
কলকাতা: সোনা ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যা খুনে চাঞ্চল্যকর তথ্য। নিউ টাউনের AB67 জি প্লাস ফোর বাড়িটিতে সারমেয় দেখাশোনার এবং কেয়ারটেকারের কাজ করতেন অশোক কর। অশোক করের জামাই বিডিও প্রশান্ত বর্মনের গাড়ি চালাতেন। পাঁচ লক্ষ টাকা চুরি করার অপরাধে তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গত ৯ জুলাই বাড়ি থেকে প্রায় ৬০০ গ্রাম সোনা চুরি যায়। সেই ঘটনা নজরে আসে গণেশ পুজোর দিন, যেদিন বিডিও প্রশান্ত বর্মন কলকাতায় এসেছিলেন।
তদন্তে উঠে এসেছে, কেয়ারটেকার অশোক কর চলতি বছরের ৯ জুলাই নিউটাউনের বাড়ির আলমারি থেকে সোনা চুরি করে সেই সোনা বিক্রি করে দত্তাবাদের স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্লার কাছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ঘটনার পর অশোক করকে নিয়ে প্রশান্ত বর্মন দু’বার যায় দত্তাবাদের সোনার দোকানে, কিন্তু দোকান বন্ধ থাকায় সরাসরি দেখা মেলেনি, তাই ফোন মারফত যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু অগস্ট মাসেই মেদিনীপুরে স্বপন কামিল্লার বাড়ি যান বিডিও প্রশান্ত বর্মন।
গত ২৭ তারিখ প্রশান্ত বর্মনের প্রেমিকার জন্মদিন পালন করা হয় নিউটাউনের বাড়িতে। সেখানেই উপস্থিত ছিলেন বিডিও প্রশান্ত বর্মন, রাজগঞ্জের ব্লক সভাপতি সজল সরকার, প্রশান্তর প্রেমিকার বাবা তুফান থাপা সহ বেশ কয়েকজন।
পরের দিন, ২৮ অক্টোবর সকাল থেকেই খাওয়া-দাওয়া চলছিল ফ্ল্যাটে। সেই মতো ফ্ল্যাটের মধ্যেই রান্নাবান্না করা হয়। এরপরই মোবাইল থেকে ফোন করে স্বপন কামিল্যাকে সোনার দোকানে ডাকা হয়। পুরো বিষয়টা বসে মিটিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়। দুটি গাড়িতে করে সল্টলেকের দত্তাবাদে সোনার দোকানে গিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যা এবং সোনার দোকানের মালিককে অপহরণ করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় নিউ টাউনের এবি ৬৭ বাড়িতে।
বাড়ির নীচের তলায় স্বপন কামিল্যাকে রাখা হয় দোতলায়। খাওয়া-দাওয়া এবং মদ্যপান চলে দেদার। পরবর্তীতে মত্ত অবস্থায় দেদার মারধর করা হয়। লাঠি, কোমরের বেল্ট, চড়, ঘুসি মারা হয় এলোপাথাড়ি। পুরো ঘটনাটি বাড়ির নীচের তলায় ঘটেছে বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
মারধরের ছবি রেকর্ড করে রাখা হয় রাজু ঢালীর মোবাইলে। সেই মোবাইল পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। সেখানে দেখা গিয়েছে মারধরের ঘটনাস্থলে উপস্থিত তুফান থাপা, সুলক্ষণা দাস, সজল সরকার ও বিডিও প্রশান্ত বর্মন। অভিযোগ, মদ্যপ অবস্থায় মারধর করার ফলেই মৃত্যু হয় স্বপন কামিল্যার। পরবর্তীতে বিডিও প্রশান্ত বর্মনের নির্দেশে সাদা ইনোভা, নীল বাতি লাগানো গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে যায় রাজু ঢালী এবং যাত্রাগাছি বাগজোলা খালের ঝোপে ফেলে দেয় দেহটি।
গত ২৯ অক্টোবর সকালে পথচলতি মানুষ ওই দেহ দেখতে পেয়ে খবর দেয় নিউ টাউন থানায়। নিউ টাউন থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই প্রশান্ত বর্মণ নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।