সমাজ থেকে চিরকালই বঞ্চিত তাঁরা। তাঁদের পাড়া থেকে মাটি এনে পুজো করা হলেও সেই পুজোতে কোনও রকম অধিকারই থাকে না যৌন পল্লীর মহিলাদের। সারা বছর অন্ধকারে থাকলেও বছরের একটা দিন তাঁদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা হল কার্তিক পুজো।
কলকাতার সোনাগাছিতে কার্তিক পুজোর চল আজকের নয়। বহুকাল ধরেই এখানে পূজিত হয়ে আসছেন কার্তিক ঠাকুর।
কিন্তু কার্তিক ঠাকুরের পুজো তো করা হয় কার্তিকের মতো সুদর্শন পুত্র লাভের আশায়। তাই জন্যই নতুন কোনও দম্পতির বিয়ে হলে তাঁদের বাড়িতে কার্তিক ঠাকুর ফেলার চল রয়েছে। তাহলে সোনাগাছিতে হঠাৎ কী ভাবে শুরু হল কার্তিক পুজো? জানালেন দীর্ঘদিন ধরে যৌন কর্মীদের নিয়ে কাজ করে চলা এবং ‘আমরা পদাতিক’-এর অ্যাডভোকেসি অফিসার মহেশ্বেতা মুখোপাধ্যায়।
সোনাগাছিতে কার্তিক পুজোর চল আজকের নয়। বহু বছর ধরেই সোনাগাছিতে যৌন কর্মীদের ঘরে ঘরে পূজিত হয়ে আসছেন কার্তিকেয়। মহেশ্বেতা দেবী বলেন, “সোনাগাছিতে ঘরে ঘরে যৌনকর্মীরা কার্তিক পুজো করেন। এই দিনটা ওঁদের কাছে খুব আনন্দের। বিরাট আয়োজন, পুজো করা, খাওয়া দাওয়া, নাচ-গানের মাধ্যমে কার্তিক পুজো উদযাপন করেন।”
কিন্তু কেন কার্তিক ঠাকুরকে নিয়ে এত রমরমা সোনাগাছিতে?
মহেশ্বেতা দেবী বলেন, “আমার মনে হয় এর পিছনে ৩টি কারণ আছে। প্রথমত যৌন কর্মীরা তো সমাজচ্যুত। অন্যদিকে দুর্গা পুজোর সঙ্গে কার্তিক পুজো হলেও এক সময়ে তা ছাড়া খুব একটা কার্তিক পুজোর চল ছিল না। তিনিও বঞ্চিতই। তাই কার্তিক ঠাকুরকে আপন করে নিয়েছেন যৌন কর্মীরা। তাঁরা হয়তো নিজের সঙ্গে কার্তিককে রিলেট করেন।”
তিনি বলেন, “যৌন কর্মীদের মধ্যে অনেকেই আইবুড়ো। তাঁদের কাছে অনেক অবিবাহিত পুরুষও আসেন। যৌন কর্মীদের বাসনা থাকে তাঁদের কাছেও যেন কার্তিকের মতো সুন্দর অবিবাহিত পুরুষ আসেন। তাঁকে তাঁরা বর হিসাবে পেতে প্রার্থনা করেন। সেই ভাবনা থেকেই কার্তিক পুজো করেন অনেকেই।”
কেবল অবিবাহিত নয়, বহু বিবাহিত মহিলাও স্বামী-সংসার ছেড়ে চলে আসেন এই যৌন পল্লীতে। তাঁরাও কার্তিক পুজো করেন। মহেশ্বেতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “হয়তো তাঁরা আরও একবার সন্তান লাভের আশায়, কার্তিকের পুজো করেন। আহ্বান জানান কার্তিক ঠাকুরকে, তাঁর সন্তান হিসাবে জন্ম নেওয়ার জন্য।”
এই বছর সোনাগাছির কার্তিক পুজো একটু আলাদা। এই বছর পুজোর আনন্দ দ্বিগুণ। কারণ এত দিন যে পুজো যৌন কর্মীদের ঘরে ঘরে হতো, সেই পুজোই এখন বাড়ির ঘরের গন্ডি ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। এই বছর প্রথম ‘আমরা পদাতিক’ আয়োজন করেছে সোনাগাছির প্রথম বারোয়ারি কার্তিক পুজোর। মহাশ্বেতা দেবী বলেন, “সংস্থার ছেলে মেয়েরাই টাকা তুলে পুজোর ব্যবস্থা করেছে। সোনাগাছিতে বারোয়ারি কার্তিক পুজো এই প্রথম।” সোনাগাছির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এগিয়ে এসেছেন সমাজ সেবক থেকে রাজ্যের মন্ত্রীও। পুজোর উদ্বোধন করবেন নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।