
সায়ন্ত ভট্টাচার্যের রিপোর্ট
কার্যত ইতিহাস তৈরি করতে চলেছে কলকাতা মেট্রো। একইসঙ্গে তিন নতুন রুটে মেট্রো যাত্রা শুরু হতে চলেছে। হাওড়া ময়দান থেকে সোজা সেক্টর ফাইভ, নোয়াপাড়া থেকে কলকাতা বিমানবন্দর, নিউ গড়িয়া থেকে বেলেঘাটা। এরমধ্যে সবথেকে বেশি কথা হচ্ছে হাওড়া সেক্টর ফাইভ মেট্রো নিয়েই। বলা যেতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বাস, ট্রেন, ট্রাম, সর্বত্রই যেন হট কেক। চর্চা তুঙ্গে। কিন্তু হাওড়া স্টেশনে নেমে কীভাবে ধরবেন সেক্টর ফাইভের মেট্রো, মোট ক’টা স্টেশন পাড়ি দিতে হবে, কত ভাড়া?
মাত্র ১১ মিনিটে শিয়ালদহ
এতদিন শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভ মেট্রো চালু হয়েছিল। গঙ্গার নিচ দিয়েও গড়িয়েছে মেট্রোর টাকা। কিন্তু, মেট্রো চেপে হাওড়া থেকে সেক্টর ফাইভ যাওয়া এতদিন সম্ভব ছিল না। শুধু তাই নয়, হাওড়া থেকে শিয়ালদহ থেকে বাসে বা ট্যাক্সিতে যেখানে দীর্ঘ সময় লেগে যায় তাই এবার যাওয়া যাবে মাত্র ১১ মিনিটে। পার করতে হবে না জ্যাম। অন্যদিকে ক্যাবের ভাড়া গুনতে গিয়েও আর চাপ পড়বে না পকেটে। পাড়ি দিতে হবে মাত্র দুটো স্টেশন। হাওড়া স্টেশন থেকে মেট্রো ধরবেন তারপরই চলে আসবে মহাকরণ, তারপরই আসবে এসপ্ল্যানেড। আর তারপরই শিয়ালদহ। সোজা কথায়, এবার মেট্রোর ১১ মিনিটের সুতোতেই জুড়ে যাচ্ছে রাজ্য তো বটেই গোটা দেশের অন্যতম প্রধান দুই ব্যস্ততম স্টেশন। ফলে অফিস যাত্রীদের যে খুবই সুবিধা হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এদিকে খুব বেশি ট্র্যাফিকের চাপ না থাকলে ক্যাবে হাওড়া স্টেশন থেকে সেক্টর ফাইভের ভাড়া কমবেশি ২০০ থেকে আড়াইশো টাকা। আর বৃষ্টি হলে বা ট্র্যাফিকের চাপ বেড়ে গেলে তো কথাই নেই। সার্জ চার্জ হু হু করে বেড়ে যায়। অন্যদিকে বাইক বুক করলে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। সেখানে হাওড়া স্টেশন থেকে শিয়ালদহ যেতে মেট্রোতে ভাড়া লাগতে পারে মাত্র ২০ টাকা। হাওড়া স্টেশন থেকে ফুলবাগান, সল্টলেক স্টেডিয়ামেরও একই ভাড়া।
তবে সল্টলেক স্টেডিয়ামের পরেই ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে আরও ১০ টাকা। হাওড়া স্টেশন থেকে বেঙ্গল কেমিক্যালসের ভাড়া হতে পারে ৩০ টাকা। হাওড়া স্টেশন থেকে সিটি সেন্টার, সেন্ট্রাল পার্ক, করুণাময়ী, সেক্টর ফাইভের ক্ষেত্রেও হতে পারে একই ভাড়া। অর্থাৎ ৩০ টাকা।
মাত্র ৩৫ মিনিটে সেক্টর ফাইভ
এদিকে কলকাতা হোক বা শহরতলি, সেই কবে থেকে আম-আদমির যাতায়াতের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম লোকাল ট্রেন। সে বনগাঁ হোক বা বেলমুড়ি, বর্ধমান হোক বা বারাসত, কম খরচে শহরতলি বা মফঃস্বলে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই লোকাল ট্রেনের জুড়ি মেলা ভার। অফিস হোক বা ব্যবসায়িক প্রয়োজন, দৈনন্দিন কাজ, প্রত্যেকদিন লাখ লাখো মানুষ এই লোকালে চড়ে শহর-শহরতলিতে পাড়ি দেন। পূর্ব রেলের পরিসংখ্যান বলছে, প্রত্যহ অর্থাৎ ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে প্রতিদিন ১২৬৫টি সাব-আরবান ট্রেন চলাচল করে। তবে সংখ্যার বিচারে শিয়ালদহের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে হাওড়া। তথ্য বলছে, হাওড়া থেকে প্রতিদিন ৩৮০টি সাব-আরবান ট্রেন চলাচল করে। সেখানে শিয়ালদহ থেকে প্রতিদিন ৮৮৫টি লোকাল ট্রেন যাতায়াত করে। তবে স্টেশনে নামার পর বাস ট্যাক্সি ধরা ছাড়া কোনও উপায় এতদিন ছিল না। এবার মেট্রো এসে যাওয়ায় সেই যাত্রাই আরও সুগম হতে চলেছে। শেষ হতে চলেছে অপেক্ষার প্রহর। কারণ ৬ থেকে ৮ মিনিট অন্তর অন্তর পাওয়া যাবে মেট্রো। তবে চাপ যে কয়েকগুণ বেড়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে আপনি যদি হাওড়া স্টেশন থেকে বাস ধরে সেক্টর ফাইভে আসতে চান তাহলে রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা থাকলেও আপনার ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টার কাছাকাছি লেগে যায়। অন্যদিকে ক্যাবে মানে ট্যাক্সিতে যদি আপনি সোজা হাওড়া স্টেশন থেকে সেক্টর ফাইভ যান তাহলে নন-এসিতে চোখ বুঝে ৫০০। আর এসি হলে তো কথাই নেই। পাশাপাশি বাইক বুক করলেও ভাড়া নেহাৎ কম নয়। রাস্তা ফাঁকা থাকলে, বৃষ্টি-বাদলা না হলে আপনার ভাড়া হতে পারে ১২০ থেকে দেড়শো টাকার মধ্যে। আর সার্জ চার্জ জুড়ে গেলে তো কথাই নেই। সেখানে মেট্রোতে মাত্র ৩০ টাকা দিলেই সোজা সেক্টর ফাইভ। যেতে টাইম লাগবে ৩৫ মিনিট।
চর্চায় আরও দুই রুট
তবে হাওড়া সেক্টর ফাইভ ছাড়াও চর্চায় রয়েছে নোয়াপাড়া থেকে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন রুট। অন্যদিকে এবার নিউ গড়িয়া থেকে বেলেঘাটা সোজা যাওয়া যাবে। আগে যাওয়া যেত শুধু রুবি পর্যন্ত। নোয়াপাড়া থেকে কলকাতা বিমানবন্দর বা জয় হিন্দ মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত যে রুট চালু হবে, সেটি অতিক্রম করবে প্রায় ৬.২৫ কিলোমিটার। মেট্রো সূত্রে খবর, এই রুটে দু’টি মেট্রোর মধ্যে সম্ভাব্য সময়ের ফারাক থাকবে ১৫ মিনিট। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে যশোর রোড যেতে হলে দিতে হবে ৫ টাকা। এয়ারপোর্ট থেকে দমদম ক্যান্টনমেন্ট যেতে হলে দিতে হবে ১০ টাকায কলকাতা বিমানবন্দর থেকে নোয়াপাড়া যেতে হলে দিতে হবে ২০ টাকা।
অন্যদিকে কবি সুভাষ অর্থাৎ নিউ গড়িয়া থেকে রুবি পর্যন্ত মেট্রো চালু রয়েছে। এবার সেই রুটই বিস্তৃত হচ্ছে বেলেঘাটা পর্যন্ত। সব মিলিয়ে নিউ গড়িয়া থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত মেট্রো চলবে এবার। মোট ৯.৭৯ কিলোমিটার পথ। এই রুটে ২০ মিনিট অন্তর মেট্রো চলবে বলে জানা যাচ্ছে।
কবি সুভাষ থেকে সত্যজিত রায় মানে হাইল্যান্ড পার্ক পর্যন্ত যেতে হবে ৫ টাকা। মুকুন্দপুর পর্যন্ত গেলে দিতে হবে ১০ টাকা। কবি সুকান্ত মানে কালিকাপুর পর্যন্ত যেতে হলেও একই টাকা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মানে রুবি পর্যন্ত ২০, ভিআইপি বাজার, ঋত্বিক ঘটক মানে উত্তর পঞ্চান্ন পর্যন্তও ২০ টাকা। সায়েন্স সিটি, বেলেঘাটা পর্যন্তও তাই।
প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে চিংড়িহাটা নিয়ে
চালু তো হচ্ছে, উন্মদনাও চরমে। এখন দেখার দিনের শেষে কতটা ঠিকঠাক পরিষেবা পাওয়া যায়, কী বলেন অফিস যাত্রীরা। এরপর আর কোন কোন নতুন রুট পায় শহর। তবে এরইমধ্যে কিন্তু চিংড়িহাটা নিয়ে উদ্বেগের কথা শুনিয়ে রেখেছেন মেট্রো কর্তারা। সেই রুটই বা কবে চালু হয় সেটা দেখার।