ম্যাজিক (Magic) ভালোবাসেন অথচ হ্যারি পটারকে চেনেন না এমন হতেই পারে না! জাদুকর, ডাইনি আর মাগলদের সোজাসাপটা গল্পে অনেকেরই শৈশব আলোকিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ওই বছরই প্রকাশ পায় লেখিকা জে কে রাউলিং-এর ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোজফার’স স্টোন’ বইটি। ওই গল্প অনুসরণ করেই একই নামে ২০০১ সালে হলিউডে (Hollywood) মুক্তি পায় প্রথম ছবিটি! চোখ বন্ধ করলে এখনও যেন ছুঁয়ে ফেলা যায় সেইসব জাদু রাজ্যের অদ্ভুত রহস্যময় দিন! ২০ বছর পরেও ছবির ব্যাখ্যাতীত ইন্দ্রজালের কথা মনে পড়লে কাঁটা দিয়ে ওঠে গায়ে! হ্যারি পটারসম্পৃক্ত সেই অবিস্মরণীয় জাদুজগতের কথা মাথায় রেখে পৃথিবীর বহু জায়গাতেই খোলা হয়েছে নানা রেস্তোরাঁ। ভারতেও পটারভক্ত কম নেই! তাই হ্যারি পটারনির্ভর ছবিগুলির কথা ও তার ভক্তের কথা ভেবে ভারতের নানা রাজ্যেও খোলা হয়েছে কেফ, রেস্তোরাঁ!
১. হগওয়ার্টস কেফ, দিল্লি
এই ক্যাফেটেরিয়ার প্রবেশপথ, দেওয়াল, কাপ, ডিশ, চামচে রয়েছে পটার আর তাঁর সঙ্গীসাথীদের দুর্দান্ত সব কাণ্ডকারখানার ছবি! দিল্লির রোহিণী এলাকায় এই কেফ-এর নানা প্রিপারেশনের নামও হ্যারিপটার থেকেই অনুপ্রাণিত! চাইলেই একবার ঢুঁ মেরে আসতে পারেন হগওয়ার্টস কেফ থেকে। নিশ্চিতভাবে ফিরে পাবেন শৈশবের কল্পনার আশ্চর্য দিনগুলি।
২. হগওয়ার্টস কেফ অ্যান্ড কটেজ, মানালি
হগওয়ার্টস মানেই শুভ্র তুষার! শীতল এবং মায়াবী রহস্যে ঘেরা জগতে গগনচুম্বী ধূসর দুর্গ। সেকথা মাথায় রেখেই মানালির পাথুরে পাহাড়ি প্রান্তরে খুলে ফেলা হয়েছে দুর্দান্ত একটি ক্যাফেটেরিয়া। শীত পড়লেই মানালিতে শুরু হয় তুষারপাত। বাস্তব দুনিয়ার সমান্তারালে যেন হঠাৎ করে আত্মপ্রকাশ করে লুকিয়ে থাকা জাদু বিশ্ব! হগওয়ার্টস স্কুল অব উইচক্র্যাফ্ট অ্যান্ড উইজার্ডরিকে মাথায় রেখে তৈরি পোস্টারে ভর্তি এই কেফ-এ উষ্ণ কফিপানের রোমাঞ্চই আলাদা। স্মৃতিকে আরও একটু উসকে দিকে চাইলে রাত্রিবাসও করা যায় সেখানে।
৩. কেফ অ্যালোহোমরা, চেন্নাই
সমস্ত বন্ধ দরজা খুলে যায় যে জাদুমন্ত্রে তার নাম অ্যালোহোমরা! চেন্নাই শহরেও ওই একই নামে রয়েছে একটি কেফ যার দরজা পটার ভক্তদের জন্য সবসময় খোলা থাকে! সরু করিডর ও অর্ধাগোলাকৃতি দরজা ঠেলে প্রবেশ করতে হয় মূল রেস্তোরাঁয়। মেনুকার্ড থেকে অন্দরসজ্জা— সকল ক্ষেত্রেই প্রভাব রয়েছে হ্যারি পটারনির্ভর ছবিগুলির। ভক্তরা বলছেন খাবারের মানও নাকি দুর্দান্ত! রেস্তোরাঁর অন্দরে আলোআঁধারির খেলা ও সজ্জা নিশ্চিতভাবে আপনাকে মনে করাবে হগওয়ার্টস-এর বিখ্যাত হলঘরের কথা। এছাড়া রেস্তোরাঁয় রয়েছে জাদুছড়ি, ক্লোকরুম, গোপন রাস্তা। এছাড়া সবসময় বেজে চলেছে হ্যারি পটারনির্ভর ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যা আপনাকে শৈশবে ছেড়ে আসা জাদুবিশ্বের কথা স্মরণ করাবেই।
৪. হগওয়ার্টস কেফ, ঝাঁসি
এই রেস্তোরাঁর গঠনটাই ভারী আজব! ঘোলাটে আলো আর দেওয়ালে প্রিয় হ্যারি পটার ছবির নানা ধরনের পোস্টার নিশ্চিতভাবে আপনাকে নস্টালজিক করে তুলবে। নস্টালজিয়ায় ধুনো দিতে সেই সময় ‘হগওয়ার্টস কেফ’ আপনাকে জোগাবে মজাদার ফাস্ট ফুড! মগজে পটার সেঁধিয়ে থাকলে, অবশ্যই একবার ঘুরে যান ঝাঁসির হগওয়ার্টস কেফ। হ্যালোউইন এবং নতুন বছরে ক্যাফেটেরিয়াটিকে অন্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। চাইলে সেইসময়েও একবার টুক করে ঢুকে পড়তে পারেন এই কেফ-এ।
৫. হগওয়ার্টস ডেন, কলকাতা
ইন্দ্রজালের বিশ্বে যেতে হলে চাপতে হয় এক বিশেষ ট্রেনে। নদী, সবুজ পাহাড়, ঝরনা, দীর্ঘ অন্ধকার টানেল পেরিয়ে সেই ট্রেন ভাবী জাদুকরদের নিয়ে যায় জাদুশিক্ষার স্কুলে! হ্যারি পটার সিরিজের সেই ট্রেন যাত্রা ভোলার নয়। ভোলার নয় হগওয়ার্টস ক্যাসল। সেকথা মাথায় রেখেই কলকাতায় তৈরি হয়েছে, ‘হগওয়ার্টস ডেন’ রেস্তোরাঁ। রেস্তোরাঁর বাইরে লাল দেওয়াল সেই স্টেশনের স্মৃতি বয়ে আনবে অবশ্যই। এছাড়া রেস্তোরাঁর অন্দরে নানা ধরনের ছবি, মেনুকার্ডের গঠন পটার ভক্তদের মন ভরাবে অবশ্যই। আর পেট ভরানোর জন্য রয়েছে ইন্ডিয়ান এবং চাইনজি নানা স্ন্যাকস। কেফ-এর দেওয়ালে রয়েছ হ্যারি পটারের নানা চরিত্রের ছবি!
৬. ৯ ৩/৪ সেন্ট্রাল পার্ক, নাগপুর
নাইন অ্যান্ড থ্রি কোয়ার্টারস! প্ল্যাটফর্মের নম্বর দেখে হ্যারি পটারের সঙ্গে সমগ্র বিশ্ব চমকে গিয়েছিল! তবে কথায় আছে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু! বিশ্বাসে ভর করেই তাই ৯ আর ১০ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মধ্যের দেওয়াল দিয়ে অনায়াসে গলে যেত জাদুশিক্ষার্থীরা! ওই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে মিলিয়ে নাগপুরে খুলে ফেলা হয়েছে অভূতপূর্ব একটি ক্যাফেটেরিয়া। ওই প্ল্যাটফর্মেই হ্যারি পটার, হারমাওনি, রন উইজলির সঙ্গে দেখা হয় মোনিকা, রেচেল, ফিবি, রস, চ্যান্ডেলর, জোয়ির। ম্যাজিকের দুনিয়ার সঙ্গে সেই প্রথম বাস্তবের মোলাকাত!
৯ ৩/৪ সেন্ট্রাল পার্কের রেস্তোরাঁতেও তাই বন্ধুত্বেরই জয়গান গাওয়া হয়েছে। হ্যারি পটার সিরিজের আদলে নানা পতাকা, দেওয়ালচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পটার ও তার বন্ধুদের ছবি, তাদের থাকার জায়গা ও পছন্দের বেড়ানোর জায়গার ছবি। সব মিলিয়ে রেস্তোরাঁটি হ্যারি পটারের কথা যেমন মনে করাবে তেমনই আপনার স্কুলছুট বন্ধুদের স্মৃতিও বয়ে নিয়ে আসবে হৃদয়ে।
মোট কথা একটা দিন, কিছুক্ষণের জন্য সব কষ্ট আর যন্ত্রণা ফেলে শৈশবে ফিরে যেতে চাইলে অবশ্যই ঘুরে আসুন হ্যারি পটারের ম্যাজিকের দুনিয়ায়। অন্যরকম দিন কাটবে। ভালো লাগবে।