Kalkokkho: ‘পথের পাঁচালী’র পরিবেশনার দায়িত্বে থাকা প্রযোজনা সংস্থা ফিরছে ছবি-নির্মাণে, ফিরবে কি বাংলা ছবির হাল?

'কালকক্ষ' (House of Time) ছবি নিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে আবার ফিরছে অরোরা ফিল্মস কর্পোরেশন। সংস্থার বর্তমান কর্ণধার অঞ্জন বসুর দাবি বাংলা ছবির হাল বদলাতে আসছেন তাঁরা।

Kalkokkho: 'পথের পাঁচালী'র পরিবেশনার দায়িত্বে থাকা প্রযোজনা সংস্থা ফিরছে ছবি-নির্মাণে, ফিরবে কি বাংলা ছবির হাল?
'কালকক্ষ' ছবির দৃশ্য
Follow Us:
| Updated on: Mar 02, 2022 | 6:47 PM

অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন-এর নতুন ছবি ‘কালকক্ষ’ (House of Time)। ৭২তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ইউরোপিয়ান ফিল্ম বিভাগে এই ছবি দেখানো হয়। ১০টি ভারতীয় ছবির মধ্যে একমাত্র বাংলা ছবি হিসেবে এই স্বীকৃতি পেয়েছে ছবিটি। প্রায় ৭০-৭৫ বছর পর আবার সিনেমা প্রযোজনায় এই প্রযোজনা সংস্থা। সংস্থার তৃতীয় প্রজন্ম অঞ্জন বসু। তাঁর দাবি, ‘কালকক্ষ’র হাত ধরে বাংলা ছবির ধারা বদলাবে।

এই দাবির পিছনে কী যুক্তি দেখাচ্ছেন অঞ্জনবাবু? একটু পিছনে ফিরে দেখা যাক। ১৯০৫ সালে অনাদিনাথ বসু শুরু করেছিলেন এই ফিল্ম সংস্থা। তিনি সিনেমার সরঞ্জাম নিয়ে স্থল ও নদী পথ দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছবি দেখানো শুরু করেন। তারপর শুরু করেন ছোট-ছোট ছবি। এল ১৯২১ সাল। সিনেমাটোগ্রাফার দেবী ঘোষকে নিয়ে তাঁদের সংস্থা তৈরি করল প্রথম নির্বাক ছবি ‘দস্যু রত্নাকর’। তাঁর মৃত্যুর পর সংস্থার দায়িত্ব নেন দুই পুত্র অজিত বসু এবং অরুণ বসু। এঁদের হাত ধরে আন্তর্জাতিক সম্মান আসে বাংলা ছবিতে। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ পরিবেশিত হয় দেশে-বিদেশে এই সংস্থার মাধ্যমেই। ‘পরশপাথর’ও পরিবেশন করে এই সংস্থা। এরপর সত্যজিৎ রায়ের ‘অপরাজিত’ প্রযোজনা করার দায়িত্বও নেন অজিত বসু। সেই সময় আরও অনেক ছবি যার মধ্যে ‘জলসাঘর’ও রয়েছে, প্রযোজনার দায়িত্ব নেন প্রয়োজকদ্বয়।

কিন্তু ধীরে-ধীরে সিনেমা প্রযোজনা থেকে দূরে সরে যায় সংস্থা। আবার নিজেদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে, সঙ্গে বাংলা ছবির বর্তমান পরিস্থিতি বদলাতে উদ্যোগী হয়েছেন অঞ্জন বসু। এমনটাই দাবি করলেন প্রযোজক। কিন্তু এতদিন পর প্রযোজনা করতে এসে একেবারে কোনও বড় মুখ ছাড়া ছবি করার কোনও বিশেষ কারণ? অঞ্জনবাবুর কথায়, “অরোরা ফিল্মসের পুরোনো ইতিহাস দেখলেই এর উত্তর পাওয়া যাবে। সত্যজিৎ রায়ের ছবি যখন আমরা পরিবেশন বা প্রযোজনা করি, তখন তাঁকে কে চিনত?”

‘কালকক্ষ’ (House of Time) ছবির পরিচালক থেকে অভিনেতা সকলেই কমবেশি নতুন মুখ। রাজদীপ পাল এবং শর্মিষ্ঠা মাইতি পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেছেন তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস,  শ্রীলেখা মুখোপাধ্যায়, অহনা কর্মকার, জনার্দন ঘোষ, অমিত সাহা প্রমুখ। কাস্টিং বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে অঞ্জন বসু আরও যোগ করলেন, “বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে একমাত্র বাংলা ছবি ‘কালকক্ষ’। এর আগে বুসান, ঢাকা, ভারতীয় প্যানোরমার মত চলচ্চিত্র উৎসবেও ছবিটি দেখানো হয়েছে। পুরস্কৃতও হয়েছে। এর থেকেই কী বোঝা যায় না আমরা নতুন করে ছবি প্রযোজনার ক্ষেত্রে যে পথ অবলম্বন করেছি, তাতে সাফল্য পাব?”

অরোরা ফিল্মস ঠিক করেছে বিভিন্ন ফিল্ম ইন্সটিটিউট থেকে পড়াশোনা করে যেসব ছেলে-মেয়ে আসছেন, তাঁদের নিয়ে ছবি করবে।এ বছর চারটে ছবি তৈরি করার কথাও জানালেন বর্তমান কর্ণধার। তাঁর কথায়, “এখন যাঁরা ছবি তৈরি করেন, তাঁদের বেশিভাগই সিনেমার বিষয়ে পড়াশোনা না করেই সিনেমা বানান। যার ফল সকলে দেখছে। আর এখন বাংলা সিনেমার সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রযোজনা। যাঁরা প্রযোজনা করছেন, তাঁরা কেউ সিনেমা শিল্পকে ভালোবাসেন না, শুধু ব্যবসা বোঝেন। তাই আজ বাংলা সিনেমার কোনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই।”

নতুন করে তাঁরা ছবি নিয়ে যে ভাবনা-চিন্তা করছেন, তা বোঝা গেল ছবির মিউজিক্যাল ট্রেলার দেখে। ছবির চরিত্রদের গানের মাধ্যমে দর্শকদের সামনে নিয়ে আসা হল। নতুন এই মিউজিক্যাল ট্রেলারে চরিত্রদের দেখা মিলল এক ভিন্ন অবতারে। ‘কালকক্ষ’ ছবি জুড়ে জড়িয়ে রয়েছে যে সময়ের রহস্য, সেই রহস্য যেন স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে বিয়াস সরকারের গাওয়া ‘এক বুড়ি, তিন মুড়ি’ গানে। গানটির সুর ও কথায় রয়েছেন পরিচালক-জুটির অন্যতম রাজদীপ পাল> গানের সঙ্গীত অনুষঙ্গ করেছেন অভিজিৎ কুন্ডু।

শুধু সিনেমা নয়, এই ফিল্ম সংস্থা নতুন করে স্টুডিয়োও তৈরি করেছে। এর আগে প্রথম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টুডিয়ো তৈরি করেছিল এই সংস্থা। এবার আধুনিকতম স্টুডিয়ো তৈরি করেছে সেক্টর ফাইভ-এ, জানালেন অঞ্জন বসু। অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন এক সময় বাংলা ছবির জগতে অন্যতম নাম ছিল। ‘কালকক্ষ’র হাত ধরে নিজেদের পুরনো জায়গা ফিরিয়ে আনার গুরুদায়িত্ব নিয়েছেন অঞ্জন বসু। সেই দায়িত্ব বাংলা ছবির সামগ্রিক দিককে কতটা বদলাতে পারবে, তা এখন সময়ের অপেক্ষা।