
কাজের মাঝে ঘুম অনেকের পায়। অথচ অফিসে বসে ঘুমনো যায় না। বাধ্য হয়ে জোড় করে চোখে মুখে জল দিয়ে কাজ করতে হয়। তা ছাড়া একটানা এক জায়গায় বসে কাজ করতে করতে ক্লান্তি আসাটাও স্বাভাবিক। আচ্ছা, যদি এমন হত যে অফিসে কাজের ফাঁকে টুক করে একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যেত। তাহলে বেশ হত বলুন? তাছাড়া বিদেশে বহু অফিসে এই ব্যবস্থা আছেও। কিন্তু কাজের মাঝে ন্যাপ নিলে বা ঘুমোলে কাজের বাধা হবে না তো? গবেষণা কিন্তু বলছে একদম অন্য কথা। বরং বিজ্ঞান বলছে কাজের মাঝে টুক করে একটু ন্যাপ নেওয়া যেতেই পারে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে কেন বিরতির সময় হালকা ঘুম বা ন্যাপ জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে কিছু মানুষের কাজে ফেরার পর তাঁদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষকদের মতে, ঘুমের সময় কাজ-সংক্রান্ত স্বল্পমেয়াদি তথ্য দীর্ঘমেয়াদি এবং আরও শক্তিশালী স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়।
গবেষকদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সদস্যরাও। গবেষণাটি জার্নাল অব নিউরোসায়েন্স-এ প্রকাশিত হয়েছে। দলটি ২৫ জন অংশগ্রহণকারীর মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে।
গবেষণায় দেখা যায় ঘুমের সময় কর্টেক্সে—যা মস্তিষ্কের বাইরের স্তর এবং স্মৃতিচারণের মতো কাজ আরও ভাল ভাবে করে আমাদের ব্রেন বা মস্তিষ্ক। ন্যাপ নেওয়ার পরে দেখা যায় মস্তিষ্ক আরও অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এটাই ইঙ্গিত দেয় যে কাজ-সংক্রান্ত তথ্যের প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছিল ঘুমের সময়।
দেখা যায়, কর্টেক্সের এই অংশগুলোতে মস্তিষ্কের তরঙ্গের সংখ্যা বেড়েছে, যা বিরতির পর অংশগ্রহণকারীদের কর্মদক্ষতার উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কিত।
গবেষকরা বলেন, “ঘুমের সময় প্রশিক্ষণকালীন সক্রিয় থাকা কর্টিকাল মস্তিষ্ক অঞ্চলে বেশি ছন্দময় কার্যকলাপ দেখা গেছে। এই অঞ্চলে মস্তিষ্কের ছন্দ বৃদ্ধির সঙ্গে ঘুমের পর কাজের উন্নতির সম্পর্ক রয়েছে।”
ঘুম কীভাবে দক্ষতাকে মজবুত করে?
গবেষকরা দেখেন, বিশেষ করে যখন অফিসে নতুন কিছু শিখছেন তার মাঝে যদি ঘুম পায় তাহলে হালকা একটু ঘুমিয়ে নেওয়া ভাল। এতে কাজের কর্মদক্ষতা বাড়ে না, শেখার ক্ষমতাো উন্নত হয়। ঘুমের মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে এবং ওই বিষয়ে ভাবতে থাকে। যা নতুন জিনিসকে আত্মস্থ করতে সাহায্য করে। গবেষকরা মতে, অফিসে কাজের মাঝে ন্যাপ ভবিষ্যতে কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও মনোরোগ বিভাগের শিক্ষক ডানা মানোআচ বলেন, “ঘুমের সময় মস্তিষ্কের সর্বত্রই একটি বিশেষ ছন্দ তৈরি হয়। কিন্তু নতুন শেখার পর সেই অঞ্চলে ছন্দ বেড়ে যায়, যা সম্ভবত স্মৃতি স্থিতিশীল ও উন্নত করতে সাহায্য করে।”