Bibhas Adhikari: ‘আমি কেউটের বাচ্চা, খুন করতে পাঁচ লাখ লোক লাগে না, একজনই কাফি’, হুমকি বিভাসের
Bibhas Adhikari: সাংবাদিকরা পাল্টা কোনও প্রশ্ন করতে উদ্যত হলে বিভাস কার্যত হুমকির সুরে বলেন, "কাউকে খুন করতে পাঁচ লক্ষ লোকের দরকার পড়ে না, একজনই কাফি।"
বীরভূম: আশ্রমে সাংবাদিককে আটকে রেখে মারধর, ক্যামেরা ভাঙা, হুমকি-নিগ্রহ সবই হল। সাংবাদিকের সামনে ক্ষমাও চাইলেন। আবার ঘটা করে নলহাটির বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সাংবাদিকদেরই হুমকি দিলেন নিয়োগ দুর্নীতিতে সদ্য উঠে আসা বিতর্কিত ব্যক্তি বিভাস অধিকারী। তিনি বললেন, “খুন করতে পাঁচ লাখ লোক লাগে না, একজনই যথেষ্ট।” একেবারে নিরুত্তাপ ভাবেই বললেন, “আমিও কেউটের বাচ্চা। প্রয়োজনে পাঁচ লাখ লোক যখন তখন জড়ো করে দিতে পারি। ব্রিগেডে আন্দোলন করতে পারি।”
নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে গোপাল দলপতির মুখে উঠে এসেছে বিভাস অধিকারীর নাম। তারপর থেকেই বহু চর্চিত এই ব্যক্তি। বিভাসনামা তলিয়ে দেখতে গিয়ে উঠে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাঁর বৈভবের কথা। নলহাটিতে তাঁর বিপুল সাম্রাজ্য। আগে বামপন্থী ছিলেন তিনি। বিভাসের বাবা ছিলেন সিপিএমের অঞ্চল প্রধান। পরে তৃণমূলের সঙ্গে সখ্য। ২০০৭ সাল থেকে চিটফান্ডের কারবার ফুলেফেঁপে ওঠে বিভাসের। ২০০৮ সালে এলাকায় তৈরি করে ডিএলএড কলেজ। এরইমাঝে বাংলাদেশের হিমায়েতপুর গ্রামের অনুকুল ঠাকুরের বাড়ির আদলে তৈরি করেন আশ্রম। এই সংগঠনকে নিয়ে খবর করতে গিয়েই আক্রান্ত হতে হয় TV9 বাংলার প্রতিনিধিকে।
বিভাস নলহাটির ২ নম্বর ব্লক সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি তিনি সেই পদ ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে চিঠি দেন। কিন্তু সেই চিঠি গৃহীত হয়নি। তিনি আবার অনুব্রত মণ্ডলেরও ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে। তাঁর পারিবারিক অনুষ্ঠানে অনুব্রত মণ্ডল-সহ জেলার শীর্ষ নেতাকে দেখা গিয়েছে। এদিকে, আবার কৈলাস বিজয়বর্গীয় ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানেও অর্ঘ্যকে দেখা যায়। বিজেপির শীর্ষস্তরের নেতাদের সঙ্গে তাঁর ছবিও রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, দুর্নীতিতে বিভাসের হাত তাপস মণ্ডলের থেকেও অনেকটা লম্বা। কলকাতার কার্তিক বোস স্ট্রিটের ধারে বিভাস অধিকারীর ফ্ল্যাটে মঙ্গলবার তল্লাশি চালায় ইডি। সেই তল্লাশি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি সবরকম ভাবে ইডি সিবিআইকে সহযোগিতা করতে রাজি আছি। যা যা অ্যাকাউন্ট নম্বর চেয়েছিল, সব দিয়েছি। যে কোনও অবৈধ কিছু থাকলেই আমি জেলে যেতে প্রস্তুত। ইডি সব দেখে ভীষণ খুশি। আমি সার্টিফিকেটও দিয়ে দিয়েছে। ওটা স্পিরিট্যুয়াল এনভারমেন্ট।” কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের সুনাম করে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় ইডি-সিবিআই-এর তদন্ত প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ। তারা আইন মেনে কাজ করেন।”
এরপরই সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিভাস বলেন, “কিছু সংবাদমাধ্যম আদা জল খেয়ে লেগে পড়েছে আমার পিছনে আমার ক্ষতি করব বলে। কিন্তু আমারও প্রচুর ভক্ত। লক্ষ লক্ষ ভক্ত আসেন এই আশ্রমে। আমিও চাইলে ৫ লক্ষ লোক যখন তখন জোগার করতে পারি। প্রয়োজনে এই লোক নিয়ে গিয়ে ব্রিগেড ভরাট করতে পারি।”
এমন বক্তব্যের পরেই সাংবাদিকরা পাল্টা কোনও প্রশ্ন করতে উদ্যত হলে বিভাস কার্যত হুমকির সুরে বলেন, “কাউকে খুন করতে পাঁচ লক্ষ লোকের দরকার পড়ে না, একজনই কাফি।”
বিভাসের এদিনের কথাতেও উঠে আসে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি দাবি করেন, “আশ্রম উদ্বোধন করতে মুখ্যমন্ত্রী আসতে পারেননি বলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাঠিয়েছিলেন। তাই অনেকে ভাবছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় আমার কাছের মানুষ, আর কলেজ চালাতে গিয়ে মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অবশ্যই ছিল।” বিভাস বলেন, “আমরা আশ্রমকে সকলকে যথেষ্ট সম্মান করি। কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম, TV9 -এর মতো সংবাদমাধ্যম অশালীন আচরণ করেছিল, যেটা এলাকার ভক্তদের ভালো লাগেনি। তাও আমি বলেছি, যদি আমার ছেলেরা কোনও অপরাধ করে থাকে, আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কিন্তু আমার ছেলেরা কোনও মারধর করেনি। ভক্তরা দু-এক থাপ্পড় দিতে গিয়েছে। ছেলেরা আটকেছে। মন্দিরে খাওয়াদাওয়া করিয়ে পাঠিয়েছে।” বিভাসের দাবি, এটা একটা চক্রান্ত। আশ্রমকে কলঙ্কিত করা।