একটা সময় ছিল যখন ধরে নেওয়াই হত যে ভারতীয় মহিলা মাত্রই সারাদিন গৃহবন্দি থাকবে। বাড়ির কাজ, সংসার, রান্না, সন্তানের দেখভাল- মহিলাদেরকে এই গণ্ডীর মধ্যেই থাকতে হত। বাড়ির মেয়েরা বাইরে বেরিয়ে চাকরি করবে, ব্যবসা করবেন, প্লেন চালাবে, বাইক চালাবে এমনকী প্রয়োজনে বন্দুকও ধরতে পারে এমনটা ভাবতেই পারত না আজ থেকে কয়েকশো বছর আগেও। প্রতিটা বাধা-বিপত্তির বেড়াজাল একে একে পেরিয়ে এসেছেন মেয়েরা। প্রচলিত ধ্যান ধারণার বাইরে গিয়ে মেয়েরা প্রতিক্ষেত্রেই তাঁদের স্বকীয়তার নজির রেখেছেন। ভারতবর্ষের মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গ আর অরুণাচলপ্রদেশের মধ্যিখানে যোগসূত্র রক্ষা করছে পড়শি দেশ ভুটান।
পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট এই দেশের বাসিন্দা ২৩ বছরের তাশি চম্বল দর্জি। ভুটানের প্রথম বিউটি ক্যুইন, সম্প্রতি তাঁর ঝুলিতে এসে মিস ভুটান ২০২২-এর খেতাব। ২৩ বছরের তাশি এবার যোগ দেবে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায়। ভুটানের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে সে।
সুন্দরী তাশি প্রকাশ্যেই নিজেকে লেসবিয়ান হিসেবে পরিচয় দেন। তাঁর মা ভুটানি এবং বাবা তিব্বতি। তাশির মা কিনলে ওয়াংমো ভুটানের ডোমখা গ্রামের শা অঞ্চলের বাসিন্দা। বাজো শহরে তাঁর একটি দোকান ছিল। ব্যবসার জন্য জিনিসপত্র আনতে তিনি থিম্পুতে আসতেন। এভাবেই বাজারে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় তাশির বাবা চোম্বলের সঙ্গে। নাগাল্যান্ডের বাসিন্দা চোম্বলও আসতেন ব্যবসার কাজে থিম্পুতে। বিয়ের পর এই দম্পতি চলে যান নাগাল্যান্ডে। এরপর পারিবারিক কারণেই ভুটানে ফিরে আসেন তোশির বাবা-মা। মডেল হিসেবে তোশির প্রথম কাজ ১৫ বছর বয়সে। এরপর অবশ্য তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ভুটানে মডেল হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তাশির। বেশ কিছু ভুটানি সিনেমাতেও তাঁকে দেখা গিয়েছে। স্থানীয় কিছু বিউটি পেজেন্টের খেতাবও রয়েছে তাশির সাফল্যের ঝুলিতে।
মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পর চর্চায় উঠে এসেছে তোশির sexual orientation। তিনি সমকামী নাকি বিষমকামী তা জানতে উৎসুক , সকলেই। তোশি তাঁর নিজের সম্বন্ধে বলেছেন, ‘প্রথমে আমিও নিজেকে উভলিঙ্গ হিসেবেই চিনেছিলাম। কিন্তু তারপর ফেসবুকে বেশ কিছুদিন বিভিন্ন জনের সঙ্গে চ্যাট করার পর বুঝতে পারি আমার আকর্ষণ আসলে মেয়েদের প্রতি’।
আপাতত মিস ইউনিভার্সের মঞ্চের দিকে তাকিয়ে তোশি। এর আগেও একবার সুযোগ এসেছিল তাশির কাছে। কিন্তু অন্য একটি প্রতিযোগিতার সঙ্গে যুক্ত থাকায় তখন তিনি এখানে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তোশি জানান, ‘অনেকেই ভাবছেন আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমি সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু তা একেবারেই নয়। এখানে সকলেই খুব যোগ্য ছিলেন। তবে আমি এই মঞ্চ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাই’।