাশ মিনিট নাগাদ ভ্যানিলা কৃষ্ণন, প্রিয়া গিরি তিলোত্তমার অবস্থার কথা জানিয়ে তাঁকে সেমিনার রুমে যাওয়ার জন্য বলে। আমি সেমিনার রুমে গিয়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় ডায়াসের উপরে তিলোত্তমার দেহ পড়ে রয়েছে। দেহের কাছে গিয়ে মোবাইলের আলো তিলোত্তমার চোখের উপরে ফেলে দেখি, চোখের মণি স্থির। দেখেই মনে হয়েছিল, দেহে প্রাণ নেই এবং এটা যৌন নির্যাতন-খুনের ঘটনা।”
এখানেও পিজিটি অর্কর বয়ান ঘিরে প্রশ্ন। সুমিত রায় তপাদার নিজে জানিয়েছেন, তিনি মোবাইলের আলোয় তিলোত্তমার নিথর দেহ পরীক্ষা করেন। পিজিটি ভ্যানিলা কৃষ্ণন, প্রিয়া গিরি, পুজা রাইয়েরও একই বক্তব্য।পিজিটি অর্কর বক্তব্য, মোবাইলের আলো নয়। স্টেথোস্কোপ দিয়ে হার্টবিট চেক করেন ডক্টর সুমিত রায় তপাদার। রাতের ডিউটিতে অন্য চার সহকর্মীর মধ্যে একমাত্র অর্কই জানিয়েছেন, তিনি রাতে সেমিনার রুমে লাল কম্বল গায়ে তিলোত্তমাকে ঘুমোতে দেখেছেন। সকালে অর্ধনগ্ন অবস্থায় চিকিৎসক ছাত্রীর দেহ দেখার পরে সুমিত রায় তপাদার চাদর দিয়ে দেহ ঢাকার জন্য বলেছিলেন। গাঢ় নীল চাদর দিয়ে দেহ ঢেকেছিলেন পিজিটি পুজা রাই। তাহলে তিলোত্তমার বাবার কাছে থাকা ছবিতে সবুজ চাদর এল কী ভাবে?
লাল কম্বলের কোনও উল্লেখ সুমিত রায় তপাদার, প্রিয়া গিরি, ভ্যানিলা কৃষ্ণন, পুজা রাইয়ের বক্তব্যে নেই।এই চারজনই সিবিআইকে জানিয়েছেন, মৃতার মোবাইল, ল্যাপটপ দেহের পাশে যথাযথ অবস্থায় ছিল।পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট অনুযায়ী, গলা টিপে, শ্বাসরোধ করে তিলোত্তমাকে খুন করা হয়। প্রশ্ন, নিজেকে বাঁচাতে বিন্দুমাত্র চেষ্টা করলেও দেহের পাশে মোবাইল, ল্যাপটপ, জুতোর যথাস্থানে থাকা কী ভাবে সম্ভব?
এক্ষেত্রে পুলিশের কাছে অভিযুক্ত সিভিকের বয়ানের মধ্যেও প্রাসঙ্গিক একই প্রশ্ন। টিভি নাইনের হাতে রয়েছে সেই নথিও। দু’দফায় সঞ্জয়ের বয়ান রেকর্ড করেছে কলকাতা পুলিশ। সেই বয়ানেও তিলোত্তমা ‘ছটফট’ করছিল, ‘মাথা ঝাঁকাচ্ছিল’ বলে জানিয়েছে অভিযুক্ত সিভিক। সে নিজে এ কথা বললে মৃতার ল্যাপটপ, মোবাইল, জুতো যথাস্থানে কী ভাবে তার ব্যাখ্যা নেই কেন? দু’দফার বয়ানের মধ্যে দ্বিতীয় বয়ানে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেছে অভিযুক্ত। সূত্রের খবর, এই বয়ানে সই করতে অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত।প্রশ্ন, ঘটনাক্রমের দ্বিতীয় বিবরণীতে কেন সিভিক সই করতে রাজি হল না?
কলকাতা: সেমিনার হলে আদৌ কি তিলোত্তমার সঙ্গে কিছু ঘটেছিল? কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির রিপোর্ট নিয়ে যখন চাপানউতর চলছে, সেই সময় আরজি কর কাণ্ডে প্রকাশ্যে এল একাধিক বিস্ফোরক তথ্য। ঘটনার রাতে তিলোত্তমার সহকর্মীরা কে কোথায় ছিলেন? কে প্রথম কী অবস্থায় তিলোত্তমার দেহ দেখেছিলেন? চেস্ট মেডিসিনের পরবর্তী ঘটনাক্রম কী ছিল? সিবিআইয়ের কাছে কার কী জবানবন্দি ছিল? পুলিশের কাছে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়রের বয়ান কী ছিল? ডেথ সার্টিফিকেট বা কী ভাবে ইস্যু হয়? ডেথ সার্টিফিকেটে স্বাক্ষরকারী চিকিৎসকের বক্তব্য কী ছিল? ঘটনার কথা জানা মাত্র সন্দীপ ঘোষ কী নির্দেশ দিয়েছিলেন? টিভি নাইনের হাতে এল বিস্ফোরক সেই সব নথি।
৯ অগস্ট রাত ১২টা নাগাদ একসঙ্গে ডিনার করেন তিলোত্তমা, পিজিটি সৌমিত্র রায়, অর্ক সেন, হাউসস্টাফ গোলাম আজম, ইন্টার্ন শুভদীপ সিংহ মহাপাত্র। রাত ২টো। পিজিটি সৌমিত্রর দাবি এক রোগী অসুস্থতার কথা তিলোত্তমাকে ঘুম ভাঙিয়ে জানান। আর এক চিকিৎসককে ফোন করতে বলেন তিলোত্তমা।
রাত ২টো ১৯। সেমিনার রুমেে তিলোত্তমাকে লাল কম্বলে ঘুমোতে দেখেন পিজিটি অর্ক।
রাত ২ টো ৫০। হাউসস্টাফ গোলাম আজম সেই সময় সেমিনার রুমে যান। গোলামের দাবি কারও সাড়া না পেয়ে দরজা বন্ধ করে চলে আসেন।
এখানেই তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। গোলাম বলছেন, তিনি দরজা বন্ধ করেন। অভিযুক্ত সিভিকের বয়ান বলছে, দরজা খোলা ছিল। তাহলে গোলামের বন্ধ করা দরজা খুলল কে?
যদিও রাত সাড়ে তিনটে পর্যন্ত দুই পিজিটি, হাউসস্টাফ, ইন্টার্ন জেগেছিলেন। পরের সকালে কী হল? চিকিৎসক নেতা কৌশিক চাকি বলেন, “যে ব্যক্তি প্রথম সেই রুমে ঢোকে সে বলছে দরজা প্রায় খোলা অবস্থায় ছিল। খোলা অবস্থায় এক মহিলা প্রাণ বাঁচাতে চিৎকার করছেন কেউ শব্দ পেল না?”
পরের সকালে কী হল?
ঘটনা শুনেই দেহ মর্গে পাঠাতে ইউনিট হেড সুমিত রায় তপাদারকে নির্দেশ দেন সন্দীপ ঘোষ! সেমিনার রুমে তিলোত্তমার দেহ প্রথম দেখেন পিজিটি সৌমিত্র রায়। সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের কাছে সৌমিত্রর বয়ান, ৯ অগাস্ট সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট নাগাদ তিলোত্তমাকে দেখতে না পেয়ে সেমিনার রুমে যান। সেমিনার রুমে টেবিলের পিছনে তিলোত্তমার নগ্ন দুই পা, তাঁর দেহের অস্বাভাবিক অবস্থান দেখেই সৌমিত্র বেরিয়ে আসেন। ফোন করেন তিলোত্তমাকে। তাঁকে না পেয়ে পিজিটি অর্ককে ফোনে বিষয়টি জানান সৌমিত্র।
তবে, দেহ প্রথম দেখতে পাওয়ার সময় নিয়ে সৌমিত্রর বয়ানের সঙ্গে অর্কর বয়ানের ফারাক আছে। সৌমিত্রর দাবি, ৯ অগস্ট সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে তিনি সেমিনার রুমে তিলোত্তমাকে অস্বাভাবিক অবস্থায় দেখার এক মিনিট পরই অর্ককে ফোন করেন। অর্কর বক্তব্য, এই ফোন এসেছিল সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ!
সিবিআইয়ের কাছে অর্ক জানিয়েছে, “সেমিনার রুমে ঢুকে দেখি অর্ধনগ্ন অবস্থায় তিলোত্তমার নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করে সেখান থেকে বেরিয়ে বলতে থাকি, তিলোত্তমার সঙ্গে কিছু একটা ঘটেছে! সুইসাইড কি না নিশ্চিত নয়।”
অর্ক কেন ‘সুইসাইড’ বলল তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আরেক পিজিটি প্রিয়া গিরি। ৯ অগস্ট সকালের ডিউটিতে নার্সিং স্টেশনে কর্মরত ছিলেন পিজিটি প্রিয়া গিরি, পুজা রাই, ভ্যানিলা কৃষ্ণন। সেমিনার রুম থেকে বেরিয়ে নার্সিং স্টেশনে এসে এই তিনজনকে খবর দেন অর্ক। সেই সময়ই অর্কর মুখে ‘সুইসাইড’ শব্দবন্ধ শোনেন প্রিয়া গিরি, ভ্যানিলা কৃষ্ণনরা। পরে সিবিআইয়ের কাছে প্রিয়া গিরি বলেছেন, “তিলোত্তমার দেহ দেখেই মনে হচ্ছিল এটা ধর্ষণ-খুনের ঘটনা।” অর্ক বলেছিলেন, “তিলোত্তমা সুইসাইড করেছে।”
পিজিটি প্রিয়া গিরির বয়ানে আরও এক তথ্য প্রকাশ্যে। রহস্যময় ব্লু-টুথ হেডফোনের সন্ধান মিলেছিল তিলোত্তমার দেহ মর্গে নিয়ে যাওয়ার সময়। এই ব্লু-টুথ হেডফোনের সূত্র ধরেই সিভিককে গ্রেফতার করে পুলিশ প্রিয়া বয়ানে জানিয়েছেন, দেহ মর্গে নিয়ে যাওয়ার সময় এক পুলিশকর্মী নীল রঙের ব্লু-টুথ হেডফোন দেখিয়ে জানতে চান সেটি তিলোত্তমার কি না। “আমাদের এই বিষয়টি জানা না থাকায় ডক্টর সৌমিত্র রায়কে জিজ্ঞাসা করার জন্য বলি।” সৌমিত্র নিশ্চিত করেছিলেন কি না তা তাঁর বয়ানে কোথাও উল্লেখ নেই। শুধু পিজিটি প্রিয়া গিরি একা নন, তিলোত্তমার দেহ নিরীক্ষণ করেই এটা যৌন নির্যাতন, খুনের ঘটনা বলে দাবি করেছেন তিলোত্তমার ইউনিট হেড সুমিত রায় তপাদারও।
সিবিআইয়ের কাছে সুমিত রায় তপাদারের দাবি, “সকাল ন’টা পঞ্চাশ মিনিট নাগাদ ভ্যানিলা কৃষ্ণন, প্রিয়া গিরি তিলোত্তমার অবস্থার কথা জানিয়ে তাঁকে সেমিনার রুমে যাওয়ার জন্য বলে। আমি সেমিনার রুমে গিয়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় ডায়াসের উপরে তিলোত্তমার দেহ পড়ে রয়েছে। দেহের কাছে গিয়ে মোবাইলের আলো তিলোত্তমার চোখের উপরে ফেলে দেখি, চোখের মণি স্থির। দেখেই মনে হয়েছিল, দেহে প্রাণ নেই এবং এটা যৌন নির্যাতন-খুনের ঘটনা।”
এখানেও পিজিটি অর্কর বয়ান ঘিরে প্রশ্ন। সুমিত রায় তপাদার নিজে জানিয়েছেন, তিনি মোবাইলের আলোয় তিলোত্তমার নিথর দেহ পরীক্ষা করেন। পিজিটি ভ্যানিলা কৃষ্ণন, প্রিয়া গিরি, পুজা রাইয়েরও একই বক্তব্য।পিজিটি অর্কর বক্তব্য, মোবাইলের আলো নয়। স্টেথোস্কোপ দিয়ে হার্টবিট চেক করেন ডক্টর সুমিত রায় তপাদার। রাতের ডিউটিতে অন্য চার সহকর্মীর মধ্যে একমাত্র অর্কই জানিয়েছেন, তিনি রাতে সেমিনার রুমে লাল কম্বল গায়ে তিলোত্তমাকে ঘুমোতে দেখেছেন। সকালে অর্ধনগ্ন অবস্থায় চিকিৎসক ছাত্রীর দেহ দেখার পরে সুমিত রায় তপাদার চাদর দিয়ে দেহ ঢাকার জন্য বলেছিলেন। গাঢ় নীল চাদর দিয়ে দেহ ঢেকেছিলেন পিজিটি পুজা রাই। তাহলে তিলোত্তমার বাবার কাছে থাকা ছবিতে সবুজ চাদর এল কী ভাবে?
লাল কম্বলের কোনও উল্লেখ সুমিত রায় তপাদার, প্রিয়া গিরি, ভ্যানিলা কৃষ্ণন, পুজা রাইয়ের বক্তব্যে নেই।এই চারজনই সিবিআইকে জানিয়েছেন, মৃতার মোবাইল, ল্যাপটপ দেহের পাশে যথাযথ অবস্থায় ছিল।পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট অনুযায়ী, গলা টিপে, শ্বাসরোধ করে তিলোত্তমাকে খুন করা হয়। প্রশ্ন, নিজেকে বাঁচাতে বিন্দুমাত্র চেষ্টা করলেও দেহের পাশে মোবাইল, ল্যাপটপ, জুতোর যথাস্থানে থাকা কী ভাবে সম্ভব?
এক্ষেত্রে পুলিশের কাছে অভিযুক্ত সিভিকের বয়ানের মধ্যেও প্রাসঙ্গিক একই প্রশ্ন। টিভি নাইনের হাতে রয়েছে সেই নথিও। দু’দফায় সঞ্জয়ের বয়ান রেকর্ড করেছে কলকাতা পুলিশ। সেই বয়ানেও তিলোত্তমা ‘ছটফট’ করছিল, ‘মাথা ঝাঁকাচ্ছিল’ বলে জানিয়েছে অভিযুক্ত সিভিক। সে নিজে এ কথা বললে মৃতার ল্যাপটপ, মোবাইল, জুতো যথাস্থানে কী ভাবে তার ব্যাখ্যা নেই কেন? দু’দফার বয়ানের মধ্যে দ্বিতীয় বয়ানে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেছে অভিযুক্ত। সূত্রের খবর, এই বয়ানে সই করতে অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত।প্রশ্ন, ঘটনাক্রমের দ্বিতীয় বিবরণীতে কেন সিভিক সই করতে রাজি হল না?