AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Dilip Ghosh: দিলীপের অবিশ্বাস্য ‘টাইমিং’, রাতের বদলে দিনে বিয়ে করে বুঝিয়ে দিলেন কেন তিনি আগমার্কা RSS

Dilip Ghosh: দীর্ঘ সময় আরএসএস প্রচারক হিসাবে নিজের জীবন অতিবাহিত করেছেন দিলীপ ঘোষ। ২০১৫ সালে বিজেপিতে প্রবেশ। বিয়ের খবর সামনে আসতে আসতেই শোনা গিয়েছিল আরএসএসের কিছু কর্তা তাঁকে বিয়েতে ‘না’ করেছিলেন। তবে দিলীপ নাকি বলেছিলেন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। আর মত বদলাবে না।

Dilip Ghosh: দিলীপের অবিশ্বাস্য 'টাইমিং', রাতের বদলে দিনে বিয়ে করে বুঝিয়ে দিলেন কেন তিনি আগমার্কা RSS
দিনে বিয়ে করার কারণ নিয়ে কী বলছেন দিলীপ ঘোষ?Image Credit: TV9 Bangla
| Updated on: Apr 25, 2025 | 2:23 PM
Share

কলকাতা: দিলীপ ঘোষের বিয়ে। এই তিনটি আপাত নিরীহ শব্দই বিগত তিনদিন ধরে বাংলার আকাশ-বাতাস মথিত করে রেখেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে চোখ রাখলেই খবরটি কী পরিমাণ গুরুত্বের সঙ্গে পরিবেশিত হয়েছে, তা সহজেই বোঝা যায়। কিন্তু, কেন এই বিয়ে নিয়ে এমন আলোড়ন? অনেকদিক থেকে অনেকরকম কারণ উল্লেখ করা যেতেই পারে। তবে এর মধ্যে অন্যতম কারণটি হল, বাল্যকাল থেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে যোগ দিয়ে পরবর্তীকালে প্রচারক হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে একাধিক দায়িত্বে উত্তীর্ণ হওয়া কাঠখট্টা স্বভাবের বর্তমানে একষট্টি বছর বয়সী দিলীপ ঘোষের বিয়ের খবরটি বাঙালি এবং গৈরিক পাকস্থলীতে ঠিক হজম হয়নি। মূলত সেই কারণেই এই খবরের যাবতীয় তাৎপর্য। এর উপর আবার দিলীপ ঘোষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এক বিবাহ বিচ্ছিন্না একলা মায়ের সঙ্গে। অনেকের মতেই এই গোটা ব্যাপারটা আরএসএস প্রচারক দিলীপ ঘোষের যে ভাবমূর্তি, তার সঙ্গে একেবারের বেখাপ্পা। এই নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা, টিপ্পনি, রাজনীতির অলিন্দে ও সোশ্যাল মিডিয়ার আনাচে কানাচে ভেসে আসছে অহরহ। কিন্তু, বিবাহের টাইমিংয়ের মধ্য দিয়েই আসল মাস্টারস্ট্রোকটি খেলে দিলেন আরএসএসের এই ঘরের ছেলে। দিলীপ নিজেই বলেছেন, বিয়ে এবং পরের দিন জন্মদিন পালন এই সামগ্রিক ব্যাপারটা তাঁর কাছে টি২০ ম্যাচের মতো। অর্থাৎ দিলীপ যে খেলতে নেমেছেন, সেকথা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। আর ক্রিকেটের মতো খেলায় টাইমিং যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বিলক্ষণ জানেন বহু ম্যাচে রুক্ষ উইকেটে ব্যাট করে আসা দিলীপ ঘোষ। সহজ কথায়, হিন্দু বাঙালি বিবাহ অনুষ্ঠান সূর্যাস্তের পরই দেখতে অভ্যস্ত সকলে। কিন্তু, সেপথে হাঁটেননি দিলীপ। মূল বিবাহের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান দিলীপ সেরেছেন দিনেদুপুরে। কিন্তু, কেন? এখানেই টাইমিং। আর এখানেই তিনি দিলীপ ঘোষ। কেন বলা হচ্ছে সেকথা এবার আসছি।

আর মত বদলাবে না…

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ সময় আরএসএস প্রচারক হিসাবে নিজের জীবন অতিবাহিত করেছেন দিলীপ ঘোষ। ২০১৫ সালে বিজেপিতে প্রবেশ। বিয়ের খবর সামনে আসতে আসতেই শোনা গিয়েছিল আরএসএসের কিছু কর্তা তাঁকে বিয়েতে ‘না’ করেছিলেন। তবে দিলীপ নাকি বলেছিলেন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। আর মত বদলাবে না। মানে ‘ওই ম্যাঁ নে এক বার জো ম্যায় কমিটমেন্ট কর দি…’। দিলীপের যুক্তি তিনি আর আরএএসএসের প্রচারক নেই। আরএসএস-ই তাঁকে ওই কাজ থেকে মুক্তি দিয়েছে। এখন ভগবানের ইচ্ছাতেই তিনি সংসারী। তবে ‘স্টেপ জাম’ হয়েছে। হাসিমুখে নিজেই বলছেন, চতুরাশ্রমে বানপ্রস্থের পরে আসে ব্রহ্মচর্য, তারপর গার্হস্থ্য তারপর সন্ন্যায় । কিন্তু, তিনি সন্ন্যাসের পরে ‘গার্হস্থ্যে’ পা দিয়েছেন। কিন্তু, বিয়ের ক্ষেত্রে মানছেন আরএসএসের রীতি।

‘আমি আমার জীবন দিয়ে একটা উদাহরণ তৈরি করেছি’

দিলীপ বলছেন, “এখন সঙ্ঘ একটা নতুন প্রয়োগ শুরু করেছে। নাম দেওয়া হয়েছে কুটুম্ব প্রবধন। হিন্দু পরিবারের সংস্কারকে ফিরিয়ে আনার জন্য নতুন যোজনা চলছে। তারপর মধ্যে একটা যোজনা আছে। হিন্দু সমাজ আগে রাতে বিয়ে করতো না। গোটা দেশেই দিনের বেলা বিয়ে করতো। মোঘল আক্রমণ, বিদেশি আক্রমণের পরে যে আক্রমণ শুরু হয় তখন থেকে রাতে লুকিয়ে বিয়ে করা শুরু হয়। দক্ষিণ ভারতে এখনও দিনের বেলা বিয়ে হয় মন্দিরে মন্দিরে। সে কারণে আমার ইচ্ছা ছিল সঙ্ঘে এই বিচারকে প্রতিফলিত করার।” দিলীপের সাফ কথা, ‘সুযোগ’ এসেছে, তিনি নষ্ট করতে চাননি। তাঁর কাজ দেখে যাতে মানুষ শেখে সেই চেষ্টাও করেছেন বিয়েতে। বলছেন, “আমি তো আগে বিয়ে করতে পারিনি। তাই বিয়ে যখন করলাম তখন সেই রীতিকে মেনে বিয়ে করলাম। সে কারণে গোধূলি লগ্ন মানে সূর্যাস্তের আগে বিয়ে শুরু হোক চেয়েছি। এখানে আমি সঙ্ঘে আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছি। আমি আমার জীবন দিয়ে একটা উদাহরণ তৈরি করেছি যাতে মানুষ এটা অনুসরণ করতে পারেন।”

বারবারই ফিরে যান স্মৃতির পাতাতেও। কীভাবে আজীবন আরএসএসের আদর্শকে নিজের জীবনের পাথেয় করেছেন সে কথাও বারবার বলেন পুষ্পলতার ছেলে। দিলীপের সাফ কথা, এই কায়দায় বিয়ে করে তিনি উদাহরণ তৈরি করতে চেয়েছেন। সেটাই করেছেন। বলছেন, “আরএসএসে আমি একদম কিশোর বয়সে এসেছি। তখন সঙ্ঘর্ষের আদর্শ-নীতি জানতাম না, সঙ্ঘের আকর্ষণে-ভালবাসায় এসেছিলাম। কিন্তু, তখন থেকে সঙ্ঘের আদর্শকে নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠা করে উদাহরণ তৈরি করার চেষ্টা করেছি। আগে আমি সঙ্ঘের প্রচারক ছিলাম। তখন তো সবসময় প্রচার করতাম। তারপর আমি বিজেপিতে এলাম। বিধায়ক, সাংসদ হলাম। তাও আমি সঙ্ঘের শাখা, নিউটাউন, সল্টলেকে নিয়মিত যাই। আসলে সঙ্ঘের নীতি-আদর্শেই নীতি-আদর্শ করেছি।”

‘খেয়াল রাখতে হবে হিন্দু সংস্কারকে যেন দূষিত না করি…’

দিলীপের মতে হিন্দুদের তাঁদের সংস্কারের প্রতি নতুন করে মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। মূলে ফিরে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। খানিক উপদেশের সুরেই বলছেন, “বিবাহ সংস্কার একটা বড় সংস্কার। তার উপরে পুরো সমাজ, পরিবার, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দাঁড়িয়ে আছে। আমি মনে করি, হিন্দু সংস্কার ফিরিয়ে আনার জন্য সকলের সহযোগিতা করা উচিত। অত রাত না জেগে, মাতলামি, নাচ-গান না করে বিয়ে করুন এই নিয়মে। বিয়ে শুরু করুন দিনের বেলায়। খাওয়া-দাওয়া আনন্দ অবশ্যই করুন রাতে। কিন্তু হিন্দু সংস্কারকে যেন দূষিত না করি। সে জন্য নিজের জীবনে এটা করে দেখাতে হবে।”