পছন্দের সেলিব্রিটির মতো হতে আমরা সকলেই চাই। আমরা চাই তার মতো কাটাকাটা মুখশ্রী, চেহারা। কিছু কিছু ফ্যান তো আবার এমন আকাঙ্ক্ষায় প্লাস্টিক সার্জারিও (Plustic Surgery) করিয়ে ফেলেন! আমরা সবাই জানি, প্লাস্টিক সার্জারি অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ পদ্ধতি। সময় সাপেক্ষও বটে। যথেষ্ট যন্ত্রণাও সহ্য করতে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারির দরুণ প্রবল বিড়ম্বনাতেও পড়তে হয় কিছু ব্যক্তিকে। খানিকটা এমন ঘটনাই ঘটেছে ইতালিয়ান ফ্যাশন সংস্থা ভার্সাচের মডেল জেনিফার পামপ্লোনার (Jennifer Pamplona) সঙ্গে। জানা গিয়েছে, প্রায় ৪ কোটি টাকা খরচ করে তিনি প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন শুধুমাত্র কিম কার্দেশিয়ানের (Kim Kardashian) মতো চেহারা লাভের আশায়! তবে পরবর্তীকালে জেনিফার মত বদল করেন ও স্বরূপে ফেরার জন্য খরচ করেন প্রায় ৯৫ লক্ষ টাকা!
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে জেনিফার তাঁর এহেন কার্যকলাপের কারণ ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। জানা গিয়েছে, মার্কিন ব্যক্তিত্ব ও মডেল কিম কার্দেশিয়ানের মতো হওয়ার জন্য জেনিফার গত ১২ বছরে ৪০ বার কসমেটিক অপারেশন করিয়েছিলেন। তবে ক্রমশ তিনি বুঝতে পারেন, বাইরে থেকে কার্দেশিয়ানের মতো দেখতে হলেও অন্দরে তিনি সেই পুরনো জেনিফারই রয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ আমাকে কার্দেশিয়ান বলতে শুরু করেছিল যা আমার পক্ষে ক্রমশ অস্বস্তিকর হয়ে উঠছিল। আমি পড়াশোনা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছি। ব্যক্তিগত জীবনে সব ধরনের সাফল্য দেখেছি। তা সত্ত্বেও মানুষ আমাকে চিনছিল শুধুমাত্র কার্দেশিয়ানের মতো দেখতে বলে।’
মাত্র ১৭ বছর বয়সে প্রথম প্লাস্টিক সার্জারিটি করান জেনিফার। ওই সময়েই আমেরিকার প্রতিটি বাড়িতে কার্দেশিয়ান নাম পরিচিত হয়ে গিয়েছে। খুব দ্রুতই প্লাস্টিক সার্জারির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন জেনিফার। পরবর্তী বছরগুলিতে প্রায় ৪০টি সার্জারি করান তিনি যার মধ্যে তিনটি ছিল রাইনোপ্লাস্টি বা নাকের সার্জারি। ৮টি অপারেশন করান নিতম্বে যার মধ্যে ছিল ‘বাট ইমপ্লান্ট’ এবং ফ্যাট ইঞ্জেকশন। কিমের শরীরের মতোই নিজের শরীরে চড়াই-উৎরাই পাওয়ার পরেই জেনিফার মিডিয়ার নজরে পড়ে যান। ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ারের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। তবে কথায় আছে প্রবঞ্চনা করে পাওয়া সুখের মুহূর্ত বড় ক্ষণস্থায়ী হয়।
‘আবিষ্কার করি সার্জারিতে আমি আসক্ত হয়ে পড়েছি এবং নিজেকে নিয়ে কোনওভাবেই খুশি হতে পারছি না। সুপারমার্কেট থেকে জিনিস কেনার মতো মুখে ফিলার পুরেছিলাম আমি।’— স্বীকার করেন জেনিফার। ২৯ বর্ষীয় মডেল আরও বলেন, ‘একাধিক সার্জারি করে আমি সমমানের অর্থ আর খ্যাতি চেয়েছিলাম। এই চাহিদার বশে জীবনের সব দিক থেকে আমার নিয়ন্ত্রণ সরে যাচ্ছিল। খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে এগচ্ছিল জীবন।’
জেনিফার দাবি করেন, তিনি ‘বডি ডিসমর্ফিয়া’য় আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর তা বোঝার পরেই ফের স্বরূপে ফিরতে উদ্যোগী হন তিনি। ইস্তানবুলের এক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন জেনিফার। ওই চিকিৎসক তাঁকে আপন রূপে ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। নিজের পূর্ব রূপে ফেরার সময় হঠাৎ করেই তিনি এক অসুখে আক্রান্ত হন যার ফলে একটানা তিনদিন তাঁর গাল থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করে। জেনিফার বলেন, ‘ভেবেছিলাম, মারা যাচ্ছি। জীবনের সঙ্গে এ কী করে ফেলেছি আমি?’
সৌভাগ্যবশত, তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। জেনিফারের মতে, ‘নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করা উচিত নয়।’ জীবনের অর্থ বুঝতে পেরে তিনি খুশি। প্লাস্টিক সার্জারির প্রতি আসক্তি এলে কেমন বিপদ হতে পারে সেই বিষয়ে সবাইকে সচেতন করার জন্য তিনি ‘অ্যাডিকশন’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র তৈরি করছেন। এখানেই শেষ নয়, ‘বডি ডিসমর্ফিয়া’র সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য তিনি একজন চিকিৎসকের সঙ্গে যৌথভাবে ব্রাজিলে একটি সংস্থাও গড়ে তুলছেন।