
বাংলাদেশের একটি ছোট বিস্কুট সংস্থা। প্রথমে দেশ, তারপর দেশ ছাড়িয়ে ভারত ও পরবর্তীকালে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে এই বাংলাদেশি বিস্কুট ব্র্যান্ড। ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, লকডাউনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালের পাশাপাশি এই বিস্কুট এখন সকলের ঘরে ঘরে প্রবেশ করে গিয়েছে। মাঝে এমন হয়েছিল যে, মুদির দোকান, স্থানীয়ের দোকানে স্টক ফুরিয়ে যেতে বসেছিল, এতটাই এর জনপ্রিয়তা লাভ করে।
লালা রঙের একটি প্যাকেটের মধ্যে থরে থরে সাজানো থাকে পোটাটা বিস্কুট। সবকটি একই আকৃতি, একরকম মুচমুচে, মুখরোচক ও দুরন্ত স্বাদের। একটি মুখে দিলে প্যাকেট শেষ না করা পর্যন্ত থামবে না, এ গ্যারান্টি আমরা নয়, যাঁরা খেয়েছেন তাঁরাই দিচ্ছেন। প্য়াকেটজাত খাবারগুলির মধ্যে সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ম্যাগি নামে একটি নুডলস ব্র্যান্ড। এই সংস্থা এমনভাবেই গোটা বিশ্বের বাজারের শীর্ষে স্থান দখল করেছে যে তাঁকে টপকানো বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন নামী সংস্থাগুলিরও। তবে মাঝে আরও একটি জিনিস উঠেও ফের মাটিতে নেমে গিয়েছে। তা হল পালস লজেন্স। আমের খাট্টামিট্টা টক-জাল-মিষ্টির অসাধারণ স্বাদের ওই ক্যান্ডি একসময় সকলের পকেটে থাকত। তেমনিইভাবে কোকাকোলা, আমুল, হলদিরামেরও নাম চলে আসে। এটিও ঠিক সেই ভাবে ভারতীয় বাজারে একরকম স্থায়ী বাজার তৈরি করে ফেলেছে। উত্তর-পূর্ব ভারত ও পশ্চিমবঙ্গে প্রাণের (PRAN Food) এই পণ্যগুলি তো পাওয়া যায়ই, রাজ্য ছাড়িয়ে এবার ভারতের অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে এই বিস্কুটের নাম। প্রাণের এই বিস্কুট ছাড়া রয়েছে রাস্ক বিস্কুট, প্যাকেটজাত ঝালমুড়ি, নুডলস, প্যাকেটজাত জুস।
বাংলাদেশের বাজার ছাড়িয়ে ভারতের বাজার ধরতে এবার বদ্ধপরিকর প্রাণ সংস্থার চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী। কে বলে বাঙালি ব্যবসা করতে পারে না। ২০১৯-২০২০ সালে ১৪৫ দেশে বিক্রি করে বার্ষিক আয় প্রায় ৯৩ কোটি টাকা। সংস্থার সঙ্গে জডিয়ে রয়েছে প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি কর্মচারী। তাঁর কথায়, ‘ভারত আমাদের কাছে একটি সুবিশাল মার্কেট। ভারতের প্রায় ৭০০ তালুকে প্রাণের সব পণ্যে বিক্রি করি ও অনুপ্রেরণার জন্য ভারতের কর্পোরেট লুক আমাদের সত্যিই সাহায্য করেছে। প্রফেশনালি এই সংস্থা কীভাবে আরও বড় করা যায়, তা পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ঝাড়খণ্ড, আফ্রিকার কিছু অংশে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হব বিশ্ববাজারে সংস্থার পণ্যে বিক্রি করা। ২০১৫ সালে ভারতের আগরতলায় প্রথম প্রাণের কারখানা তৈরি হয়। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’
আরও পড়ুন: এই ৫ জনপ্রিয় ও সুস্বাদু খাবারের নামকরণ হয়েছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে! জানতেন আগে?
প্রসঙ্গত, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে চৌধুরী পিতা আমজাদ খান চৌধুরী প্রথম প্রাণ ফুড সংস্থা শুরু করেন। তিনি একজন বাংলাদেশ আর্মির প্রাক্তন জেনারেল মেজর ছিলেন । তাঁর স্বপ্ন ছিল, নতুন প্রজন্ম যেন শক্ত হাতে অর্থনৈতিক হাল ধরতে পারে, দারিদ্রতা কাটিয়ে, কৃষিক্ষেত্রকে আধুনিকস্তরে উর্ত্তীণ করে তোলা। আমেরিকা থেকে গ্র্যাজুয়েট পাশ করে পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর পুত্র আহসান। মাত্র ২১ বছর বয়সে কোম্পানিতে যোগ দেন তিনি, তারপর থেকেই শুরু হয় প্রাণের পথ চলার উড়ান।
কীভাবে শুরু হল এই জার্নি? ‘চিনে যাত্রা করার সময় একটি স্ন্যাক্স খেয়ে দারুণ স্বাদ পেয়েছিলাম। পটেটো ওয়েফারের মতো একধরনের মুখরোচক বিস্কুট। বাংলাদেশে ফিরে এসে ওই স্ন্যাক্সের মতো বানানোর জন্য ইঞ্জিনিয়ার ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, পটেটো ওয়েফারের সঙ্গে পটেটো ফ্লেক্স, পেস্ট ও ট্যাপিওকা স্টার্চ যোগ করে অনন্য স্বাদের রূপ দেওয়া হবে। তাতে মুচমুচে ভাবও থাকে, আবার বিস্কুটের মতো নরমও হবে। দেখতে হবে পটেটো চিপসের মতোন।’ সেই থেকেই শুরু। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
তথ্য সৌজন্যে livemint