বহুকাল থেকেই কালীপুজোয় পশুবলি দেওয়ার চল রয়েছে। ডাকাতরা ডাকাতি করার আগে মাতৃপুজো করে তবেই বের হতেন। তবে প্রতি বছর কালীপুজোকে কেন্দ্র করে কলকাতা-সহ সারা বাংলায় যে উত্সবের আমেজ তৈরি হয়, তা কখনই নিছক পুজো বলে মেনে চলা যায় না। শাক্তমতে বাঙালিরা এদিন নিরামিষের ধার ধারেন না। জমিয়ে পাঁঠার মাংস ভোজন করেন। কালী প্রতিমায় ভোগ নিবেদনের ধারাও আলাদা।শহরের বেশ কয়েকটি বিখ্যাত কালী মন্দির রয়েছে। সেই মন্দিরে কালীপুজোর দিন কী কী ভোগ নিবেদন করা হয়, তা দেখে নিন…
দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী কালী মন্দির
দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণী ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের দেখানো পথেই পুজো পান। মায়ের ভোগও অতি সাধারণ। রানি রাসমণি ১৮৫৫-র ৩১ মে স্নানযাত্রার দিন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম পুজো ও অন্নভোগ দেন শ্রীরামকৃষ্ণের অগ্রজ রামকুমার চট্টোপাধ্যায়। ভোগে নিবেদন করা হয় খিচুড়ি, পাঁচ রকম ভাজা (আলু, বেগুন, কাঁচকলা, উচ্ছে, পটল বা ফুলকপি), পোলাও, দু’ রকমের তরকারি (আলু-পটল, ফুলকপি বা এঁচোড়ের ডালনা), পাঁচ রকম মাছের পদ (কই, রুই, পার্শে, ভেটকি ও গলদা), আমসত্ত্ব, খেজুর ও টম্যাটোর চাটনি, পায়েস, দই, নানা ধরনের মিষ্টি, পান-সুপারি দিয়েই মায়ের পুজো হয়।
টালিগঞ্জের করুণাময়ী মন্দির
১৭৬০-এ টালিগঞ্জ পশ্চিম পুঁটিয়ারি অঞ্চলে দ্বাদশ শিবমন্দির সহ নবরত্ন কালীমন্দির স্থাপন করেনব ড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের নন্দদুলাল রায়চৌধুরী। তাঁর অকালপ্রয়াত কন্যার স্মৃতিতে এই মন্দির স্থাপন করেন বলে জানা যায়। কালীপুজোর দিন করুণাময়ী কালীকে কুমারী হিসেবে পুজো করা হয়। রাতে ভোগ দেওয়া হয় লুচি, ছোলার ডাল, ফুলকপির তরকারি, লাল নটেশাক সহ সাত রকম ভাজা, সঙ্গে খিচুড়ি, পাঁচ সবজির তরকারি, সাদা ভাত, মোচার ঘণ্ট, এঁচোড়ের ডালনা, পোলাও, সাত রকম মাছের পদ, আলুবোখরার চাটনি, পায়েস ও পান। যদুবাবুর বাজার থেকে আসে গলদা, ইলিশ, ভেটকি, ট্যাংরা, কাতলা, পাবদা ও পার্শে।
কালীকৃষ্ণ টেগোর স্ট্রিটের পুঁটে কালী
কথিত, কোনও একবার হোমের সময় একটি পুঁটিমাছ হোমকুণ্ডে লাফিয়ে পড়লে সেই থেকে নামকরণ হয় পুঁটে কালী। কালীপুজোর দিন মাতৃআরাধনার জন্য দু’রকমের ভোগ দেওয়া হয়। নিরামিষ ভোগে থাকে খাস্তা কচুরি, চানাচুর, খিচুড়ি, পোলাও, লুচি, দু’ ধরনের তরকারি, চাটনি ও পায়েস। আমিষ ভোগে থাকে পাঁচ রকমের মাছ (পুঁটি, রুই, ইলিশ, বোয়াল ও ভেটকি)। কালীপুজোর পরের দিন সন্ধেবেলায় অন্নকূট ও কুমারীপুজো হয়।
ঠনঠনিয়ার সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
আনুমানিক ১৭০৩ সালে উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারী নামে এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসী সেই সময় জঙ্গলের মধ্যে পঞ্চমুণ্ডির আসনে ও ঘটে পুজো শুরু করেন। কালীপুজোর রাতে ভোগ দেওয়া হয়, লুচি, পটলভাজা, ধোঁকা বা আলুভাজা, আলুর দম ও মিষ্টি।
বাগবাজারের সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
কালীবর তপস্বী নামে এক সন্ন্যাসী কুমোরটুলি অঞ্চলে হোগলাপাতার ছাউনিতে সিদ্ধেশ্বরী কালীমূর্তি করে পুজো শুরু করেন। শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণ দেবের আদেশ অনুযায়ী আজও শোভাবাজার থেকে অন্নভোগের জন্য সবজি আসে। খিচুড়ি, সাদাভাত ভোগে থাকে। ডাল, পাঁচ রকম ভাজা, ডালনা, ছ্যাঁচড়া, মাছের ঝোল, চাটনি, পায়েস ও নানা ধরনের মিষ্টি। সিদ্ধেশ্বরী তন্ত্রমতে পুজো হয়।
বৌবাজারের ফিরিঙ্গি কালী মন্দির
ঊনবিংশ শতাব্দীর কবিয়াল অ্যান্টনি এই মন্দিরে আসতেন বলে লোকমুখে তা ফিরিঙ্গি কালিবাড়ি বলে পরিচিত হয়েছে। ভোগে থাকে খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচ রকমের তরকারি, আমসত্ত্ব, খেজুর বা আলুবোখরার সঙ্গে আমসত্ত্ব কিসমিসের চাটনি। চালকুমড়ো, শশা ও আখ বলি হয়।
আরও পড়ুন: Kali Pujo 2021: কালীপুজোর ভোগে থাকে চুনো মাছের টক! তিন কালীতীর্থে ভোগে কী কী নিবেদন করা হয়, জানেন?