পটনা: বয়স তখন সবে ১২ বছর। স্কুলে ফি বাকি পড়ে যাওয়ায় কিছুটা ভীত ছিল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীটি। হঠাৎ করে একদিন প্রিন্সিপাল ম্যাডাম ডাকায় আরও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে সে। বিশেষত, স্কুলের ফি বাকি থাকার বিষয়টি জানানোয় প্রিন্সিপাল যখন তাকে লাইব্রেরির একটি ঘরের দিকে ডেকে নিয়ে যায়। প্রিন্সিপালের নির্দেশে গুটি-গুটি পায়ে সেই ঘরে ঢুকল ছাত্রীটি। সঙ্গে সঙ্গে ঘরটি অন্ধকার হয়ে যায় এবং দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপরই নেমে আসে বীভৎস অন্ধকার। হায়নার মতো ছাত্রীটির সামনে দাঁড়িয়ে প্রিন্সিপালের ছেলে। প্রথমে তার চুলের মুঠি ধরে টানে, তারপর তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিটকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে গেলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রিন্সিপাল। মহিলা হয়েও ছাত্রীর উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ জানানো দূরস্ত, সেটি প্রশ্রয় দিয়েছিলেন প্রিন্সিপাল। তিনি রীতিমতো দরজার বাইরে পাহারা দিচ্ছিলেন। সেই শুরু। তারপর টানা দু-বছর তার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে কিশোরীটি।
বিহারের সাহারসা জেলার এক বেসরকারি স্কুলের ছাত্রীটি প্রথমে ঘটনাটি ভয়ে, লজ্জায় কাউকে জানাতে পারেনি। তারপর একদিন প্রতিবাদ জানালেও ভীত হয়নি প্রিন্সিপাল বা তাঁর ছেলে। বরং পাল্টা সমাজে একঘরে করে দেওয়ার হুমকি দেয় সে। প্রিন্সিপালের অভিযুক্ত ছেলে ছাত্রীটিকে কেবল ধর্ষণ করেনি, ন্যক্করজনক সেই ঘটনার ভিডিয়ো মোবাইলে রেকর্ডও করেছে। সেই ভিডিয়ো ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইলও করত মা-ছেলে। ফলে মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করত নাবালিকাটি। বাড়িতে স্কুল বদল করার কথা বললেও মা-বাবা সে কথায় কর্ণপাত করতেন না। ফলে দিনের পর দিন অত্যাচারের শিকার হত সে।
টানা দু-বছর অত্যাচারের শিকার হওয়ার পর নিট প্রস্তুতির জন্য ছাত্রীটিকে পটনায় পড়তে পাঠায় তার পরিবার। তখন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে কিশোরী। কিন্তু, দু-বছর ধরে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় সে ট্রমাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। পটনায় হোস্টেলে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। অবশেষে হোস্টেলে যে ঘরে থাকত, সেই ঘরের সঙ্গীকে ঘটনার কথা প্রথম জানায় ছাত্রীটি। কিছুটা হাঁফ ছেড়েছিল কিশোরী। কিন্তু, একদিন সেখানেও প্রিন্সিপালের ছেলের ফোন আসে। সে পটনা এসেছে বলে জানায়। এরপর আর সহ্য করতে পারেনি কিশোরী। কয়েকবার প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হয় সে। হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। খবর পেয়ে কিশোরীর বাবা, মা সেখানে ছুটে আসেন। তখনও তাঁরা জানেন না, মেয়ে কী নির্যাতন সহ্য করছে!
পটনা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ছাত্রীটিকে মানসিক চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দেন। সেই মোতাবেক ছাত্রীটিকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরই গোটা ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। মেয়ের লাঞ্ছনার ঘটনা জানতে পেরে আর চুপ থাকেননি সরকারি চাকুরিজীবী বাবা। তিনি সাহারসা সদর থানায় অভিযোগ জানান। পুলিশ জানায়, স্কুলের প্রিন্সিপাল ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে পস্কো ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি জানতে পেরে এই বিষয়ে কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা।